নড়াইল ভ্রমণ পর্ব-৫
আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন। ইতিমধ্যে আপনাদের মাঝে আমি আমার নড়াইল ভ্রমণের প্রথম থেকে চতুর্থ পর্ব শেয়ার করেছি। আজ চলে এসেছি পঞ্চম পর্ব শেয়ার করতে। আশা করি আপনাদের কাছে প্রথম থেকে চতুর্থ পর্বটি খুবই ভালো লেগেছে। তাহলে দেরি না করে। চলুন শুরু করা যাক পঞ্চম পর্বের গল্প।
নড়াইল মানেই আমার কাছে এক অন্যরকম ভালো লাগার জায়গা। শহরের কোলাহল পেরিয়ে যখন গ্রামের মাটির গন্ধে ভেজা বাতাস মুখে লাগে মনে হয় পৃথিবীর সব ক্লান্তি যেন মুছে যায়। উদ্দেশ্য ছিল দুলাভাইয়ের মাছের হ্যাচারিতে সময় কাটানো যাকে আমাদের এলাকায় সবাই ভাষায় যাকে বলে ঘের। এই ঘেরটা আমি আগে দেখেছিলাম কিন্তু এবার গিয়ে দেখি পুরো প্রজেক্টটাই যেন নতুন করে প্রাণ পেয়েছে। অনেক বড় জায়গাজুড়ে চলছে পুকুর খননের কাজ নতুন ঘর তৈরি হচ্ছে গরু পালনের জন্য আর চারপাশে ছড়িয়ে আছে ঘেরের নিস্তব্ধ সৌন্দর্য। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা দুই বন্ধু মিলে ঘুরে দেখলাম পুরো হ্যাচারিটা আর প্রতিটি মুহূর্ত ছিল সত্যিই উপভোগ্য। বিকেলের আলো তখন হালকা সোনালি। হালকা কুয়াশা গায়ে মেখে আমরা দুইজন বাইক নিয়ে রওনা দিলাম ঘেরের দিকে। পথটা খুব চেনা হলেও প্রতিবারই নতুন লাগে। রাস্তার পাশে কলাগাছ আর মাঝে মাঝে পুকুরের পানি ঝিকমিক করে ওঠে সূর্যের আলোয়। ঘেরের কাছাকাছি পৌঁছাতেই দূর থেকে দেখা গেল খননযন্ত্র ব্যস্তভাবে মাটি কাটছে।চারপাশে শ্রমিকদের ব্যস্ততা কেউ আবার পুকুরের পাশে নতুন ঘর তুলছে। এত বড় একটি প্রজেক্টের কাজ এত সুন্দরভাবে এগোচ্ছে দেখে সত্যিই ভালো লাগল। নতুন রূপে মাছের হ্যাচারি। দুলাভাইয়ের এই হ্যাচারিটি এখন পুরোপুরি আধুনিকভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। আগে যেখানে দুই-তিনটি ছোট পুকুরে চাষ হতো এখন সেখানে একের পর এক বড় পুকুর খনন করা হচ্ছে। প্রতিটি পুকুরে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির মাছ রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, সিলভার কার্প চাষের প্রস্তুতি চলছে। পুকুরের চারপাশে বাঁশ ও টিন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ছোট ছোট ঘর যেখানে মাছের খাদ্য, ওষুধ এবং যন্ত্রপাতি রাখা হয়। কিছু জায়গায় আবার দেখা গেল মাছের পোনা রাখার জন্য ছোট চৌবাচ্চা বানানো হচ্ছে। সবচেয়ে ভালো লাগল জায়গাটার পরিপাটি পরিচ্ছন্নতা। কর্মীরা নিয়মিত ঘেরের পানি পরীক্ষা করে মাছের খাদ্য মাপজোখ করে দেয় এমনকি প্রতিটি পুকুরে আলাদা দায়িত্ব আছে। দুলাভাই নিজেই প্রায় প্রতিদিন এসে সবকিছু দেখাশোনা করেন।
ঘেরের একপাশে রয়েছে গরুর খামার। টিনের ছাউনি বাঁশের বেড়া আর মাটির মেঝে। এখানেই দেখা মিলল কয়েকটা দেশি জাতের গরুর বেশ সুস্থ ও পরিচ্ছন্নভাবে রাখা হয়েছে। দুলাভাই বললেন আমরা শুধু মাছ নয় গরুও পালি। এতে ঘেরের কাজের সঙ্গে গোবর ব্যবহার করে পুকুরের সার তৈরি হয় আর একে অপরের কাজে লাগে। এটা সত্যিই টেকসই কৃষি পদ্ধতির দারুণ উদাহরণ। এখন আরও কয়েকটা নতুন গরুর ঘর তৈরি হচ্ছে। কাঠ ও টিন দিয়ে নতুনভাবে নির্মাণের কাজ চলছে যা শেষ হলে উৎপাদন আরও বাড়বে। ঘেরের কাজ ঘুরে দেখার পর আমরা একটু হাঁটতে বের হলাম পুকুরের পাড় ধরে। সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। হালকা মেঘের ফাঁক দিয়ে সূর্যের শেষ আলো যখন পানিতে পড়ছিল পুরো পরিবেশটা যেন সোনালি রঙে ঝলমল করছিল। পুকুরের পাশে বসে দেখলাম পানির ওপর হালকা ঢেউ গাছের ছায়া আর আকাশের প্রতিচ্ছবি একাকার হয়ে গেছে। এই দৃশ্যের মধ্যে একধরনের শান্তি আছে যা শহরে কোনোদিন পাওয়া যায় না। এটাই ছিল আমার নড়াইল ভ্রমণের পঞ্চম পর্বের গল্প। আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। তাহলে দেখা হবে আবার নড়াইল ভ্রমণের ষষ্ঠ পর্বে। তাহলে আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনাই রইল।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

নরাইলে আপনি সম্পূর্ণ প্রকৃতিক পরিবেশে ঘুরাফেরা করেছেন। আপনার দুলাভাই হ্যাচারি গুলো দেখলাম বিশাল বড় বড়। মনে হচ্ছে এই ব্যবসায় তিনি ভালো ভাবেই মননিবেশ করেছে। আর যে কোন কাজে সফলতা পেতে হলে এটা জরুরি।
নড়াইল ভ্রমনের সুন্দর অনুভূতি গুলো আপনি খুব সুন্দর ভাবে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।মাছের ঘের গুলো দেখে খুব ভালো লাগলো।সুন্দর প্রকৃতির মাঝে সময় কাটিয়ে আপনার মন ফুরফুরে হয়ে গেছে আশাকরি।এমন পরিবেশে গেলে মন এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।