শৈশবের দুষ্টুমির ঘটনা আর একটু কষ্টের অনুভূতি।
কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।
শৈশবে কম বেশি সবাই প্রচুর দুষ্টু প্রকৃতির ছিল। আর এই দুষ্টুমি কিছু কিছু বাচ্চারা এমন করত যাতে মা-বাবার কষ্ট হতো আবার কিছু কিছু দুষ্টুমির কারণে মা বাবার তেমন কোন কষ্ট হতো না। আসলে সন্তান দুষ্টু হলে মা-বাবার বেশ ভালোই লাগে কিন্তু সেই দুষ্টুমি যদি মা-বাবার কষ্টের কারণ হয়ে ওঠে তবে মা বাবার যেমন সেই সময়ে কষ্ট হয় ভবিষ্যতে সেই কথা ভেবে বাচ্চারও অনেক বেশি কষ্ট হয়। অর্থাৎ বাচ্চা যখন বড় হয়ে যায় তখন সেই সব দিনের কথা ভাবলে একটা অন্যরকম অনুভূতি হয়। তেমনি আমারও শৈশবের একটি কথা প্রায়ই মনে পড়ে এবং মুখে একটা হাসি চলে আসে কিন্তু পরক্ষণে আবার অনেক বেশি কষ্ট হয় আমার মায়ের কষ্টের কথা ভেবে। আমি যখন অনেক বেশি ছোট ছিলাম তখন থেকেই আমার রাতে ঘুমানোর খাট ছিল আলাদা। ছোটবেলা থেকেই মা-বাবার থেকে আলাদা খাট বা বিছানায় আমি ঘুমাতাম। আমাকে রোজ রাতে মা ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে তারপর লাইট বন্ধ করে চলে যেত নিজের ঘরে ঘুমানোর জন্য। ঘরটা ছিল একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার। মানে একফোটাও বা এক বিন্দু আলো ছিল না ওই ঘরের মধ্যে, চোখ বন্ধ রাখা আর চোখ খোলা যেন আমার কাছে ছিল সমান ব্যাপার। চোখ খোলা থাকলেও আমার মনে হতো যে আমি যেন চোখ বন্ধ করেই রয়েছি কারন ঘরটা এত বেশি অন্ধকার থাকতো।
তখন যেহেতু ভীষণই ছোট ছিলাম তাই সেই অন্ধকারে আমার অনেক বেশি ভয় লাগতো। কোনো কোনোদিন রাতে যখন আমার টয়লেটে চাপ দিত তখন আমি ঘুম থেকে উঠে বিছানা থেকে নেমে এসে মাকে ডাকবো অথবা বাথরুমে গিয়ে টয়লেট করব সে ব্যাপারে আমার খুব একটা সাহস ছিল না। বর্তমানে অন্ধকারে ভয় না পেলেও ছোট থাকার কারণে তখন ছিল প্রচুর পরিমাণে অন্ধকারে ভয় এবং তার সাথে ভূতের ভয়। যার কারণে আমি খাট থেকে একটুও নামার সাহস যুগিয়ে উড়তে পারতাম না আর তার সাথে আমার মনে হতো আমি যদি মাকে ডাকি তবে মনে হয় মা ডাক না শুনলেও ভূতে আমার ডাক শুনতে পাবে এবং ভূতেই আমার কাছে আমার ডাক শুনে চলে আসবে। এমন ভয়ানক চিন্তা ভাবনার কারণে আমি কখনোই মাকে ডাকতে সাহস পেতাম না এবং নিজেও বিছানা থেকে নেমে টয়লেট করতে যেতে পারতাম না। আমি অনেক ছোট থাকার কারণে মা আমাকে কাঁথা গায়ের উপর দিয়ে বেশ ভালো করে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে যেত আর আমি ভয়ের কারণে আর তার সাথে অনেক বেশি চাপের কারণে ওই কাঁথার উপরেই টয়লেট করে দিতাম। তারপর আবার কথাটা সরিয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম।
