দোয়া – এক অমূল্য নিয়ামত, যা সবাই পায় না।

দোয়া এমন এক শক্তি, যার গভীরতা মাপা সম্ভব নয়। এটি এমন এক উপহার যা আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে দিয়েছেন, যেন তারা যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারে। কিন্তু দোয়া করার সৌভাগ্য সবাই পায় না। কারণ দোয়া করার তাওফিকও এক ধরনের রহমত, যা আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন তাকেই দেন।

আমরা জীবনে অনেক কিছু পাই — অর্থ, সম্মান, সম্পর্ক, সাফল্য — কিন্তু অনেক সময় মন শান্ত থাকে না। উদ্বেগ, ভয়, অনিশ্চয়তা আমাদের ঘিরে রাখে। তখন যে মানুষটি আল্লাহর দিকে ফিরে তাকায়, তার মন শান্ত হয়ে যায়। সে জানে, দোয়ার মাধ্যমে সে এমন একজনের সঙ্গে কথা বলছে, যিনি কখনো ভুল করেন না, কখনো ক্লান্ত হন না, আর সবসময় শুনছেন।

দোয়া শুধু মুখের কিছু শব্দ নয়, এটি হৃদয়ের অনুভূতি। কেউ হয়তো রাতের অন্ধকারে চোখের পানি ফেলে, কেউ হয়তো সেজদায় নীরবে কাঁদে — সেটাই দোয়া। কেউ উচ্চস্বরে না বললেও, তার বুকের গভীর নিঃশ্বাসও আল্লাহ শুনে নেন। আল্লাহ বলেন, “আমি আমার বান্দার খুব কাছেই আছি; যখন সে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব।” এই প্রতিশ্রুতিই প্রমাণ করে যে, দোয়া আসলে মানুষ আর স্রষ্টার মধ্যে সবচেয়ে শক্ত বন্ধন।

তবে দোয়া করার ক্ষমতা সবসময় সবাই পায় না। কেউ জীবনের আনন্দে ভুলে যায়, কেউ দুঃখে এতটাই হারিয়ে যায় যে দোয়ার কথা মনে থাকে না। আবার কেউ মনে করে, দোয়া করে লাভ নেই, আল্লাহ তো শুনছেন না। আসলে এই চিন্তাই সবচেয়ে বড় ভুল। কারণ, দোয়া কখনো বৃথা যায় না। কখনো তা সঙ্গে সঙ্গে কবুল হয়, কখনো পরে হয়, আর কখনো আল্লাহ আমাদের চাওয়া না দিয়ে তার চেয়ে ভালো কিছু দেন। কখনো তিনি আমাদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করেন, যেটা আমরা বুঝতেও পারি না।

দোয়ার আরেকটা দিক হলো, এটি মানুষের অহংকার ভেঙে দেয়। যখন আমরা দোয়া করি, তখন স্বীকার করি যে আমরা দুর্বল, আমরা নির্ভরশীল, আমাদের নিয়ন্ত্রণ সীমিত। এই বিনয়ই মানুষকে উন্নত করে। যে মানুষ দোয়া করে, সে নিজের সীমাবদ্ধতা মেনে নেয় এবং স্রষ্টার অসীম ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস রাখে। আর এই বিশ্বাসই তাকে দৃঢ় করে তোলে, জীবনের কঠিন মুহূর্তেও।

দোয়ার মধ্যে একটা অদ্ভুত প্রশান্তি আছে। যখন কেউ মন খুলে আল্লাহর সামনে কাঁদে, তখন তার বুক হালকা হয়ে যায়। সে হয়তো চাওয়া জিনিসটি তখনই পায় না, কিন্তু তার মন শান্ত হয়। কারণ সে জানে, সে একা নয়। কেউ একজন আছে, যিনি সব জানেন, যিনি সব ঠিক করে দেবেন। এই বিশ্বাসই মানুষকে টিকিয়ে রাখে, আশাহীনতার অন্ধকারেও একটুখানি আলো দেয়।

অনেক সময় আমরা দেখি, কেউ বিপদে পড়লে তখন দোয়া শুরু করে। অথচ আসলে দোয়া শুধু বিপদের সময় নয়, সুখের সময়ও করা উচিত। কারণ দোয়া শুধু চাওয়ার জন্য নয়, কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যও। যখন আমরা বলি, “আলহামদুলিল্লাহ,” সেটাও এক ধরনের দোয়া। এতে থাকে কৃতজ্ঞতা, সন্তুষ্টি, এবং আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা।

একজন মানুষ যত বেশি দোয়া করে, তত বেশি আল্লাহর সঙ্গে তার সম্পর্ক গভীর হয়। আর যে সম্পর্কটা একবার গড়ে ওঠে, সেটা কখনো হারায় না। দোয়া মানুষকে আল্লাহর কাছে টেনে আনে, মনকে কোমল করে, আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। তাই দোয়া শুধু একটি ধর্মীয় অনুশীলন নয় — এটি জীবনের একটি প্রয়োজন।

যে মানুষ দোয়া করে না, সে আসলে এক ধরনের অভাবী মানুষ। হয়তো তার কাছে অনেক কিছু আছে, কিন্তু শান্তি নেই। আবার যে মানুষ দোয়া করে, সে হয়তো কিছু হারিয়েছে, কিন্তু তার মুখে তবুও হাসি আছে, কারণ সে জানে তার দোয়া আল্লাহর কাছে গিয়েছে, আর আল্লাহ কখনো তার বান্দাকে নিরাশ করেন না।

শেষ পর্যন্ত, দোয়া এমন এক নিয়ামত যা দিয়ে মানুষ সব কিছু পেতে পারে — ভালোবাসা, রিজিক, স্বাস্থ্য, শান্তি, ক্ষমা, এবং সবচেয়ে বড় জিনিস, আল্লাহর সন্তুষ্টি। কিন্তু এই দোয়া করার তাওফিক সবার ভাগ্যে জোটে না। তাই যার হৃদয়ে দোয়ার তাগিদ আসে, সে সত্যিই সৌভাগ্যবান। কারণ আল্লাহ নিজেই তাকে নিজের দিকে ডাকছেন।

দোয়া মানে আশা, বিশ্বাস আর ভালোবাসার মিশ্রণ। দোয়া মানে এই বিশ্বাস যে, যত কঠিনই সময় হোক না কেন, কেউ একজন আছেন যিনি বলবেন — “চিন্তা করো না, আমি আছি।” আর এই বিশ্বাসই মানুষকে টিকিয়ে রাখে, শক্ত রাখে, আর আল্লাহর দিকে আরও কাছে নিয়ে যায়।

তাই বলা যায়, দোয়া অনেক বড় জিনিস — এমন এক অমূল্য উপহার, যা সবাই পায় না, কিন্তু যিনি পান, তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষদের একজন।

সকলকে ধন্যবাদ অনুচ্ছেদ টি পড়ার জন্য।

|| Join the Discord Server for more Details ||

VOTE @bangla.witness as witness

OR

SET @rme as your proxy