বন্ধুদের সাথে নদীর পাড়ে গিয়ে বঁড়শি দিয়ে মাছ ধরা গল্প

in আমার বাংলা ব্লগ4 days ago

আসসালামু আলাইকুম/🌺

হ্যা লো বন্ধুরা,কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সকলেই সুস্থ আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় খুব ভাল আছি। আমি @rayhan111 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগ থেকে।


friend-589830_1280 (1).jpg

source

বন্ধুদের সাথে নদীর পাড়ে গিয়ে বঁড়শি দিয়ে মাছ ধরা সবসময়ই আমার কাছে এক বিশেষ অভিজ্ঞতা। গ্রামের ছোট নদীটির পাশে বসে মাছ ধরার সেই মুহূর্তগুলো যেন জীবনের এক অন্যরকম আনন্দ হয়ে থাকে। সেদিন ভোরবেলা আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ঠিক করেছিলাম যে দুপুরের খাবারের জন্য নিজেরাই মাছ ধরব। হাতে বঁড়শি, ছোট টোপ, আর প্রচণ্ড উৎসাহ নিয়ে আমরা নদীর পাড়ের দিকে হাঁটা দিলাম। চারপাশে তখন সকালের স্নিগ্ধ পরিবেশ, হালকা কুয়াশা ভেসে বেড়াচ্ছে আর নদীর জলে সূর্যের আলো ঝিলমিল করছে।

নদীর ধারে গিয়ে সবার প্রথম কাজ হলো জায়গা ঠিক করা। আমরা এমন এক বাঁকের ধারে বসলাম যেখানে পানির গভীরতা একটু বেশি এবং গাছের ছায়ায় ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। বঁড়শিতে টোপ গেঁথে যখন প্রথমবার জলে ফেললাম, তখনই মনে হলো,এই তো শুরু হয়ে গেল এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ। বন্ধুরা সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছি, কেউ গল্প বলছে, কেউবা চুপচাপ পানির দিকে তাকিয়ে মাছের অপেক্ষায়।

প্রথমে কিছুক্ষণ কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। আমরা হালকা হতাশ হয়ে ভাবলাম হয়তো আজ মাছ ধরা হবে না। ঠিক তখনই হঠাৎ এক বন্ধুর বঁড়শি কেঁপে উঠল। সে উত্তেজনায় চিৎকার করে উঠল, পেয়েছি! পেয়েছি!সবাই দৌড়ে গিয়ে তাকে সাহায্য করলাম। জলের ভেতর থেকে টেনে তোলা হলো এক মাঝারি সাইজের কাতলা মাছ। বন্ধুর হাসি আর আনন্দ দেখে আমাদেরও চোখে মুখে খুশির ঝিলিক ছড়িয়ে পড়ল।

এরপর ধীরে ধীরে একে একে সবাই মাছ ধরতে শুরু করলাম। কেউ রুই পেল, কেউ ছোট ট্যাঙ্গরা, আবার কেউবা শুধু খালি বঁড়শি তুলল। মজার বিষয় হলো, যখন কেউ মাছ ধরতে ব্যর্থ হচ্ছিল, অন্যরা তাকে খেপাতাম আর হাসাহাসি করতাম। সেই হাসি-মজা নদীর নিস্তব্ধতাকে ভেঙে দিয়ে মুহূর্তটাকে করে তুলছিল আরো প্রাণবন্ত।

মাঝে মাঝে আমরা বঁড়শি রেখে নদীর জলে পা ডুবিয়ে বসতাম। ঠাণ্ডা পানির স্পর্শে ক্লান্তি দূর হয়ে যেত। চারপাশে শুধু প্রকৃতির সুর,পাখির ডাক, বাতাসের শব্দ আর মাঝে মাঝে মাছের জলে লাফানোর ছিটকে পড়া শব্দ। মনে হচ্ছিল আমরা যেন পৃথিবীর সব চিন্তা-ভাবনা ভুলে গিয়ে এক ভিন্ন জগতে চলে এসেছি।

দুপুরের দিকে আমরা মোটামুটি অনেকগুলো মাছ ধরতে সক্ষম হলাম। ঝুড়িতে মাছ ভরে নদীর পাড়েই একটি ছোট আগুন জ্বালালাম। একজন কাঠি দিয়ে আগুন সামলাচ্ছিল, আরেকজন মাছ পরিষ্কার করছিল। এরপর সোজাসাপ্টা গ্রামীণ ধাঁচে আমরা সেদিন নদীর পাড়ে মাছ ভেজে খেলাম। ধোঁয়া ওঠা ভাজা মাছ আর সঙ্গে গরম ভাতের স্বাদ আজও জিভে লেগে আছে।

সবচেয়ে বড় আনন্দ ছিল একসাথে কাটানো সময়। হয়তো মাছ ধরা আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, কিন্তু আসল আনন্দ লুকিয়ে ছিল একে অপরের সাথে সেই নির্ভেজাল মুহূর্তগুলো ভাগাভাগি করার মধ্যে। নদীর পাশে বসে বন্ধুত্ব, হাসি, মজা আর প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়া,এমন অভিজ্ঞতা জীবনে খুব কমই পাওয়া যায়।

দিনের শেষে যখন সূর্য ডুবছিল, আমরা ঝুড়ি ভর্তি মাছ আর হৃদয়ভর্তি স্মৃতি নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হলাম। আকাশের লাল আভা নদীর জলে প্রতিফলিত হচ্ছিল, যেন সেদিনের আনন্দময় মুহূর্তগুলোর সাক্ষী হয়ে রইল। বন্ধুর সাথে নদীর পাড়ে বঁড়শি দিয়ে মাছ ধরা শুধু একটি দিনের অভিজ্ঞতা নয়, বরং স্মৃতির ভাণ্ডারে জমা থাকা এক অমূল্য রত্ন, যা আমাদের বন্ধুত্বকে আরো গভীর ও মধুর করে তুলেছে।



আমার পরিচয়

IMG_20211018_182622.jpg

আমার নাম মোঃ রায়হান রেজা।আমি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে সিরাজগঞ্জ জেলায় বসবাস করি। আমি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমি আমার জন্মভূমিকে খুবই ভালোবাসি। আমি পেশায় একজন সহকারী মেডিকেল অফিসার ।আমি সর্বদাই গরীব-দুঃখীদের সেবায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমি ফটোগ্রাফি করতে খুব ভালোবাসি এবং নতুন সৃজনশীলতার মাধ্যমে কিছু তৈরি করতে আমার খুবই ভালো লাগে।এই ছিল আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়, আপনারা সবাই আমার পাশে থেকে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে উৎসাহিত করবেন, ধন্যবাদ সবাইকে🌹💖🌹।

Amar_Bangla_Blog_logo_png.png

👉 বিশেষভাবে ধন্যবাদ সকল বন্ধুদের যারা এই পোস্টকে সমর্থন করছেন🌺🌹🌺