গল্প রাইটিং:- “চিরকালীন যাত্রা” II written by @maksudakawsarII
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন সৃষ্টিকর্তার রহমতে । আমিও আছি আপনাদের দোয়ার বরকতে জীবন নিয়ে ভালোই। তবে কেন জানি আজকাল ব্যস্ততাগুলো আমায় দারুন প্যারা দিচেছ। প্যারা দিচ্ছে জীবন আর সময় দুটোই। কিন্তু আমি তো ব্যস্ততা চাই না। চাই একটু শান্তি আর প্রশান্তি। চাই একটু স্বাধীনতা। যাই হোক এসব কথা বলে শুধু শুধু সময় নষ্ট করে লাভ নেই। তাই চলে যাই আজ আপনাদের জন্য আমার লেখা সুন্দর গল্পে। যা কিনা বাস্তব জীবেন থেকে সংগ্রহ করা।
প্রতিদিনই চেষ্টা করি আমি আপনাদের মাঝে সুন্দর করে কিছু লিখে উপহার দেওয়ার জন্য। চাই চারদিকের বাস্তব কিছু ঘটনাকে গল্পে রূপ দিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে। যাতে করে আমার লেখার যাদুতে আপনারা মুগ্ধ হতে পারেন। যদিও সময় করে উঠতে পারি না। যদিও নিজের ক্রেয়েটিভিটি আপনাদের মাঝে তুলে ধরার সময় হয় না। তবুও চেষ্টা করলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য। আশা করি প্রতিদিনের মত করে আমার আজকের জেনারেল গল্পটিও আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে।

Image created- maksuda kawsar, with AI Tools)
রিয়া এবং অর্কের প্রথম পরিচয় ছিল এক বিখ্যাত শহরের রেলওয়ে স্টেশনে। রিয়া ছিল একটু ভিন্ন ধরনের—একজন সৃজনশীল, স্বপ্নপ্রবণ মেয়ে, যাকে পৃথিবীকে তার নিজের চোখে দেখতে ভালো লাগতো। আর অর্ক ছিল বাস্তববাদী, যার জীবনে প্রতিটি সিদ্ধান্ত চিন্তা করে নেওয়া প্রয়োজন। তাদের মধ্যে তখন ছিল এক বিশাল পার্থক্য, কিন্তু সেই দিনটি ছিল তাদের জীবনে এক নতুন যাত্রার শুরু।
রিয়া একদিন দুপুরের দিকে স্টেশনে হেঁটে যাচ্ছিল, যখন অর্ক তার পাশে এসে দাঁড়ালো। অর্ক ছিল কিছুটা ব্যস্ত, ফোনে কারো সাথে কথা বলছিল, আর হঠাৎ তার চোখ পড়ে রিয়ার দিকে। সে দেখে রিয়া একটা বড় লাল সুটকেস নিয়ে একা দাঁড়িয়ে আছে, তার চোখে কিছুটা শূন্যতা। তাতে অর্কের মনে হয়, "এই মেয়ে কি হারিয়ে গেছে?" অর্ক পেছন থেকে এসে মৃদু ভাবে বললো, “আপনি কি ঠিক আছেন? কিছু মনে করবেন না, কিন্তু আপনি একটু অদ্ভুতভাবে দাঁড়িয়ে আছেন, মনে হয় কিছু খুঁজছেন।”
রিয়া অর্কের দিকে তাকিয়ে, চমকে উঠে বললো, “হ্যাঁ, আসলে আমি একটু দিশেহারা। আমি এই শহরে নতুন, এবং স্টেশনের পরবর্তী ট্রেন কখন আসবে সেটা জানি না।” অর্ক কিছুটা হাসলো, তারপর তার ফোনটা রেখে বললো, “আপনার কোথাও যাওয়ার প্ল্যান আছে?” রিয়া কিছুটা সংশয়ে বললো, “হ্যাঁ, আমার শপিং মলের দিকে যেতে হবে, কিন্তু ট্রেনের টিকিট কাটার ব্যাপারে কিছুটা সমস্যায় পড়েছি।”
অর্ক তখন খুবই সহজভাবে বললো, “ভাল, আপনি যদি চান, আমি আপনাকে টিকিট কেটে দিতে সাহায্য করতে পারি। অথবা, আপনি কি কিছু সময় আমার সাথে কাটাতে চান?” রিয়া কিছুটা অবাক হয়ে তাকালো, “তুমি কি নিশ্চিত, তুমি আমাকে সাহায্য করবে?” অর্ক তখন সোজা দাঁড়িয়ে বললো, “হ্যাঁ, তুমি যদি চাও, তাহলে আমার জন্য এটা কোনো ব্যাপার না। আর আমি জানি, তুমি কিছু সময় চাইলেই একটি ভালো মানুষ পাবে।”
এই প্রথম, রিয়া অনুভব করলো যে কিছু মানুষের মধ্যে সত্যিকার সহানুভূতি থাকে। সে তখন অর্কের পাশে দাঁড়িয়ে, তার কাছ থেকে প্রথমবারের মতো ভালোলাগার অনুভূতি পেয়েছিল। তাদের মাঝে কোনো চুক্তি ছিল না, কিন্তু তারা জানতো, এই প্রথম দেখা, তাদের জীবন পরিবর্তন করে ফেলবে। অর্ক আর রিয়া একে অপরকে খুব কম সময়ে ভালোভাবে জানলো। প্রথমে তারা শুধুমাত্র বন্ধু ছিল, কিন্তু কিছুটা সময় পর, তারা একে অপরকে আরও বেশি অনুভব করতে শুরু করলো। রিয়া জানতো, অর্ক তার জীবনের সঙ্গী হবে না, কিন্তু সে বুঝেছিল, এই সম্পর্কটি তাকে জীবনের এক নতুন দিগন্তে নিয়ে যাবে। আর অর্কও জানতো, রিয়া তার মতো নয়, কিন্তু তাকে যে ভালোবাসতে শুরু করেছে, তা ছিল অর্কের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা।