সকালবেলা উঠে মা ভাবতো মনে হয় আমি ঘুমের মধ্যে বিছানাতেই টয়লেট করে দিয়েছি। সেটা ভেবে সকালবেলা উঠে কাথাটা ধুয়ে তারপর বাড়ির সব কাজকর্ম করে তারপর অফিসে যাওয়ার জন্য রওনা হতো। তখন ছোটবেলায় বুঝতাম না যে আমার ওই কর্মকাণ্ডের জন্য আমার মায়ের কতটা কষ্ট হতো, আমি তখন মায়ের কষ্ট দেখেছি নিজেই কিন্তু তখন আমার বোঝার ক্ষমতা ছিল না। তবে আমি যখন বড় হয়েছি সেই সব দিনের কথা মনে পড়লে এখন বুঝতে পারি যে মা অনেক বেশি হাঁপিয়ে উঠতো সব কিছু সামলাতে সামলাতে এছাড়াও বিভিন্ন মায়েদের কষ্টের কথা শুনেছি এবং নিজের চোখেও দেখেছি যে বাচ্চা সামনে তারপর অফিসে কাজ করতে কত বেশি কষ্ট হয় তখন আমারও আমার মায়ের জন্য অনেক বেশি কষ্ট হতো। আসলে যারা গৃহিণী তাদেরই একটা বাচ্চা সামলে সংসার সামলাতে অনেক বেশি কষ্ট হয়ে যায় সেখানে যেসব মায়েরা বাচ্চা সামলে সংসার সামলে তারপর আবার নিজের চাকরি সামলাতে হতো তাদের তো অনেক বেশি গুণে কষ্ট হতো। আর তার ওপর আবার আমি ছিলাম আমার মায়ের চার নম্বর মেয়ে। আমার দিদিদের কেউ আমার মার নিজের হাতেই সামলাতে হতো। কতটাই না কষ্ট করতো আমার মা আমাদের জন্য।
আসলে ছোটবেলায় ছিল সেটা দুষ্টুমি কিন্তু বড় হওয়ার পর থেকে এই সব ছোটবেলার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ব্যাপার নিয়ে এখন এতটাই দোষী মনে হয় নিজেকে যে মাঝেমধ্যে নিজের পরেই অনেক বেশি রাগ হয় যখন সেই সব দিনের কথা মনে পরে। আমার মা মারা গেছে বেশ কয়েক বছর হয়ে গেছে আর সবথেকে বেশি কষ্ট হয় এই ব্যাপারটা নিয়ে যে মা যদি বেঁচে থাকতো তাহলে হয়তো ক্ষমা চাইতে পারতাম কিন্তু বর্তমানে সেটাও একদমই অসম্ভব ব্যাপার। প্রতিনিয়ত নিজেকেই সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে থাকি যে তখন অনেক ছোট ছিলাম তাই অনেক বেশি দুষ্টুমি করতাম বা কিছু কিছু দুষ্টুমি এমনও হয়তো করেছি যার কারণে আমার মায়ের অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে কিন্তু সেগুলো আমি ছোট বলে নিজের অজান্তে এবং পরিস্থিতিতে করে ফেলেছি এটা আমার কোন দোষ নেই। তবুও মাঝেমধ্যে নিজেকে অনেক বেশি দোষী মনে হয়। তবে মাঝেমধ্যে এটা ভেবে অনেক বেশি শান্তি লাগে যে আমার মা যখন অসুস্থ ছিল তখন আমি তার সেবা যত্ন করার সৌভাগ্য পেয়েছি যে সৌভাগ্য হয়তো অনেক সন্তানই পায় না। শেষ বয়সে নিজের বাবা-মার পাশে থাকা এবং তাদের সেবা যত্ন করার সৌভাগ্য অনেক ভালো কপাল থাকলেই পাওয়া যায়।
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।
এটা ঠিক ছোটবেলায় অন্ধকারে অনেক ভয় লাগতো। আসলে ছোটবেলার স্মৃতিগুলো এখন অনেক বেশি মনে পড়ে। আপনার এই পোস্ট পড়ে অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছিল আপু।
https://x.com/pussmemecoin/status/1954126065582096735?t=3t_OT5kCc6NgF9IW3bNiLQ&s=19
https://x.com/PussFi_FNDN/status/1954135345555251676?t=CxIjwmD51fz8CnP76qmLdA&s=19