“শৈশবের কাঁচা আম মেখে পিকনিকের মধুর স্মৃতি”
শৈশব মানেই একরাশ দুরন্তপনা, ছোট ছোট স্বপ্ন, আর হাজারো নিষিদ্ধ আনন্দের গল্প। তখন আমাদের জীবনে ছিল না মোবাইল ফোন, ছিল না ইন্টারনেটের আসক্তি। ছিল শুধু একটা ফুটবল, একঝাঁক বন্ধু আর আশপাশের মাঠ-জঙ্গল-বাগান। গ্রামের মেঠোপথ ধরে হেঁটে কিংবা দৌড়ে আমরা পৌঁছে যেতাম আমাদের স্বপ্নের রাজ্যে। আর গ্রীষ্মকাল এলেই সেই রাজ্যটা যেন আরও রঙিন হয়ে উঠত। কারণ গাছে গাছে ঝুলে থাকা কাঁচা আম, লিচু, জাম ছিল আমাদের কাছে স্বর্গের মতো। আর সেই কাঁচা আম মেখে পুকুরপাড়ে কিংবা বটগাছতলায় বসে পিকনিক করার আনন্দটা ছিল একেবারে আলাদা। আজও চোখ বন্ধ করলে সেই দিনগুলোর ছবি ভেসে ওঠে।
একদিন ঠিক এমন এক গরমের দুপুরে আমাদের শুরু হয়েছিল এক দুঃসাহসিক অভিযান। স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। বাড়িতে এসে দেখি সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আম্মুর গলার আওয়াজও আসছে না। বুঝলাম এটাই সুযোগ। বইখাতা রেখে চুপিচুপি বেরিয়ে পড়লাম। বাইরে এসে দেখি আকাশ, শিহাব, জাহিদ,জুয়েল সবাই আগে থেকেই অপেক্ষা করছে। হাতে দড়ি, বস্তা আর মুখে লেগে থাকা রহস্যময় হাসি। আকাশ বলল, চল রে… আজ খেজুরতলা বাগানে। বড় গাছটায় অনেক কাঁচা আম আছে। আজ না তুললে কাল আর পাবি না। সবার উত্তেজনা তখন আকাশের সমান। এক মিনিটও দেরি না করে রওনা দিলাম। গরমে ঘাম ঝরছে, মাথার উপর তপ্ত সূর্য। কিন্তু সেই গাছের ঝুলে থাকা টসটসে কাঁচা আমের কথা মনে পড়তেই সব ক্লান্তি উধাও। মাঠ, বাঁশঝাড়, সরু গলি পার হয়ে পৌঁছে গেলাম খেজুরতলা বাগানে। সেই গাছটা দেখে চোখ বড় বড়। এত বড় গাছ, আর তার ডালে ঝুলে আছে শত শত কাঁচা আম। আমরা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে প্ল্যান করলাম।আমি আর জুয়েল গাছে উঠব, বাকিরা নিচে থাকবে। আম ফেললে ওরা ধরে বস্তায় ভরবে। শিহাব আর জাহিদ পাহারায় থাকবে। কেউ আসলে সিটি বাজিয়ে জানিয়ে দেবে।
প্ল্যানমতো আমি আর জুয়েল গাছে উঠলাম। এক এক করে আম ছেঁড়া শুরু করলাম। ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে বাকিরা আম কুড়াচ্ছে। হঠাৎ দূর থেকে আওয়াজ, “এই কে রে… কে গাছে উঠেছিস?” শুনে বুক কেঁপে উঠল। শিহাব আর জাহিদ তো দৌড়। আমের বস্তা ফেলে এক ছুটে পালাল। আমি আর জুয়েল গাছের ডালের আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম। গাছের মালিক এসে শুধু বাতাসে পাতার দুলুনি দেখল। আমাদের দেখতে পেল না। একটু পর যখন সে চলে গেল, তখন আমরা আস্তে আস্তে নামলাম।সব আম গুছিয়ে নিয়ে গেলাম বটগাছতলার পুকুরপাড়ে। সেখানে আগেই একখানা ভাঙা পাতিল, লবণ-মরিচ আর কলাপাতা রেখে দিয়েছিলাম। শিহাবের দাদির রান্নাঘর থেকে চুরি করে আনা লবণ আর শুকনো মরিচও ছিল। তারপর কাঁচা আমগুলোর খোসা ছাড়িয়ে সবাই মিলে লবণ-মরিচ মেখে খেতে শুরু করলাম। সে এক স্বর্গীয় স্বাদ। ঝাঁঝালো লবণ-মরিচের সাথে কাঁচা আমের টক-মিষ্টি স্বাদে একেকজনের চোখ-মুখ লাল হয়ে গেলেও কেউ থামছে না। কেউ বলছে, “আরেকটু মরিচ দে রে”, কেউ লবণ বাড়ানোর জন্য বলছে।
হাসাহাসি, ঠাট্টা, আর আমের ঝাঁঝালো মজায় কাটিয়ে দিলাম বিকেলটা। সূর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিমে। পুকুরের পানির সোনালি আলোর খেলা। সবাই ক্লান্ত, কিন্তু মুখে তৃপ্তির হাসি। হঠাৎ জুয়েলের মা এসে ধমক দিয়ে সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দিল। বাড়ি ফিরে আম্মু বকা দিল, “এত লবণ-মরিচ খেলে পেট খারাপ করবে।” কিন্তু মন তখনও পড়ে আছে সেই বটগাছতলায়, ঝাঁঝালো লবণ-মরিচ মাখা কাঁচা আম আর বন্ধুদের হাসির মধ্যে।
এখনও গ্রীষ্ম এলেই সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। ইচ্ছে করে আবার সেই দিনগুলোয় ফিরে যেতে। আবার পুকুরপাড়ে বসে লবণ-মরিচ মাখা কাঁচা আম খেতে, আর বন্ধুদের নিয়ে পিকনিক করতে। শৈশবের সেই নিষিদ্ধ আনন্দগুলোই আসলে জীবনের সেরা উপহার।
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
X-Promotion
Daily Tasks
Comment Link:-
https://x.com/mohamad786FA/status/1925146802317349173?t=27OXMlDzLayuVWzoMGRSTQ&s=19
https://x.com/mohamad786FA/status/1925147001521668287?t=yK1khaiBx2mCaZ74vgTqgg&s=19
https://x.com/mohamad786FA/status/1925147279285264513?t=l1IuTbWbfm_NSHYXT-hobw&s=19
https://x.com/mohamad786FA/status/1925147489033977961?t=UHcRoZuwNjYRuYGm91pLQQ&s=19
https://x.com/mohamad786FA/status/1925273321241014302?t=gnUKpf80E2wMC2Hn8s8TfA&s=19
https://x.com/mohamad786FA/status/1925273482776256898?t=z4HrrhEv1juhPMT6n7jrtA&s=19
https://x.com/mohamad786FA/status/1925273642243694825?t=_4e75NXgpB0BmGAoVHXT_g&s=19
ss
বন্ধুদের সাথে কাটানো শৈশবের স্মৃতিগুলো আসলে কখনো ভোলা যায় না। আর সবাই মিলে এভাবে দুপুরবেলা কাঁচা আম লবণ মরিচ দিয়ে মেখে খেতে ভালোই লাগে। আপনাদের শৈশবের স্মৃতিগুলো পড়ে বেশ ভালো লাগলো ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।