গোবরে পদ্ম ফুল||

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
❤️আসসালামুআলাইকুম/আদাব❤️

আমি @rahnumanurdisha বাংলাদেশ থেকে। কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগ এর সকল ইন্ডিয়ান এবং বাংলাদেশি বন্ধুরা?আশা করছি সকলেই অনেক ভালো আছেন?আমিও ভালো আছি আপনাদের দোয়ায়।ফিরে এলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি ব্লগ নিয়ে। আশা করছি আমার আজকের ব্লগটি আপনাদের ভালো লাগবে।


cap-2923682_1280.jpg

ছবির উৎস


আজকে আমি আপনাদের সাথে একটি বাস্তব ঘটনা শেয়ার করতে চলেছি বন্ধুরা।গোবরে পদ্ম ফুল হয় কথাটি আমরা লোকমুখে শুনেছি।আসলে এটা কি আসলেই হয় না না হয় সেটা সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই ।কারণ এখনো পদ্ম ফুলই আমি সামনে থেকে দেখিনি ছবিতে দেখেছি শুধু।তাই এটা বলতে পারি লোকমুখে কথাটার একটি বাস্তব প্রমাণ আমার স্বচক্ষে দেখা আছে।আজকে আমি সেই গল্পটি নিয়েই হাজির হয়েছি আপনাদের মাঝে।আমি তো আমার স্কুল জীবনে অনেক স্কুলেই পড়েছি।এক স্কুল থেকেই আমার মাধ্যমিক পাশ করার সৌভাগ্য টা হয়নি।তবে এতে আমার কোনো আফসোস নেই।আমি নতুন নতুন স্কুলে পড়েছি নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি।আরো নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি।এটা অনেকটা পজেটিভ ছিল আমার ক্ষেত্রে ।সবসময় পরিবর্তন নেগেটিভ প্রভাব ফেলেনা ।কিছুটা খারাপ লাগার সৃষ্টি হলেও জীবনে সুফল ডেকে আনতে পারে এই পরিবর্তন অনেক ক্ষেত্রেই।

তো বন্ধুরা চলুন আজকের মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।আজকের গল্পটি আমার এক বন্ধুকে কেন্দ্র করে।আমরা একই স্কুলে পড়ালেখা করেছি ।আমার এই স্কুলে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণী এই তিন বছর পড়ার সুযোগ হয়েছিল।আর এখানেই আমার মেধাবী বন্ধু পড়াশুনা করতো।আমার বন্ধুর নাম লিমন।আমাদের ক্লাসে প্রথম ছিল ও।একটা কথা বলতে হয় লিমন কিন্তু পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখায় অতোটা সিরিয়াস ছিলনা ।তখন হয়তো বুঝতো না যে পড়তে হবে।পঞ্চম শ্রেণীতে ওর কোনো মেধাবৃত্তি ছিলনা যতদূর শুনেছি।যখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয় তখন থেকেই পড়াশুনায় ভালো হয়ে ওঠে লিমন।একদম তার পর থেকেই ক্লাসের ফার্স্ট বয় ছিল ।বর্তমান ও বুয়েটে লেখাপড়া করছে।


আমার বন্ধুর পারিবারিক অবস্থা ভালো ছিলনা। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমাদের স্কুলে দশম শ্রেণীতে একবার এসএসসি ব্যাচ শিক্ষাসফরে নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিবার।তো আমাদের ব্যাচের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ২০১৫ এর দিকে।শিক্ষা সফরে যেতে হলে কিছু টাকা জমা দিতে হয় যেটা সকলেরই অবগত ।যেহেতু লিমনের পারিবারিক অবস্থা ভালো ছিলনা।তাই ও কাজ করে শিক্ষা সফরে যাওয়ার টাকাটা ম্যানেজ করেছিল।আন্টির মুখে শুনেছিলাম এটা।কিন্তু সেদিনই ওর একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল যাতে করে ওর পায়ের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়।বাইক এক্সিডেন্ট ছিল তো তাই অনেকটা খারাপ অবস্থা হয়েছিল।

তারপর আমরা যারা এক ব্যাচে পড়তাম সবাই ওকে দেখতে গিয়েছিলাম বাড়িতে।আর সেখানে গিয়েই ওর বাড়ির অবস্থাটা দেখতে পারি আরকি।একটা পাটকাঠির বেড়ার ঘর যেটা ওর ঘর ছিল।ওই ঘরটাতে ও পড়াশুনা করতো আর থাকতো।আর ওর পরিবারের লোকেরা যেখানে থাকতো সেখানে টিনের ঘর ছিল।গরম শীত সবসময় ওই বেড়ার ঘরটাতে থাকতো লিমন।


তারপর লিমনের অসুস্থতার কথা শুনে আমাদের শিক্ষা সফর বাদ দেওয়া হয়েছিল।সুস্থ হওয়ার পর আমরা শিক্ষা সফরে সবাই নড়াইল নিরিবিলি পার্কে গিয়েছিলাম স্কুল থেকে।এজন্যই বন্ধুরা আমার আজকের পোস্টের টাইটেল ছিল গোবরে পদ্ম ফুল।এরকম নিম্নমধ্যবিত্ত একটি পরিবার থেকে এরকম মেধাবী শিক্ষার্থী খুব একটা দেখা যায়না।আর দেখা গেলেও হঠাৎ যেমন একশ তে একটা।আমার বন্ধু যেমন।শুধুমাত্র ও পড়াশুনায় ভালো সেটা না ওর ব্যাবহার, চরিত্র সবকিছুতেই মানুষের ভালোবাসার পাত্র ছিল।যখন আমরা ওর বাড়িতে গিয়েছিলাম আমাদের এক বান্ধবী বলেছিল যে আমাদের এতো সুযোগ থাকতেও আমরা পড়ালেখা করিনা।মেধাবী তৈরি হয় নিজের প্রচেষ্টায়,যেটা স্বচক্ষে দেখা ছিল আমার।পরিবারের আর্থিক অবস্থা সাময়িক বাঁধার কারণ হতে পারে কিন্তু চেষ্টা মানুষকে সফলতার চূড়ায় নিয়ে যেতে পারে।


