নিজের সুবিধা হবে না বলেই কি মিথ্যে বলবো ?
আজ -২৪ য় আষাঢ় | ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | বর্ষাকাল |
আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।
নিজের সুবিধা হবে না বলেই কি মিথ্যে বলবো? অনেক সময় আমাদের এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়, যেখানে সত্য বললেই বিপদ, নিজের ক্ষতি, কিংবা একটা সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার ভয় থাকে। তখন খুব স্বাভাবিকভাবে মনে হয়, একটা ছোট্ট মিথ্যে বললেই তো সব ম্যানেজ হয়ে যাবে। কেউ বুঝবেও না, আমিও পার পেয়ে যাব। কিন্তু আসল প্রশ্নটা হলো, আমি কি শুধু নিজের সুবিধার কথা ভেবে মিথ্যে বলবো?
আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন আমাদের শেখানো হতো—সত্য বলো, অন্যায় করো না, মিথ্যে বলা পাপ। কিন্তু বড় হয়ে সেই কথাগুলোর মানে আর বাস্তবতার মধ্যে এক ধরনের টানাপোড়েন শুরু হয়। কারণ বাস্তব জীবনে সত্য বলা মানে সবসময় পুরস্কার পাওয়া না, বরং অনেক সময় তার উল্টোটাও হতে পারে। চাকরির ইন্টারভিউ হোক বা বন্ধুর কোনো ভুল ধরা, পারিবারিক কোনো ব্যাপারে মত দেওয়া হোক বা অফিসের বড় সিদ্ধান্ত—সত্য বললে হয়তো কেউ খুশি হবে না, আপনি হয়তো অপছন্দের মানুষ হয়ে যাবেন, কেউ আবার হয়তো সুযোগ বন্ধ করে দেবে।
তবুও, প্রশ্নটা থেকেই যায়—আমি কি শুধু নিজের সুবিধার কথা ভেবে সত্যকে এড়িয়ে যাব? আমি কি মিথ্যে বলে নিজেকে রক্ষা করব, কিন্তু ভেতরে ভেতরে জানব আমি ভুল করেছি? একবার মিথ্যে বললে সুবিধা হয়তো পাওয়া যাবে, কিন্তু সেটা কি স্থায়ী? বরং একটা মিথ্যে দিয়ে শুরু হলে, পরপর আরেকটা মিথ্যে লাগবে সেটা ঢাকতে, তারপর আরেকটা। একসময় সেই মিথ্যে একেকটা দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে যায়, যেখানে নিজের মুখটাই চেনা যায় না।
আমাদের জীবন এমনিতেই জটিল, তার ওপর যদি নিজের বিবেকের সাথে যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে তো শান্তি বলে কিছু থাকেই না। বাইরে থেকে হয়তো সবাই ভাবছে—এই মানুষটা ঠিক আছে, বুদ্ধিমান, চতুর। কিন্তু সে মানুষটা রাতে ঘুমাতে গেলে নিজের মনকে যদি শান্ত করতে না পারে, তাহলে তো সে সফল না। কারণ দিনের শেষে আমরা সবাই একটাই জিনিস চাই—একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস, একটা নির্ভার মন।
সত্য বললে হয়তো কেউ রাগ করবে, আপনি হয়তো কিছু হারাবেন, কিন্তু আপনি নিজের চোখে নিজের সম্মান হারাবেন না। সত্য বলার সাহস খুব বেশি মানুষের থাকে না। তাই যারা সত্য কথা বলে, তারা আলাদা হয়, সম্মানের জায়গায় থাকে। মিথ্যে দিয়ে যে সুবিধা পাওয়া যায়, সেটা ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু সত্য দিয়ে যে আত্মবিশ্বাস পাওয়া যায়, সেটা সারাজীবন চলে।
অনেক সময় আমরা দেখি, কেউ মিথ্যে বলেছে আর লাভ করেছে। তখন মনে হয়, আমি এত নীতিবান হয়ে কী লাভ? কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হয়—যে মানুষটা সত্যকে আঁকড়ে ধরে, সে হয়তো ধীরে এগোয়, কিন্তু তার পথটা মজবুত হয়। যে মিথ্যে বলে দৌড়ায়, সে একসময় হোঁচট খায়। কারণ মিথ্যে কখনোই সত্যের মতো স্থায়ী হয় না।
নিজের সুবিধা না হলেও সত্য বলা মানে আপনি নিজেকে ছোট করছেন না, বরং নিজেকে শক্ত করে তুলছেন। আপনি দেখাচ্ছেন, আপনি সুবিধার জন্য নিজের বিবেক বিক্রি করেন না। আজকের দিনে, যেখানে সবাই শর্টকাট খোঁজে, সেখানে যদি আপনি সত্য বলার সিদ্ধান্ত নেন, তবে আপনি সত্যিকার অর্থে আলাদা একজন মানুষ।
আমাদের সমাজে এখন এমন একটা সময় এসেছে, যেখানে মিথ্যে বলা নিয়ে খুব একটা লজ্জা কেউ পায় না। বরং অনেকে সেটাকেই স্মার্টনেস মনে করে। কিন্তু আপনি যদি নিজের মনকে জিজ্ঞেস করেন, সে কিন্তু ঠিকই জানে, আপনি ঠিক করেছেন নাকি ভুল। আর সেই মনের কাছে জেতাটাই সবচেয়ে বড় জয়। বাইরে সবাই যদি প্রশংসা করে, আর নিজের মন যদি ধিক্কার দেয়—তাহলে সে প্রশংসার কোনো মানে নেই।
তাই আমি যখন ভাবি, নিজের সুবিধা হবে না বলেই কি মিথ্যে বলবো? তখন আমি বলি—না, আমি মিথ্যে বলবো না। কারণ আমি জানি, সত্য বলা কঠিন হলেও, সেটা আমার আত্মাকে মুক্ত রাখে। আমার রাতে ঘুম হয়, আমার মুখ লুকাতে হয় না, আমি গর্ব করে বলতে পারি—আমি ভুল করি, কিন্তু আমি মিথ্যে বলি না।
একটা মানুষ তার কাজের জন্য বড় হয়, কিন্তু তার চরিত্রের জন্য সম্মান পায়। আর সেই চরিত্র গড়ে ওঠে ছোট ছোট সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে—যেমন, সত্য বলবো নাকি নিজের সুবিধার জন্য মিথ্যে বলে পার পেয়ে যাবো। আমরা হয়তো পৃথিবী বদলাতে পারবো না, কিন্তু নিজের ভেতরের মানুষটাকে তো বদলাতে পারি। আর সেই বদলটাই একদিন আশেপাশে ছড়িয়ে পড়বে।
তাই নিজেকে জিজ্ঞেস করুন—আপনি কেমন মানুষ হতে চান? যারা নিজের সুবিধার জন্য সবকিছু করতে পারে? নাকি যারা নিজের ক্ষতি হলেও সঠিক কাজটা করতে চায়? আপনি যে পথ বেছে নেবেন, সেটাই হবে আপনার পরিচয়।
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community