“মৌসুমের প্রথম লিচু খেলাম”
বছরের প্রথম যেকোনো ফল খাওয়ার আলাদা একটা আনন্দ আছে। সেটা যেন একটা ছোটখাটো উৎসব। বিশেষ করে যদি সেই ফলটা হয় আম, কাঁঠাল, কিংবা লিচু যেগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের শৈশবের অনেক মিষ্টি স্মৃতি। আর তা যদি হয় নিজের সবচেয়ে পছন্দের ফল, তাহলে তো কথাই নেই। তখন সেই ফলের স্বাদ, গন্ধ, এমনকি রঙও অন্যরকম লাগে। আজ তেমনই এক আনন্দের দিন ছিল আমার জন্য। কারণ, আজ বছরের প্রথম লিচু খেলাম।
বাজারে এখনো লিচু পুরোপুরি আসে না। দু-একটা দোকানে দেখা যায়, তবে দামটা বেশ বেশি। তাই লিচু খাওয়ার ব্যাপারে মনেও কোনো ভাবনা ছিল না। কিন্তু জীবন তো সবসময় পরিকল্পনা অনুযায়ী চলে না। কখনো কখনো কিছু ঘটতে থাকে এমনভাবে, যা মনকে একদম অন্য এক জগতে নিয়ে যায়। আজও তেমন কিছু হলো। বিকেল বেলা ঢাকার ব্যস্ততা থেকে ছুটি নিয়ে আমি সিরাজগঞ্জের বাড়িতে ফিরলাম। খুব ক্লান্ত ছিলাম, কিন্তু মনে মনে খাওয়ার কথা না ভাবলেও বাড়িতে এসে আব্বুর হাতে লিচু দেখে মনের আনন্দ ঠিকই উথলে উঠলো।আব্বু একটু আগে ঢাকা থেকে এসে বাজারের ফল নিয়ে এসেছেন। কলা, আপেল, আঙুর, পেয়ারা আর তার মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল লিচু। আব্বুর হাতে লিচু দেখে মনটা আনন্দে পূর্ণ হয়ে উঠলো। সেটা যেন ছিল শৈশবের সেই দিনগুলোর প্রতিচ্ছবি। মনে পড়লো, ছোটবেলায় আমরা কীভাবে উন্মুখ হয়ে লিচু খেতে অপেক্ষা করতাম। লিচু খাওয়ার মৌসুম আসলেই আমাদের বাড়ির চারপাশে লালচে লাল থোকা থোকা লিচু গাছের ডালে ঝুলতে থাকত। সেই মধুর দিনগুলো আর ফিরে আসে না, কিন্তু স্মৃতিগুলোই তো চিরকাল।
বাসায় ঢুকে দেখি, আম্মু ফলগুলো গোছাচ্ছে। আমি তখন ছেলেমানুষের মতো আম্মুর হাতে থাকা লিচুর থলেটা আগে নিয়ে নিলাম। আব্বুও হাসিমুখে বললেন, তোমার জন্যই এনেছি। সেই কথা শুনে আরও ভালো লাগলো। তারপর সবাই মিলে বারান্দায় বসে গেলাম। বাতাসে তখন বিকেলের নরম আলো এবং লিচুগুলোর গায়ে ছিল এক মিষ্টি সুবাস। লালচে লিচুগুলোর গায়ে এখনও ডাল,পাতা ছিল, যেন গাছ থেকে তাজা নামানো হয়েছে।লিচু খাওয়ার আগে হঠাৎ মনে পড়লো, ছোটবেলায় আমরা কীভাবে লিচু খাওয়ার প্রতিযোগিতা করতাম। চাচাতো ভাইবোন সবাই মিলে এক জায়গায় বসে লিচু খেতে শুরু করতাম। কে কতটা খেতে পারে, আর শেষে বিচিগুলো গুনে দেখতাম কে কতটা খেয়েছে। সেই আনন্দে দিনগুলো এখন শুধুই স্মৃতি, কিন্তু আজ আবার সেই আনন্দ ফিরে পেলাম।
লিচু খাওয়া শুরু হলো। প্রথম লিচুর খোসা ছাড়ানোর সময়ই বুঝতে পারলাম, এটি কতটা টাটকা। খোসা ভাঙতেই মিষ্টি সুবাস ভেসে আসলো। সাদা টসটসে রসালো শাঁস। মুখে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যেন মিষ্টির বিস্ফোরণ ঘটলো। একটার পর একটা লিচু খেতে লাগলাম। সবাই মিলে হেসে হেসে বললাম, কে কয়টা খেলো। কেউ বললো, দশটা খেলাম। কেউ বললো, আমি বারোটা। আমি গুনে গুনে খেলাম পনেরোটা, তারপর আর পারলাম না।এমন দিন খুব বেশি আসে না। শহরের ব্যস্ত জীবনে ছোট ছোট আনন্দগুলোই যেন মনটাকে বাঁচিয়ে রাখে। একটা ফলের স্বাদ থেকে পুরোনো দিনের স্মৃতি জেগে ওঠে। মনে হলো, সময় বদলায়, মানুষ বড় হয়, জীবন এগিয়ে যায় কিন্তু কিছু অনুভূতি, কিছু স্বাদ, কিছু মুহূর্ত কখনো বদলায় না। লিচু শুধু একটি ফল নয়, আমার কাছে সেটা শৈশবের এক টুকরো সুখের দিন।
বছরের প্রথম লিচু খাওয়া তাই আমার কাছে শুধু খাওয়ার বিষয় নয়। এটা শৈশবের অনুভূতি। বাবা-মায়ের মুখে হাসি দেখা, ভাইবোনদের সঙ্গে পুরোনো স্মৃতিগুলোকে একটু ছুঁয়ে দেখা। এই অনুভূতির কোনো দাম হয় না। হোক সেটা একটি লিচুর খোসার ভেতরে লুকানো মিষ্টি রস, কিংবা একটি বিচির মধ্যে লুকানো পুরোনো দিনের গল্প।
পরের বার আরও বেশি লিচু আসুক, আবার সবাই মিলে বসে সেই পুরোনো খেলা হোক। জীবনের এই টুকরো আনন্দগুলোই তো আসলে জীবনের সত্যিকারের রঙ।
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
ফোনের বিবরণ
মোবাইল | Samsung A33 (5G) |
---|---|
ধরণ | "মৌসুমের প্রথম লিচু খেলাম" |
ক্যমেরা মডেল | A33 (48+8+5+2) |
ক্যাপচার | @mohamad786 |
অবস্থান | সিরাজগঞ্জ- বাংলাদেশ |
X-Promotion
Daily Tasks
Comment Link:-
SS.
সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন । লিচু আমার খুব পছন্দের একটি ফল যদিও এই বছর এখনো খাওয়া হয়নি। আপনার এ বছর প্রথম লিচু খাওয়ার মুহূর্ত পড়ে ভালই লেগেছে। দেখে লিচু গুলো টাটকা মনে হচ্ছে। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
আমার পছন্দের ফল লিচু।এখনো লিচু খাওয়া হয়নি কারণ বাজারে যে লিচু গুলো পাওয়া যায় তা পছন্দ হয় না।আমাদের এলাকায় এখনো টসটসে সুন্দর লিচু উঠে না।আমার গাছে লিচু ধরেছে তবে পরিপক্ব হওয়ার আগেই ঝড়েও যাচ্ছে সব গাছ থেকে।আপরি লিচু খেয়েছেন জেনে ভালো লাগলো।ধন্যবাদ আপনাকে লোভনীয় রেসিপিটি আমাদের সাথে ভাগ করে নিয়েছেন জন্য।