শৈশবের স্মৃতি:- "বিকেলে খেলতে যাওয়ার গল্প"

in আমার বাংলা ব্লগlast month

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি।

শৈশবের স্মৃতি সবসময়ই খুব মিষ্টি আর রঙিন। এখন বড় হয়েছি, কিন্তু মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করলে যেন সেই দিনগুলো স্পষ্ট ভেসে ওঠে। বিশেষ করে বিকেলের খেলার সময়গুলো আমার কাছে এখনো অনেক প্রিয়। পড়াশোনার চাপ, অভিভাবকদের শাসন সবকিছু একপাশে সরিয়ে রেখে, বিকেলের বাতাসে খেলতে যাওয়ার আনন্দ সত্যিই অন্যরকম ছিল।

1000094363.jpg

আমাদের সময়ে খেলাধুলার প্রতি টান ছিল স্বাভাবিক। বিকেল হলেই মন ছটফট করত মাঠে দৌড়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু বড়রা সবসময় চাইত আমরা যেন পড়াশোনায় মন দিই। সেই জন্যই অনেক সময় খেলতে যাওয়া যেন এক ধরনের যুদ্ধ ছিল। বাড়ির সবাইকে না বলে, চুপিসারে স্যান্ডেল হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম। সেই ছোট্ট বুদ্ধিটুকুই ছিল আমাদের বড় কৌশল।বিকেলের আকাশে যখন রঙিন সূর্য ডুবে যেত, তখন আমাদের দলে উত্তেজনা আরও বেড়ে যেত। মাঠের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা বন্ধুদের হাসি, ডাকাডাকি, আর হৈ-হুল্লোড় সত্যিই ভোলার নয়। তখন আমাদের খেলার মধ্যে ছিল দাড়িয়াবান্ধা, কানামাছি, গোল্লাছুট, লুকোচুরি, কিংবা সহজ করে বললে একেবারে গ্রামের খেলা। ক্রিকেট বা ফুটবলও খেলতাম, কিন্তু ছোট্ট গলির ভেতর দাড়িয়াবান্ধার মজাই ছিল আলাদা।

বন্ধুদের সাথে মাঠে নামলেই যেন পৃথিবীটা বদলে যেত। একসাথে দৌড়াদৌড়ি, হাসি-ঠাট্টা, আর মাঝে মাঝে ছোটখাটো ঝগড়া সবই যেন আমাদের খেলাধুলার অংশ ছিল। আজ ভাবলে মনে হয়, এসব মুহূর্তই আমাদের চরিত্র গঠনে বড় ভূমিকা রেখেছে। সেখানে ছিল দলবদ্ধতা, সাহস, প্রতিযোগিতা, আবার সমঝোতাও।তবে খেলতে যাওয়ার সময় এক ধরনের ভয়ও থাকত বাড়িতে কেউ টের পেয়ে যাবে কি না। অনেক দিন এমন হয়েছে, খেলতে গিয়ে কাপড় কাদায় ভিজে গেছে বা হাঁটু ছিঁড়ে গেছে। তখন বাড়ি ফেরার সময় বুকের ভেতর ধকধক শুরু হয়ে যেত। মায়ের চোখ এড়িয়ে ঘরে ঢুকতাম। মা যদি কিছু জিজ্ঞেস করত, সাথে সাথেই মিথ্যা গল্প বানিয়ে বলতাম “আমি পড়তে বসেছিলাম, হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়েছি।” এখন মনে হয়, মা নিশ্চয়ই সব বুঝতেন, কিন্তু সেসময় আমাদের খুশির জন্য কিছুই বলেননি।

একবারের কথা এখনো মনে আছে। আমি বন্ধুরা মিলে লুকোচুরি খেলতে বেরিয়েছিলাম। বাড়িতে বলিনি। খেলতে গিয়ে এত মজা হচ্ছিল যে সময়ের খেয়ালই ছিল না। হঠাৎ দেখি চারপাশ অন্ধকার হয়ে গেছে। সবাই একে একে বাড়ি চলে গেছে, শুধু আমি আর দু’জন বন্ধু মাঠে রয়ে গেছি। বাড়ি ফেরার সময় মনে হচ্ছিল যেন বড় কোনো অপরাধ করেছি। ঘরে ঢুকতেই বাবা জিজ্ঞেস করলেন “কোথায় ছিলি?” আমি তোতলাতে তোতলাতে উত্তর দিলাম “বই খুঁজছিলাম।” এখন ভাবলে হাসি পায়, বাবা নিশ্চয়ই তখনই বুঝেছিলেন।আমাদের খেলার আরেকটা মজার দিক ছিল প্রতিদিন নতুন নতুন পরিকল্পনা করা। কখনও আমরা দল বেঁধে ক্রিকেট খেলতাম, কখনও গোল্লাছুট। আবার হঠাৎ বৃষ্টি এলে আমরা ভিজে ভিজে কাদায় ফুটবল খেলতাম। সেই আনন্দের সঙ্গে আজকের মোবাইল গেমস বা কম্পিউটার গেমস কোনোভাবেই তুলনা চলে না। বাস্তব মাঠের খেলায় যে প্রাণ ছিল, তা ভার্চুয়াল খেলায় কখনো পাওয়া যায় না।

সবচেয়ে বড় কথা, খেলতে যাওয়া মানে ছিল বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো। তখন টাকার প্রয়োজন ছিল না, দামী খেলনার দরকার ছিল না। শুধু একটু খোলা মাঠ আর বন্ধুদের উপস্থিতি এই সামান্য জিনিসেই শৈশব পূর্ণ ছিল।

আজ যখন ব্যস্ত জীবনে সময় পাই না, তখন শৈশবের সেই বিকেলগুলো আরও বেশি মনে পড়ে। মনে হয় আবার যদি একদিন সেই মাঠে গিয়ে দৌড়ে বেড়াতে পারতাম।কিন্তু সময় তো আর ফিরে আসে না। শুধু স্মৃতিই রয়ে গেছে।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Posted using SteemX

Sort:  
 last month 

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last month 

মধুর স্মৃতি মনে পড়লে খুবই ভালো লাগে। শৈশবের মজার কথা গুলো এখনো মনে পড়ে। আপনি চমৎকার একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন ভাই।