তাদের সম্পর্কটি ছিল এমন, যেখানে একে অপরের প্রতি কোনো অবহেলা ছিল না। তারা একে অপরকে পুরোপুরি বুঝত, আর সবকিছু শেয়ার করতে পারতো। রিয়া অর্ককে শিখিয়েছিল যে, জীবনে কখনো কখনো পরিকল্পনার বাইরে কিছুটা পথ পাড়ি দেওয়াও জরুরি। আর অর্ক রিয়াকে শিখিয়েছিল, জীবনে কিছু কিছু মুহূর্তে বাস্তবতা মানতে হয়, তবে কখনো কখনো ভালোবাসার জায়গাটি সবকিছুকে ছড়িয়ে দেয়।
একদিন, তারা শহরের একটি ছোট ক্যাফেতে বসে গল্প করছিল। রিয়া তার চোখে চোখ রেখে বললো, “অর্ক, আমি জানি, আমাদের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে, কিন্তু তবুও, আমি বুঝতে পারছি যে, তুমি আমাকে জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তগুলো উপহার দিচ্ছো। তুমি যখন আমার পাশে থাকে, আমি মনে করি, সময় থেমে যায়। তোমার মতো একজন মানুষের সঙ্গে থাকতে পারা, এই পৃথিবীতে কিছুই বেশি মূল্যবান নয়।” অর্ক হালকা হাসলো এবং বললো, “রিয়া, তুমি জানো, আমরা দুইজনই হয়তো একে অপরের জন্য প্রস্তুত নই, কিন্তু আমরা একে অপরকে সেই জায়গাটায় দাঁড়াতে শেখাচ্ছি, যেখানে প্রেম, বন্ধুত্ব এবং বিশ্বাস সব কিছু একে অপরের সাথে জড়িত থাকে। আমাদের সম্পর্কটা শুধু ভ্রমণ নয়, এটা একটা চিরকালীন যাত্রা।”
তাদের সম্পর্ক সময়ের সাথে আরও গভীর হতে শুরু করলো। একদিন, অর্ক তার কাজে ব্যস্ত ছিল, এবং রিয়া তার জন্য অপেক্ষা করছিল। তারা একে অপরকে মাঝে মাঝে চিঠি লিখতো, তাদের অনুভূতিগুলো শেয়ার করতো। তবে, একদিন হঠাৎ করে রিয়া জানতে পারলো যে, অর্ক একটি বড় বদলির জন্য বিদেশে যাচ্ছে। এই খবরটা শোনার পর, তার মনে অনেক কষ্ট সৃষ্টি হয়েছিল, কারণ সে জানতো, অর্কের সাথে তার সম্পর্ক যে এক নতুন পরিণতি নেবে, সেটা এখন অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।
রিয়া তখন অর্কের কাছে গিয়ে বললো, “অর্ক, তুমি জানো, আমি কখনো চাইনি যে আমাদের সম্পর্ক এমন জায়গায় পৌঁছাবে, কিন্তু তোমার চলে যাওয়া আমাকে একটু ভীত করে দিচ্ছে। আমি জানি, তুমি জীবনে বড় কিছু করতে চাও, কিন্তু আমি কি তোমাকে হারিয়ে ফেলব?”
অর্ক একটু চুপ করে রিয়ার দিকে তাকালো, তারপর বললো, “রিয়া, তোমাকে হারানো আমার জন্য কঠিন হবে, কিন্তু কখনো কখনো মানুষকে তাদের স্বপ্ন অনুসরণ করতে দেয়। আমাদের মধ্যে যা কিছু ছিল, তা ছিল বাস্তব, কিন্তু আমি জানি, আমাদের মাঝে যে সম্পর্ক ছিল, তা চিরকালীন। তোমার কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি, তা আমি কোনোদিন ভুলব না।”
এই কথাগুলোর পর, রিয়া অর্ককে কষ্ট নিয়ে বিদায় জানালো। কিন্তু সে জানতো, তাদের সম্পর্ক এমন কিছু, যা কখনো শেষ হবে না। তারা দুইজনেই একে অপরকে ভালোবাসতো, কিন্তু সময় কখনোই দাঁড়িয়ে থাকে না। জীবন কখনো এক রকম থাকে না, কিন্তু ভালোবাসা এবং সম্পর্কগুলো আমাদের জীবনের যাত্রার সঙ্গী হয়ে যায়। একে অপরকে ভালোবেসে, যাত্রা চলতে থাকে, এবং সেই যাত্রা কখনোই শেষ হয় না, যতদিন না আমরা একে অপরকে হৃদয়ে ধারণ করি।
কেমন লাগলো আমার আজকের গল্পটি আপনাদের কাছে? জানার অপেক্ষায় রইলাম।
আমার পরিচিতি
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy
