"বৃষ্টিভেজা শৈশবের স্মৃতি"

বৃষ্টির মৌসুম মানেই এক অন্যরকম অনুভূতি। চারদিক সজীব হয়ে ওঠে, প্রকৃতি ধুয়ে-মুছে নতুন রূপে সাজে। কিন্তু এই ঋতুটা আমার কাছে শুধুই প্রকৃতির সৌন্দর্যের কথা মনে করিয়ে দেয় না মনে করিয়ে দেয় শৈশবের সেই সোনালী দিনগুলোর কথা, যেগুলো আজও মনের গভীরে ঠিক আগের মতোই টাটকা হয়ে আছে।

স্মৃতির পাতায় যদি একটু পেছনে ফিরে তাকাই, তখন আমি ক্লাস ওয়ান বা টুতে পড়ি। সেই সময়টাতে আমরা গ্রামেই ছিলাম। সবুজে ঘেরা ছোট্ট একটা গ্রাম, যেখানে আকাশটা ছিল অনেকটা বড়, আর বৃষ্টিটাও যেন একটু বেশি রোমাঞ্চকর ছিল। মুষলধারে বৃষ্টি নামলে স্কুলে যাওয়া হতো না। তখনকার দিনে অবশ্য স্কুল কামানো একটা আলাদা আনন্দ ছিল।

সোর্স

যখনই আকাশ কালো হতো, আর বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি নামতো, আমার মনটা অস্থির হয়ে উঠতো। পড়াশোনার ঝামেলা ভুলে যেতে চাইতাম প্রকৃতির সেই আহ্বানে। কিন্তু আম্মু ছিল তখন বড্ড কড়া। বৃষ্টির সময় বাইরে যাওয়া তো দূরের কথা, জানালার কাছেও দাঁড়াতে দিত না। বলত, "ঠান্ডা লেগে যাবে, জ্বর আসবে।" কিন্তু আমি তো আর চুপ করে বসে থাকি না। আম্মুর চোখ ফাঁকি দিয়ে কিংবা কান্নাকাটি করে, শেষ পর্যন্ত বের হয়েই যেতাম ছাতা হাতে।বন্ধুবান্ধবদের ডেকে নিয়ে গ্রামের মেঠো পথে হাঁটা শুরু করতাম। কাদা আর পানি মিশে তৈরি হতো এক অদ্ভুত মিশ্রণ, যেখানে পা পড়লেই চোঁ-চোঁ শব্দ হতো। মাঝে মাঝে পা পিছলে পড়েও যেতাম। জামা কাপড় কাদায় মাখামাখি হয়ে যেত। কিন্তু এসব কিছুর মাঝেও যে আনন্দটা পেতাম, তার কোনো তুলনা নেই।

ছাতার নিচে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে করতে হাঁটা, কখনো ছাতা বন্ধ করে বৃষ্টির ফোঁটা গুনতে গুনতে হাত বাড়িয়ে দেওয়া, আবার কখনো কাদার মধ্যে দাঁড়িয়ে পানি ছিটিয়ে একে অপরকে ভিজিয়ে দেওয়া সবকিছুই যেন ছিল এক একটা রঙিন স্মৃতির টুকরো। সেসব দিনে কোনো টেনশন ছিল না, কোনো দায়িত্ব ছিল না শুধু খেলা, হাসি আর বৃষ্টিভেজা আনন্দ।তবে বাড়ি ফেরার সময়টা হতো একটু ভয়াবহ। জামা কাপড় ভেজা, শরীর কাদা, আর মুখে হাসি এই অবস্থায় যখন আম্মুর সামনে যেতাম, তখন রাগে তাঁর চোখ দুটো কেমন লাল হয়ে উঠত। কখনো বকা, কখনো মার কিন্তু আজ বুঝি, সে বকা-টা ছিল ভালোবাসা থেকেই। মা শুধু চাইত আমি সুস্থ থাকি, কষ্ট না পাই।

আজ এত বছর পর যখন আবার বৃষ্টি হয়, আমি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সেই পুরনো দিনগুলোকে খুঁজি। শহরের ব্যস্ততা, কংক্রিটের দালান, আর নোংরা ড্রেনের পানি দেখে মনটা কেমন জানি খালি খালি লাগে। তখন মন চায় আবার সেই গ্রামে ফিরে যাই, আবার সেই ছেলেবেলার মতো বৃষ্টিতে ভিজে যাই, কাদায় পড়ে যাই, বন্ধুদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টায় মেতে উঠি।

শৈশব মানেই তো এমন কিছু মুহূর্ত, যা আর কখনো ফিরে পাওয়া যায় না, কিন্তু যা সারাজীবন মনের মধ্যে রয়ে যায় এক অপূর্ব সুখস্মৃতি হয়ে। বৃষ্টির দিনে আজও যখন বাইরে তাকাই, মনে হয় জানালার ও পাশে এখনো দাঁড়িয়ে আছে সেই ছোট্ট আমিটা ছাতা হাতে, চোখে উচ্ছ্বাস, আর মনে একরাশ বৃষ্টিভেজা স্বপ্ন।

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। _{আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।}