"আমাদের মেহরাবের দ্বিতীয় জন্মদিন [১২-০৮-২৫]"

আজকের দিনটা আমাদের পরিবারের জন্য ছিল একরাশ অনাবিল আনন্দের এবং উচ্ছ্বাসের। ক্যালেন্ডারের পাতায় আজকের তারিখটা হয়তো অন্য সবার কাছে সাধারণ একটি দিন, কিন্তু আমাদের কাছে এটি ছিল বিশেষ একটি উৎসবের দিন। কারণ, আজ আমাদের পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্য, আমাদের নয়নের মণি, আমার আদরের মামাতো ভাই মেহরাবের দ্বিতীয় জন্মদিন ছিল। এই ছোট্ট মানুষটার আগমন আমাদের জীবনে যে কতটা আনন্দ আর ভালোবাসা নিয়ে এসেছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।

আমাদের পরিবারের কাঠামোটা একটু ভিন্ন এবং সুন্দর। আমরা ছোট মামার পরিবারের সাথে একই ছাদের নিচে অনেক বছর ধরে বসবাস করছি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কগুলো কেবল আত্মীয়তার বাঁধনে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং হয়ে উঠেছে আরও গভীর ও আত্মিক। এই সুবাদে মেহরাবের বেড়ে ওঠার প্রতিটি মুহূর্ত আমরা খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাচ্ছি। ওর জন্ম থেকে শুরু করে আজকের এই দুই বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি দিনই আমাদের জন্য নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সাক্ষী। তাই মেহরাবের জন্মদিনটা আমাদের সবার কাছেই ব্যক্তিগতভাবে ভীষণ আনন্দের ও গুরুত্বপূর্ণ। সে শুধু মামা-মামীর ছেলে নয়, সে আমাদের সবার আদরের ভাই, খেলার সাথী আর পুরো বাড়ির আনন্দের উৎস।

দ্বিতীয় জন্মদিনকে ঘিরে আমাদের বাড়িতে সকাল থেকেই একটা উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছিল। মেহরাব যদিও খুব ছোট, কিন্তু সে বাড়ির সাজসজ্জা আর সবার ব্যস্ততা দেখে ঠিকই বুঝতে পারছিল যে বিশেষ কিছু একটা হতে চলেছে। ওর চোখেমুখে ছিল এক ধরনের চাপা উত্তেজনা আর কৌতূহল। দিনের আলো থাকতে থাকতেই আমরা ওর জন্য আনা সুন্দর জন্মদিনের কেকটি প্রস্তুত করে ফেলি। সাদা ক্রিমের ওপর নানা রঙের স্প্রিংকেলস ছিটানো কেকটির দিকে তাকালেই মন ভালো হয়ে যাচ্ছিল। আর তার ঠিক মাঝখানে লাল ও সাদা রঙের পাইপিং দিয়ে লেখা '২' সংখ্যাটি যেন ওর ছোট্ট জীবনের রঙিন দু'টি বছরের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরছিল। নিচে কালো অক্ষরে লেখা "MEHRAB" নামটি ওর পরিচয়কে পূর্ণতা দিয়েছিল।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই আমাদের সিরাজগঞ্জ শহরে থাকা নিকটতম আত্মীয়-স্বজনেরা একে একে আসতে শুরু করেন। মামাতো বোনেরা, খালাতো ভাই-বোনেরা, খালা-খালু, এবং অন্যান্য মুরব্বিদের আগমনে আমাদের বাড়ি মুহূর্তেই এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। শিশুদের কলকাকলি আর বড়দের হাসিমাখা আলাপচারিতায় পুরো বাড়ি যেন আনন্দের রঙে রঙিন হয়ে ওঠে। আজকের এই যান্ত্রিক জীবনে, যেখানে সবাই নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে, সেখানে এই ধরনের পারিবারিক অনুষ্ঠানগুলো আমাদের সম্পর্কগুলোকে নতুন করে ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দেয়।

জন্মদিনের মূল আকর্ষণ ছিল কেক কাটার মুহূর্তটি। যখন মেহরাবকে কেকের সামনে আনা হলো, তখন ওর ছোট্ট চোখে যে বিস্ময় আর আনন্দ আমি দেখেছি, তা ভোলার মতো নয়। সবাই মিলে যখন একসঙ্গে "হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, মেহরাব" বলে সুর মেলালাম, তখন ওর খুশির ঝিলিক যেন পুরো ঘরের পরিবেশকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছিল। বাবার কোলে বসে সে ফুঁ দিয়ে মোমবাতি নেভানোর চেষ্টা করছিল, আর তার সেই নিষ্পাপ চেষ্টা দেখে আমরা সবাই হাততালি দিয়ে তাকে উৎসাহ দিচ্ছিলাম। কেক কাটার পর একে একে সবাই ওকে উপহারে ভরিয়ে দেয় আর ওর কচি গালে এঁকে দেয় স্নেহের চুম্বন। এই ছবিগুলোয় যেমন দেখা যাচ্ছে, বাবার কাঁধে চড়ে সে যেন গোটা দুনিয়াটাকেই জয় করে নিয়েছে। এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলোই আমাদের জীবনের অমূল্য সঞ্চয়।

দেখতে দেখতে দুটো বছর পার হয়ে গেল। এই তো সেদিনের কথা, যেদিন প্রথম ও আমাদের পরিবারে এসেছিল। একজন ক্ষুদ্র মানবশিশু থেকে আজ সে গুটি গুটি পায়ে সারা বাড়ি হেঁটে বেড়ায়। ওর আধো আধো বোল, ওর নিষ্পাপ হাসি, আর ওর ছোট্ট দুষ্টুমিগুলো আমাদের সারাদিনের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়। ওর সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তই আমাদের জন্য একরাশ স্মৃতি।

দিনশেষে, যখন উৎসবের আমেজ কমে আসে আর বাড়িটা শান্ত হয়ে যায়, তখন মনের গভীরে এক ধরনের প্রশান্তি কাজ করে। আজকের এই আনন্দঘন মুহূর্তগুলো ক্যামেরার ফ্রেমে এবং আমাদের মনের গভীরে চিরদিনের জন্য অমলিন হয়ে থাকবে। এই লেখাটির মাধ্যমে আমি শুধু আমাদের আনন্দটুকু ভাগ করে নিতে চাইনি, বরং আপনাদের সকলের কাছে আমাদের ছোট্ট মেহরাবের জন্য শুভকামনাও প্রার্থনা করতে চেয়েছি।

আপনারা সবাই আমাদের আদরের মেহরাবের জন্য দোয়া করবেন। সে যেন সুস্থ, সুন্দর এবং হাসিখুশিভাবে বেড়ে ওঠে। তার চলার পথ যেন মসৃণ হয় এবং সে যেন একজন ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। আল্লাহ তাকে দীর্ঘ ও সুন্দর একটি জীবন দান করুন, এই আমাদের একমাত্র প্রার্থনা।

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। _{আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।}