ভ্রমণ পোস্ট: জাফলং পিয়াইন নদীর মধ্যে গোসল করার কিছু দারুন মুহূর্ত
আমি @riyadx2 বাংলাদেশ থেকে
বৃহস্পতিবার, ১২ ই জুন ২০২৫ ইং
জাফলং নামটা শুনলেই মনে পড়ে যায় স্বচ্ছ পানির নদী, পাথরে ভরা তীর, মেঘে ঢাকা পাহাড় আর একরাশ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত এই ছোট্ট স্বর্গের খোঁজ পেয়ে আমরা কয়েকজন বন্ধু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, একদিনের জন্য হলেও প্রকৃতির কোলে একটু হারিয়ে যাব। উদ্দেশ্য ছিল একটাই ভ্রমণ নয়, নিজেকে প্রকৃতির মাঝে নতুন করে খুঁজে পাওয়া।রাতের ট্রেনে চেপে সিলেট পৌঁছেছিলাম ভোরের আলো ফোটার একটু আগেই। শহরের কোলাহল থেকে একটু দূরে, নির্জন শান্ত পরিবেশে একটা মাইক্রোবাস ঠিক করা ছিল।
ঘুমজড়ানো চোখে রাস্তার পাশে যতদূর চোখ যায়, শুধু চা বাগান আর সবুজ টিলা। খাসিয়াদের ঝুপড়িঘর, মাঝে মাঝে মেঘে ঢাকা ছোট পাহাড়, সব কিছু মিলে মনে হচ্ছিল যেন কোনো কবিতার মধ্যে প্রবেশ করছি। জাফলংয়ের দিকে যাত্রার প্রতিটি মুহূর্তই ছিল একেকটা চমক।জাফলং পৌঁছে চোখে পড়ল স্বচ্ছ জলের মধ্যে পাথর সংগ্রহে ব্যস্ত মানুষেরা। নদীর তীরজুড়ে ছোট ছোট নৌকা, আর তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পর্যটকদের কোলাহল। তবে আমাদের লক্ষ্য ছিল একটিই নদীতে ঝাঁপ দেওয়া , সেই স্বপ্নের মুহূর্ত কিছুটা দেরিতেই এলো, কারণ প্রথমেই সবাই মেতে উঠেছিল চারপাশে ছবি তোলায়। কাঁচের মতো স্বচ্ছ পানি, নিচে পাথরগুলো এমনভাবে দেখা যাচ্ছিল যেন জলের চেয়ে বাতাসে ভাসছে।
জুতো খুলে, হাত-পা গুটিয়ে নদীতে নামতেই হিম শীতল পানির শিহরণ পুরো শরীর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল। প্রথমে একটু ধাক্কা লাগলেও কয়েক মিনিট পরেই সেই ঠান্ডা পানিই হয়ে উঠল সবচেয়ে আরামদায়ক ব্যাপার। আমরা নদীর মাঝখানে পাথরের উপর বসে গল্প করছি, কেউ কেউ পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে একে অপরের গায়ে, কেউ আবার সোজা ডুব দিয়ে মাথা বের করে হেসে উঠছে। এক বন্ধু হঠাৎ পা পিছলে পড়ে গেল, আর আমরা সবাই হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছি সে মুহূর্তে কোনো কিছুই কৃত্রিম মনে হয়নি, সবই ছিল একেবারে প্রাণের মতন।গোসলের সময়টুকু যেন আর শেষ হতেই চাচ্ছিল না।
পাহাড় ঘেরা পরিবেশ, খোলা আকাশের নিচে, চারপাশে পাহাড়ি বাতাস আর পাখির ডাক মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে শান্ত জায়গায় আছি। সময় যেন থেমে গিয়েছিল, আর আমরা ছিলাম ঠিক তার মাঝখানে।গোসল শেষে কাপড়ে জড়ানো ভেজা শরীর নিয়ে একটু বসেছিলাম নদীর ধারে। সেখান থেকে দেখা যাচ্ছিল মেঘলা আকাশের নিচে ভারতের পাহাড়ি অংশ, আর মাঝে গারো পাহাড়ের রেখা। দূরের একটি খাসিয়াপল্লি থেকে হালকা ধোঁয়া উঠছিল, মনে হচ্ছিল জীবনের এক অন্যরকম অধ্যায়ে ঢুকে পড়েছি।আমরা তখন আর কেবল ভ্রমণকারী ছিলাম না প্রকৃতির অংশ হয়ে গিয়েছিলাম।