ধন্যবাদ সবাইকে আমার ব্লগটি পড়ার জন্য।আমার আজকের ব্লগটি কেমন লেগেছে কমেন্টে জানতে ভুলবেন না কিন্তু বন্ধুরা । আবার নতুন কোন ব্লগ নিয়ে খুব শীঘ্রই আপনাদের মাঝে উপস্থিত হবো। সেই পর্যন্ত সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।


❤️আমার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি❤️
আমি রাহনুমানূর দিশা।আমার জাতীয়তা বাংলাদেশী।আমি বর্তমান অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়াশুনা করছি।আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সাথে দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় থেকে যুক্ত রয়েছি।বাংলা ভাষায় লিখতে, পড়তে এবং নতুন নতুন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে আমার ভালো লাগে।এছাড়াও ফটোগ্রাফি এবং আর্ট করতে অনেক ভালো লাগে।অবসর সময়ে গান শুনতে এবং বাংলা নাটক দেখতে পছন্দ করি।


Amar_Bangla_Blog_logo.jpg

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

Posted using SteemPro Mobile

❤️আল্লাহ হাফেজ❤️

Sort:  
 2 years ago 

আপু গরীবের ঘরেই মেধাবী ছাত্রের খুঁজ মিলে এটাই সত্যি। কারণ তারা কষ্ট কি বুঝতে পারে তারজন্য নিজের চেষ্টাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু আমাদের মতো যাদের অবস্থা ভালো তারা একটু অলস প্রকৃতির থাকে। সবসময় দেখবেন যারা বিসিএস ক্যাডার হয় তাদের মধ্যে প্রায় ছাত্ররা গরীব বাবার সন্তান। যাই হোক আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আপনার সেই বন্ধু তার বাবার কষ্টের মূল্য বুঝতে পেরেছে বলেই সে গরীব হয়েও এত দূর আসতে পেরেছে।

 2 years ago 

ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

আসলে আপু বর্তমান দেখা যায় গোবরে পদ্মফুল ফোটে।আসলে আপু যারা চাওয়ার আগে সব কিছু পায় সেই সকল বাচ্চারা অনেক কমই ভালো হয়। তবে মেধাবী শিক্ষার্থীরা আর্থিক সংকটের জন্য কখনো পরে থাকে না। আর আপনার বন্ধু সফলতা দেখে অনেক ভালো লাগলো।ধন্যবাদ আপু পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

আসলেই দেখা যায় আপু ?ছবি তুলে রাখবেন কখনো দেখলে পরে দেখাবেন আমাদের।ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

গরিব কোন নিম্নবিত্ত পরিবারের কেউ অনেক মেধাবী হলে তাতে ভাব সম্প্রসারণে গোবরে পদ্ন ফুল বলে থাকে।আসলে মেধাবী গরিব পরিবারে বেশি দেখা যায়।তাদের মেধাটা কিন্তুু সত্যি ইশ্বর প্রদত্ত হয়ে থাকে।তবে অনেক নিম্নবিত্ত পরিবারের মেধাবীরা কিন্তু মাঝ পথেই ঝড়ে পড়ে।আবার যারা নানান ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারে তারাই তাদের লক্ষ পুরন করতে সক্ষম হয়ে থাকে।

 2 years ago 

জি আপু একদম,ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago 

আপনার পুরো পোস্ট করে আমার অনেক বেশি ভালো লাগলো, এবং আপনি যে কথাটা বললেন পরিবারের আর্থিক অবস্থা সাময়িক বাঁধার কারণ হতে পারে কিন্তু চেষ্টা মানুষকে সফলতার চূড়ায় নিয়ে যেতে পারে। এই কথাটা আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লেগেছে আসলে এই কথাটা সত্য এবং বাস্তব। মানুষ কখন কি হয়ে যেতে পারে সেটা কেউ বলতে পারেনা খারাপ স্টুডেন্ট একটা সময় গিয়ে অনেক ভালো করতে পারে ঠিক তেমনি ভাবে একজন ভালো স্টুডেন্ট নিমিষেই খারাপ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু চেষ্টা যদি প্রতিনিয়ত করা যায় তাহলে যে কোন কিছু অর্জন করা সম্ভব। বন্ধু জন্য শিক্ষা সফর বাতিল করে আবার যখন সে সুস্থ হয়েছে তাকে নিয়ে শিক্ষা করে গিয়েছেন এটা জেনে সবথেকে বেশি ভালো লেগেছে এটাই হল সত্যিকারের বন্ধুত্বের পরিচয়। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 2 years ago 

আপনার মন্তব্যটা আমার অনেক ভালো লেগেছে। ধৈর্য্য নিয়ে পোস্টটি পড়ে উৎসাহমূলক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে।