চলছে অনলাইন জুয়া, নিঃস্ব হচ্ছেন তরুণ তরুণীরা
আমি @riyadx2 বাংলাদেশ থেকে
শনিবার, ১৯ ই জুলাই ২০২৫ ইং
নতুন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, তেমনি এর কিছু দিক আমাদের ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এমনই এক ভয়ংকর দিক হলো অনলাইন জুয়া। দিনের পর দিন এর বিস্তার অনেক বেশি ভয়ানক আকার ধারণ করছে ।তরুণদের জন্য এই অনলাইন জুয়া যেন এক ডিজিটাল নেশা। মোবাইল স্ক্রিনে চোখ রেখে বেটিং করা, স্পিনঘোরানো কিংবা ক্যাসিনো গেম খেলা এসব এখন কেবল গেম নয়, এক ধরনের মানসিক নির্ভরশীলতা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি আর মজার জায়গায় থাকে না, হয়ে যায় অর্থ, মানসিক চাপ আর মারাত্মক খেলায় পরিণত।
শুরুর দিকটা হয় দুইশ, পাঁচশ টাকা দিয়ে একটি অ্যাপ বা সাইটে লগইন, ফ্রি বোনাসে কয়েকটি খেলা। হঠাৎ দুইশ টাকায় পাঁচশ টাকা হয়ে গেলেই মনের ভেতর এক ভ্রান্ত বিশ্বাস জন্ম নেয় আমি পারি। তারপরই শুরু হয় দৌড় দিনে দিনে হাজার হাজার টাকা ঢালা, ঘুমহীন রাত, পরিবারকে মিথ্যা বলা, নিজের পড়াশোনা কিংবা চাকরির দিক থেকে মনোযোগ হারিয়ে ফেলা।তরুণদের মধ্যে যারা মধ্যবিত্ত পরিবারের, তারা একপ্রকার গোপনে এই নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। বাবা মায়ের অজান্তে, শিক্ষকদের চোখ ফাঁকি দিয়ে, নিজের ভবিষ্যৎকে নিজের হাতেই ধ্বংস করছে। হারিয়ে যাচ্ছে সঞ্চয়, বিক্রি হচ্ছে ফোন, বন্ধক রাখা হচ্ছে গ্যাজেট।
এমনকি অনেক সময় ধার দেনায় জড়িয়ে পড়ে ভয়ানক বিপদে পড়ছে।এই অনলাইন জুয়ার ব্যবসা চালাতে বিদেশি কিছু চক্রের পাশাপাশি দেশের ভেতরেও একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে। তারা মূলত তরুণদের টার্গেট করে সোশ্যাল মিডিয়া বিজ্ঞাপন চালায়, ইউটিউবের ভিডিওতে লোভনীয় অফার দেয়, এমনকি জনপ্রিয় কিছু কনটেন্ট ক্রিয়েটররাও অজান্তে এই কাজকে প্রচার করে।আরেকটি ভয়ংকর দিক হলো এটা একেবারেই গোপনীয়। লোক দেখানো মদ্যপান বা প্রকাশ্যে সিগারেট খাওয়ার মতো নয়, বরং এটি ঘরের ভেতর, নিজের বিছানায় বসেই করা যায়। তাই অভিভাবকরাও অনেক সময় বুঝে উঠতে পারেন না, তাদের সন্তান কবে কোন পথে পা রেখেছে।
এর সামাজিক প্রভাব আরও গভীর। অনেকে সম্পর্ক হারাচ্ছে, কেউ কেউ মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে, বিষণ্নতা বা আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। অথচ এই ভয়ংকর সমস্যাটি এখনো সমাজে স্বাভাবিকভাবে আলোচনা হয় না। এটি যেন এক অপ্রকাশ্য গোপন নেশা হয়ে থেকে যাচ্ছে। পরিবারকে হতে হবে বেশি সচেতন। সন্তান কোথায় সময় দিচ্ছে, কী অ্যাপে চোখ রাখছে সেই বিষয়ে খেয়াল রাখা এখন সময়ের দাবি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত সচেতনতামূলক সেমিনার ও ওয়ার্কশপের আয়োজন প্রয়োজন। তরুণদের বুঝাতে হবে অর্থ উপার্জনের শর্টকাট নেই। একমাত্র শিক্ষা, পরিশ্রম ও পরিকল্পনাই পারে তাদের একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে।
সরকারের পক্ষ থেকেও অনলাইন জুয়ার অ্যাপ, ওয়েবসাইট এবং পেমেন্ট গেটওয়ের ওপর কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। প্লে স্টোর ও অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এমন অ্যাপ নিষিদ্ধ করা, সামাজিক মাধ্যমে এ ধরনের বিজ্ঞাপন বন্ধ করা, এবং যারা এগুলো পরিচালনা করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি।দিনশেষে, প্রযুক্তি আমাদের বন্ধু হোক, শত্রু নয় এই বোধ জাগিয়ে তুলতেই হবে। নইলে আমরা হারিয়ে ফেলবো একটি প্রজন্ম, যারা হতে পারতো দেশের ভবিষ্যৎ, কিন্তু তারা হারিয়ে যাবে জুয়ার অন্ধকার জগতে।
সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Vote@bangla.witness as witness
Daily task
https://x.com/riyadx2p/status/1946572663419294105?s=46
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.