শহরের ব্যস্ততা, ক্লান্তি, মানসিক চাপ সব যেন নদীর পানিতে ধুয়ে গিয়ে কোথাও হারিয়ে গিয়েছিল। শুধু থেকে গিয়েছিল একটা তৃপ্তির হাসি, বুকভরা নিঃশ্বাস আর কিছু ভালোবাসার মানুষ, যাদের সঙ্গে শেয়ার করা যায় এমন এক বিশেষ মুহূর্ত।জাফলং আমাদের শুধু স্বচ্ছ নদী বা পাথর দেখায়নি, দেখিয়েছে জীবনের স্বচ্ছতা কীভাবে অনুভব করতে হয়। গোসলের সেই মুহূর্তগুলো আজও মনে পড়ে, যখন মাথার উপরে ছিল মেঘ, সামনে ছিল পাহাড়, আর হৃদয়ের ভেতর শুধু আনন্দের কলকল ধ্বনি।
জাফলং একবার নয়, বারবার ডাকবে। শুধু বেড়াতে নয়, নিজেকে নতুন করে ফিরে পেতে। সেই ডাক উপেক্ষা করার মতো শক্তি আমাদের আর নেই।
সবাই কে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Device | iPhone 11 |
---|---|
Camera | 11+11 MP |
County | Bangladesh |
Location | Rangpur, Bangladesh |
Vote@bangla.witness as witness
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Daily task
Link
https://x.com/Riyadx2P/status/1933117183166689491?t=KYXOMEcZbUORQliOo_RnsA&s=19
https://x.com/Riyadx2P/status/1933116346545647836?t=KYXOMEcZbUORQliOo_RnsA&s=19
https://x.com/Riyadx2P/status/1933116515165102574?t=KYXOMEcZbUORQliOo_RnsA&s=19
https://x.com/Riyadx2P/status/1933116916941668800?t=KYXOMEcZbUORQliOo_RnsA&s=19
Screenshot
আপনি শুধু ঘুরে আসেননি প্রকৃতির সাথে এক হয়ে ফিরে এসেছেন।আপনার লেখার প্রতিটি লাইনে যেন নদীর জল টলমল করছে, পাথরের ঘর্ষণে হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এমন করে স্মৃতি বলার ভঙ্গি খুব কম মানুষের মধ্যে থাকে। ছবিগুলো আর লেখা একসাথে যেন একটা পূর্ণ গল্প ,কোনো সিনেমার দৃশ্যের মতো।জাফলং তো বরাবরই সুন্দর, কিন্তু আপনার চোখ দিয়ে দেখাটা ছিল একেবারে অন্যরকম অভিজ্ঞতা। পোস্টটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
সিলেট ভ্রমণের অনেকগুলো সুন্দর সুন্দর পর্ব আমাদের কমিউনিটির অনেকের কাছ থেকে দেখে থাকি৷ আজকেও আপনার কাছ থেকে এত সুন্দর একটি ভ্রমণের পর্ব দেখে খুব ভালই লাগছে। এখানে আপনি এত সুন্দর একটি স্থানে গোসল করার মুহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন দেখে খুব ভালই লাগছে৷ একই সাথে এখানে খুব সুন্দর ফটোগ্রাফিও শেয়ার করেছেন৷ অনেক ভালো লাগলো আপনার কাছ থেকে এত সুন্দর একটি পোস্ট দেখে৷ অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে৷