ট্রাভেল পোস্ট- "মাওয়াঘাট ও পদ্মার পাড় ভ্রমনের ৬ষ্ঠ পর্ব " II written by @maksudakawsarII

in আমার বাংলা ব্লগ20 days ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন সবাই ? আশা করি আপনারা সবাই বেশ ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ আমি নতুন এটি ব্লগ নিয়ে হাজির হলাম। আজকে আমার ব্লগের বিষয় হলো ভ্রমণ। আসলে ভ্রমণ গুলোকে আমি ব্লগের মাধ্যমে শেয়ার করতে পারলে ভীষণ ভালো লাগে। তাই আমি চেষ্টা করি সপ্তাহে কমপক্ষে ভ্রমণের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। ভ্রমণের পোস্টগুলো শেয়ার করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। আমি আশা করি আপনাদের সবার আজকের পোস্টে অনেক বেশি ভালো লাগবে। নিচে আমার ভ্রমণের পোস্টটি আপনাদের মাঝে শেয়ার করা হলো। কেমন হয়েছে তা অবশ্যই জানাবেন।‍

Add a heading (10).png

জোহরের নামাজ ও দুপুরের খাবারের কথা মাথায় রেখেই আমরা পদ্মার পাড় থেকে ফিরে এলাম। শরীরটা কিছুটা ক্লান্ত, কিন্তু মনের ভেতরে তখনো গেঁথে আছে নদীর পাড়ের সেই উচ্ছ্বাস, ধান খেতের সরু পথে হাঁটার রোমাঞ্চ আর ভ্যানে করে আসা বন্ধুদের নির্ভেজাল আনন্দ। নামাজ শেষে আমরা খোঁজ নিতে লাগলাম কাছাকাছি কোথায় খাওয়া-দাওয়া করা যায় এবং একটু প্রশান্তির মতো বসা যায় এমন কোনো জায়গা আছে কিনা। তখনই একজন স্থানীয় ব্যক্তি আমাদের জানালেন, কাছেই পদ্মার একদম পাড় ঘেঁষে একটি রেস্টুরেন্ট আছে—যেখানে শুধু খাবারই নয়, প্রকৃতির সৌন্দর্যও উপভোগ করা যায় মন ভরে। শুনে আমাদের আগ্রহ আরও বেড়ে গেল। আমরা সেই রেস্টুরেন্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।

WhatsApp Image 2025-07-20 at 22.53.05_ad4b92fa.jpg

পায়ে হেঁটে অল্প কিছু পথ পাড়ি দিয়ে আমরা পৌঁছালাম সেই কাঙ্ক্ষিত জায়গায়। দূর থেকেই চোখে পড়ল—একটি কুড়ে ঘরের মতো নির্মিত দোতলা রেস্টুরেন্ট। ছাদে খড়ের ছাউনি, কাঠের সিঁড়ি, বেলকুনি থেকে ঝুলছে ঝোলানো বাতি—সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল, যেন কোনো গ্রামের মাটির ঘরে চলে এসেছি। অথচ পাশে বয়ে যাচ্ছে বিশাল পদ্মা নদী, আর দূরে দিগন্ত ছোঁয়া আকাশ। রেস্টুরেন্টটির নাম মনে নেই এখন, তবে তাদের পরিবেশ আমাদের মনে এমন জায়গা করে নিয়েছিল, যা সহজে ভুলে যাওয়ার নয়। রেস্টুরেন্টে ঢুকেই চোখে পড়ল—এক কোণায় দোলনা। কাঠ দিয়ে তৈরি বড় দোলনা, যেন অতিথিরা বসে দুলতে দুলতে চা খেতে পারে কিংবা ছবি তুলতে পারে। পাশে মোটা বাঁশ দিয়ে তৈরি কিছু সিটিং স্পেস, আবার কিছু জায়গায় মাটির ঘরের মতো খোলা জায়গা যেখানে কেউ চাইলে বসে বা হেলান দিয়ে পুরো পদ্মা নদীর দৃশ্য উপভোগ করতে পারে।

WhatsApp Image 2025-07-20 at 22.53.04_3ebd1687.jpg

WhatsApp Image 2025-07-20 at 22.53.04_30f5e3b2.jpg

সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় ছিল রেস্টুরেন্টটির সামনে বিছানো কিছু চাদর আর ঝুঁকে বসার মতো কাঠের ফ্রেম, যেখানে চাইলেই কেউ আধশোয়া হয়ে নদী দেখতে পারে। যেন এক দারুণ পরিকল্পনা করে বানানো হয়েছে এই আয়োজন—যেন প্রকৃতিকে একদম আপন করে নেওয়া যায়। আমরা সবাই একসাথে মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম। কারো চোখে বিস্ময়, কারো মুখে প্রশান্তির হাসি। তাড়াহুড়ো না করে আমরা আগে জায়গাগুলো ঘুরে ঘুরে দেখে নিলাম। তারপর একেকজন দোলনায় চড়ে, কেউ নিচের বিছানো জায়গায় বসে, কেউ আবার কাঠের বেঞ্চে বসে মোবাইল ক্যামেরা অন করল। আমরা শুরু করলাম ফটোগ্রাফি! সেই দোলনায় দোল খেতে খেতে ছবি তোলা, বেলকনির কোণে দাঁড়িয়ে পদ্মার ভিউয়ের সঙ্গে সেলফি, বিছানার পাশে বসে চা হাতে মুহূর্ত বন্দি করা—এসব ছিল একেবারে হৃদয়ের কাছাকাছি। মনে হচ্ছিল, এই জায়গাটা যেন শুধু খাওয়ার জন্য না, বরং মনকে শান্ত করার জন্য বানানো হয়েছে। আমরা শুধু ছবি তোলাতেই থেমে থাকিনি। চারপাশের প্রকৃতির দৃশ্যগুলোও গভীরভাবে অনুভব করছিলাম। অনেকেই ঠিক আমাদের মতোই বসে আছেন—কেউ একা, কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ জোড়ায় জোড়ায়। কেউ কথা বলছে না, শুধু বসে আছে আকাশ আর নদীর দিকে তাকিয়ে। এমনকি ছোট ছোট শিশুরাও দোলনায় বসে চুপচাপ। এই চুপচাপ কিন্তু ক্লান্তির নয়, বরং প্রশান্তির।

