বর্ষা-
নববর্ষার শীতল স্পর্শে ' ধরণীকে শান্ত, শীতল ও শুদ্ধ করতে বর্ষা আসে।তাইতো মেঘলা আকাশ ও গুড়িগুড়ি বৃষ্টি নিয়ে বাঙ্গালির দোয়ারে কড়া দিয়ে জানিয়ে দিল বর্ষার আগমন। বাংলা সনের তৃতীয় মাস আষাঢ় হলেও আমাদের প্রতিবেশী দেশের চতুর্থ মাস হল আষাঢ়। এটি বর্ষা মৌসুমের ঋতুর অন্তর্ভুক্ত আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের প্রথম মাস। বাংলাদেশের এর দিনের সংখ্যা ৩১ দিন হলেও ভারতে রাষ্ট্রিয় হিসেবে বাংলার সাথে ৩১/৩২ দিনের পার্থক্য হয়ে থাকে।
গ্রীষ্মের ধূলিমাখা জীর্ণতাকে ধুয়ে মুছে সাফ করে বাংলার প্রকৃতি সাজে নতুন পূর্ণতায়। চারিদিকে থৈথৈ পানি আকাশে মেঘের ঘনঘটা ও গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে রাখালের চরানো গরু -ছাগলের দৌড়ানি যেন এ বছর চালান দিচ্ছে বর্ষার আগমন।
এ সময় বাংলার প্রকৃতি নতুন রূপে সেজে ওঠে। বর্ষায় সতেজ বাতাসে ফোটে জুঁই,কামিনী, কদম,বেলী,দোলনচাঁপা আরও কত কি ফুলের সমারোহ চারিদিকে।
গ্রামগঞ্জের নদী-নালা,খাল-বিল পানিতে ভরে ওঠে।
শহরের মানুষদের জন্য বর্ষা বিলাস হয়ে আসলেও কখনো কখনো গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য বর্ষা অভিশাপ হয়ে আসে গ্রামের নিম্নাঞ্চল একটানা মুষলধারে বৃষ্টির কারণে প্লাবিত হয়।যাতায়াত ও বসবাসের স্থানে পানি প্রবেশের কারণে গ্রামীণ জীবনযাপনের দূর্ভোগের সৃষ্টি হয়। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিশেষ করে কাঁচা তরকারির দাম বেড়ে যাই।এ সময় গবাদি পশু খাদ্য ও নিরাপদ আশ্রয়ের ঘাটতি দেখা দেয়।
বর্ষা যেমন একদিকে মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয় দাড়ায় ঠিক তেমনই উল্টো নতুন নতুন জীবীকার সন্ধান দেয়।এই ধরুন নদী- নালা, খাল- বিলে মাছ ধরার ধুম পড়ে যাই।বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে পুরোনো ছাতা সেলাই ও গ্রামীণ মানুষের নানা ধরনের হস্তশিল্প যেমন: কাঁথা সেলাই,রশি বাঁধানো, মাদুর বোনা ইত্যাদি কাজ করেন।
রবি ঠাকুর বলেছিলেন,
এই আসে ওই অতি ভৈরব হরষে,
জলসিভিক্ষত ক্ষিতিসৌরভরবসে।
গুড়িগুড়ি বৃষ্টির ফোঁটা
ফুটন্ত শাপলা, পদ্মার খাল- বিল, পুকুরের পানির মাঝে তৈরি করে এক ধরনের বুদবুদ।যা আষাঢ় মাসের বর্ষার আগমনের বার্তার জানান দেয়। আর এই বৃষ্টিতেই গ্রীষ্মকালের মৌসুমি বায়ু ভারত মহাসাগর উপর দিয়ে প্রভাবিত হয় এবং প্রচুর পরিমাণ জলীয়বাষ্প নিয়ে উত্তর - পূর্বে হিমালয়ের গায়ে বাধাগ্রস্ত হয়ে তা এই বাংলায় বর্ষণ করে। আর এই বর্ষণের মাধ্যমে বাংলার প্রকৃতি জেগে ওঠে আপন মনে।
এসময় কৃষক আমনের বীজতলা তৈরীর জন্য উপযুক্ত বীজতলা নির্বাচন করেন। এবং বর্ষার মৌসুমি শাকসব্জী উৎপাদন করে থাকেন।বর্ষার মৌসুম বৃক্ষ রোপনের জন্য উপযুক্ত সময়।
বেশীরভাগ বাঙ্গালির ছেলেবেলার আবেগ বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলা সারারাত টিনের চালের ঝুম বৃষ্টির শব্দ যেন সবই স্মৃতির পাতায় গাঁথা। বর্ষার শীতল বাতাসে খিচুড়ি আর পুটিমাছ ভাজির যেন জুরি নেই।এসময় গৃহিণীরা শিশুদের নিয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেন। বিশেষ করে সাপ, পোকামাকড় ও পানির হাত থেকে দূরে রাখার জন্য।
প্রকৃতি ও মানুষের জীবন-যাপনের বর্ষার মেলবন্ধন নিয়ে আমাদের এই আজকের পৃথিবীর।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

প্রকৃতির নান্দনিকতা গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট আর বর্ষায় নতুন জীবিকার সম্ভাবনা সব মিলিয়ে দারুন লিখেছেন ভাই। বর্ষার মৌসুম নিয়ে চমৎকার কথা গুলো তুলে ধরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
0.00 SBD,
0.62 STEEM,
0.62 SP
@rex-sumon, আপনার বর্ষা বিষয়ক পোস্টটি পড়ে মুগ্ধ হলাম! বর্ষার আগমন এবং এর সাথে জড়িয়ে থাকা বাংলার প্রকৃতির রূপ আপনি খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। গ্রীষ্মের রুক্ষতা ধুয়ে দিয়ে বর্ষা কিভাবে নতুন জীবনের স্পন্দন নিয়ে আসে, তা চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন।
গ্রামের মানুষের জীবনে বর্ষার আনন্দ ও কষ্টের যে বাস্তব চিত্র আপনি দেখিয়েছেন, তা হৃদয় ছুঁয়ে যায়। একদিকে যেমন ফুল আর নদীর কলতান, অন্যদিকে খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ – এই বৈপরীত্য আপনার লেখাকে আরও শক্তিশালী করেছে।
রবি ঠাকুরের কবিতার উদ্ধৃতি এবং ছোটবেলার স্মৃতিচারণ আপনার পোস্টটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে। সব মিলিয়ে, বর্ষার অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলার জন্য এটি একটি অসাধারণ কাজ।
বর্ষা নিয়ে আপনার অনুভূতি কেমন, অন্য পাঠকদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার এলাকার বর্ষার বিশেষ কোনো স্মৃতি থাকলে, সেটিও জানাতে পারেন। আসুন, সবাই মিলে বর্ষার এই রূপকথাকে উদযাপন করি!