স্মৃতিচারণ: শৈশবে পাড়ার ছেলেদের সাথে শারদীয় দুর্গাপূজা দেখতে যাওয়ার স্মৃতিচারণ।
আমি @riyadx2 বাংলাদেশ থেকে
সোমবার, ২৯ ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ ইং
শৈশবের দিনগুলো এখনো মনে হলে বুকের ভেতর এক অদ্ভুত উষ্ণতা ছড়িয়ে যায়। আমি মুসলিম পরিবারে জন্মালেও পাড়ার দুর্গাপূজা যেন ছিল আমাদের সবার জন্য আনন্দের আরেক নাম। শরতের আকাশ যখন নীল হয়ে উঠত, বাতাসে হালকা ঠান্ডা আমেজ নামত, তখনই বুঝে যেতাম পূজোর দিন চলে এসেছে। ছোট্ট আমি আর আমার সমবয়সী ছেলেরা সারাদিন অপেক্ষা করতাম কবে সন্ধ্যা নামবে, কবে আমরা সবাই একসাথে বের হবো পূজা মণ্ডপ দেখতে।
নতুন জামা পরে, হাতে সামান্য টাকা নিয়েই বের হতাম আমরা। কারো হাতে দু’টাকা, কারো হাতে পাঁচটাকা কিন্তু সেই টাকাতেই ছিল আনন্দের ভাণ্ডার। প্রতিমার সামনে দাঁড়িয়ে চোখ বড় বড় করে দেবী দুর্গাকে দেখা, মণ্ডপের সাজসজ্জায় মুগ্ধ হওয়া, তারপর হঠাৎ করেই বন্ধুদের সাথে হৈচৈ শুরু করা এসব মুহূর্ত যেন মনে হতো অন্য রকম কোনো জগতে প্রবেশ করেছি.আমরা মুসলিম হয়েও কখনো কোনো ভেদাভেদ অনুভব করিনি।
বরং মনে হয়েছে, এই উৎসব আমাদেরও, এই আনন্দ আমাদেরও। পাড়ার হিন্দু বন্ধুদের সাথে একসাথে নাগরদোলায় চড়া, প্রসাদ পাওয়ার জন্য ঠেলাঠেলি করা, আবার রাতে আলো ঝলমলে নাটক দেখতে ভিড় ঠেলে দাঁড়ানো এসবই ছিল শৈশবের নির্ভেজাল সুখ। মায়ের বকুনি খেয়েও আমরা ছুটে যেতাম, কারণ পূজার সেই আনন্দ এড়ানো সম্ভব ছিল না।সবচেয়ে মনে পড়ে প্রসাদের মিষ্টির কথা।
ছোট ছোট পাতায় যখন মিষ্টি আর খিচুড়ি দেওয়া হতো, তখন আমরা দল বেঁধে হেসে খেয়ে তা শেষ করতাম। কোনো দিন কারো ভাগে বেশি এলো বলে হইচই, আবার পরক্ষণেই সেই হাসিতে মিলেমিশে যাওয়া এসব দৃশ্য এখনো চোখের সামনে ভাসে।আজ বড় হয়ে গেছি, পূজার আয়োজন আগের চেয়ে অনেক বেশি জাঁকজমকপূর্ণ হয়েছে। কিন্তু সেই শৈশবের সরল আনন্দ আর মেলে না।
তখনকার মতো এখন আর মণ্ডপে দাঁড়িয়ে মনে হয় না পুরো পৃথিবীর আনন্দ এক জায়গায় জমে উঠেছে। সেই স্মৃতিগুলো আজ শুধু মনে বাজে, যেন মিষ্টি কোনো গানের সুর। ধর্মের ভিন্নতা থাকলেও সেই দিনগুলোতে আমাদের সবার হৃদয় ছিল এক, আনন্দ ছিল ভাগাভাগি করা। আর এটাই শৈশবের সবচেয়ে মূল্যবান শিক্ষা ভালোবাসা আর ভ্রাতৃত্বই মানুষকে সত্যিকারের উৎসবে বেঁধে রাখে।
Device | iPhone 11 |
---|---|
Camera | 11+11 MP |
County | Bangladesh |
Location | Rangpur, Bangladesh |
Vote@bangla.witness as witness