WhatsApp Image 2025-07-20 at 22.53.04_a5cb6141.jpg

WhatsApp Image 2025-07-20 at 22.53.06_9142c98f.jpg

পদ্মার দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল—এ নদী কথা বলে। তার ঢেউয়ে যেন গোপন কিছু বার্তা লুকিয়ে আছে। নদীর ওপারে কিছু ছোট্ট নৌকা ভেসে চলছে, আকাশে ভেসে চলেছে সাদা সাদা মেঘ। রোদটা নরম, বাতাসটা ঠান্ডা, আর আমরা বসে আছি এই কড়ে ঘরের দারুণ ঘরানার রেস্টুরেন্টে, যা আমাদের সময়টাকে করে তুলেছে সম্পূর্ণ। পাশেই কয়েকজন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বসে ছিল। তারা কিছু বলছিল না, কেবল নদীর দিকে তাকিয়ে ছিলেন অনেকক্ষণ। সেই চেহারায় আমি দেখেছিলাম একধরনের স্মৃতি আর সন্তুষ্টি—যা বয়সের সঙ্গে আসে। তাদের দেখেই মনে হলো, আমরা সবাই নিজের মতো করে নদী দেখে, আকাশ দেখে নিজেদের ভেতরের কিছু জিনিস আবার খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি।

WhatsApp Image 2025-07-20 at 22.53.06_edbb5bcc.jpg

WhatsApp Image 2025-07-20 at 22.53.07_139bcdbf.jpg

যাই হোক, এরই মধ্যে সবার বেশ ক্ষুধা লেগে গেছে। তাই গেলাম রেস্টুরেন্টের বাবুচি খানায ইলিশ মাছের দাম করতে। ওমা! মাথা গরম করার মত দাম। এক হালি মাছের দাম চায় ৪০০০ টাকা। আমরা বুঝে গেলাম এখানে খাওয়া যাবে না। তাই বাকীদের কে এখানে অপেক্ষায় রেখে আমরা গেলাম বিশাল মাঠে যে রেস্টুরেন্ট গুলো ছিল সেখানে। মাছের দাম দেখার জন্য। আর স্বস্তায় দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য। এই বিষয়টি নিয়ে ভ্রমন পর্বের পরের পর্ব জানতে পারবেন।

WhatsApp Image 2025-07-20 at 22.53.07_3b6e0b76.jpg

WhatsApp Image 2025-07-20 at 22.53.07_aacb37f4.jpg

WhatsApp Image 2025-07-20 at 22.53.05_5344c7ea.jpg

মাওয়া ভ্রমণের এই পর্বটি যেন আমাদের ভ্রমণের ‘ব্রেকিং পয়েন্ট’। এখানেই আমরা দুললাম, হেলান দিলাম, আর পদ্মা নদীর কোলে মাথা রেখে কিছু সময় কাটালাম—শুধু নিজের জন্য, নিজের মনকে ভালোবাসার জন্য। এই ‍কুড়েঘরের রেস্টুরেন্ট আমাদের শুধু খাওয়ার জায়গা দেয়নি, দিয়েছে এক টুকরো প্রশান্তি। যে দুলনায় আমরা দুলেছি, যে বিছানায় আমরা বসে আকাশ দেখেছি, যে কাঠের ফ্রেমে দাঁড়িয়ে আমরা পদ্মার ঢেউ দেখেছি—সবকিছু মিলিয়ে গড়ে উঠেছিল এক নিরব, গভীর ভালো লাগার অনুভব। শুধু আমরা না—সেই রেস্টুরেন্টে থাকা প্রতিটি মানুষ, তাদের চোখে মুখে ছিল একই প্রশান্তির ছাপ। কেউ জানত না কার নাম, কোথা থেকে এসেছে—তবুও সবাই এক অভিন্ন অনুভবে বাঁধা ছিল পদ্মার সেই প্রান্তে। আমরা মন ভরে সেই সময়টুকু কাটিয়ে রওনা দিলাম পরবর্তী গন্তব্যের দিকে। কিন্তু রেস্টুরেন্টের কাঠের ছাদ, দোলনার মৃদু দোলা, আর পদ্মার বুক জুড়ে ছড়ানো সোনালী রোদ আমাদের সঙ্গে থেকে গেল অনেকটা পথ।

পোস্ট বিবরণ

শ্রেণীভ্রমণ
ক্যামেরাVivo y18
পোস্ট তৈরি@maksudakawsar
লোকেশনবাংলাদেশ

আমার পরিচিতি

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।


3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeF5StuMqDPqgYjRhUxqFbXTvH2r2mDgNbWweA4YGBo825oLh4oqEqeynn5EZL11LdCrppngkM (1).gif

VOTE @bangla.witness as witness

witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

1000206266.png

1000206267.png

❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️