ভ্রমণ পোস্ট: লালমনিরহাট তিস্তা ব্যারেজ ভ্রমণ ( দ্বিতীয় পর্ব)

in আমার বাংলা ব্লগ14 days ago

আমি @riyadx2 বাংলাদেশ থেকে
মঙ্গলবার, ২৯ ই জুলাই ২০২৫ ইং

আসসালামুয়ালাইকুম, এবং হিন্দু ভাইদের কে আদাব।আমার বাংলা ব্লগ এর সবাই কেমন আছেন, আশা করি প্রত্যেকে অনেক বেশি ভালো আছেন। আমি ও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। প্রতিদিনের ন্যায় আজকে আপনাদের সাথে লালমনিরহাট তিস্তা ব্যারেজ ভ্রমণ গল্প শেয়ার করবো । আশাকরি আপনাদের প্রত্যেকের অনেক বেশি ভালো লাগবে।তো চলুন এবার শুরু করা যাক।


IMG_9879.jpeg

দুপুরের রোদ তখন একটু নরম, একটু আরামদায়ক। সকালে ঘোরাঘুরি আর আনন্দে কাটানো সময়ের পর আমাদের সবার পেটেই একটুখানি খিদে পেয়েছে। ব্যারেজের পাশের ছোট্ট একটা হোটেলে ঢুকলাম। খুব সাধারণ, তবে আন্তরিক পরিবেশ। টিনের চালের নিচে বসে খোলা জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছিল দূরে ছুটে চলা তিস্তার জলধারা। খাবার হিসেবে ছিল গরম গরম ভাত, মসুর ডাল, আলুভাজি আর দেশি মুরগির ঝোল। অনেকেই বলল, জীবনে খাওয়া সেরা একটা মিল হয়তো ক্লান্তি আর প্রাকৃতিক পরিবেশের মায়া খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে দিয়েছিল বহুগুণ।খাওয়া দাওয়ার পর আমাদের ক্যামেরাবাজ বন্ধুরা শুরু করল ফটোগ্রাফি। কেউ মোবাইল ক্যামেরায়, কেউবা ডিএসএলআরে তিস্তার সৌন্দর্য ধরে রাখার প্রতিযোগিতায় নেমে গেল।

IMG_9880.jpeg

আমি নিজেও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম সেতুর মাঝখানে, নিচের দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম পানির গর্জন আর চলন্ত নৌকাগুলো। একেকটা দৃশ্য মনে হচ্ছিল যেন কবিতার মতো, নিঃশব্দ অথচ গভীর।এরপর শুরু হল আমাদের সেতুর চারপাশে হাঁটাহাঁটি। বাতাসে একটা অদ্ভুত শান্তি, না গরম, না ঠান্ডা ঠিক যেন প্রকৃতির কোমল ছোঁয়া। সেতুর এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে অনেকটা সময় কাটালাম, দেখতে দেখতে কিভাবে দূরের আকাশ ধীরে ধীরে রঙ বদলাচ্ছে। চারপাশে বেশ কিছু পরিবার, তরুণ তরুণী, শিশুদের কোলাহল, কেউ ফুচকা খাচ্ছে, কেউ চটপটি, আবার কেউ তিস্তার পাড়ে বসে ছবি আঁকছে। এই ব্যারাজ শুধু একটা ভ্রমণের জায়গা নয়, যেন পুরো একটি আবেগের কেন্দ্রবিন্দু।

IMG_9877.jpeg

বিকেলের দিকে সূর্য ধীরে ধীরে পশ্চিমে হেলে পড়ছিল। রঙিন আলো নদীর জলে পড়ে যেন একরকম অন্যরকম সৌন্দর্য ধারণ করেছে। আছরের আজানের সুর ভেসে এলো দূরের এক মসজিদ থেকে। সেই মুহূর্তটা যেন অদ্ভুত এক তৃপ্তিতে ভরিয়ে দিল মনকে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর আত্মিক প্রশান্তি দুটো অনুভূতি একসাথে মিশে গিয়েছিল সেই সন্ধ্যায়।ঘরে ফেরার সময় আমাদের সবার মনেই একটা শান্ত নিরবতা। কারো মুখে কোনো অভিযোগ নেই, নেই কোনো ক্লান্তির ছাপ। তিস্তা যেন আমাদের ভিতরে ঢুকে বসেছিল নিঃশব্দে। তার নদীর ঢেউ, বাতাসের স্নিগ্ধতা, সেতুর বিস্তৃতি, গ্রামের শান্ত পরিবেশ সব মিলিয়ে আমরা যেন একটা জীবন্ত অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলাম।

b9131a38-08f0-4909-81a0-59e35e6ba662.jpeg

লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারাজ শুধু একটা স্থান নয়, একরকম অনুভব, এক চিরন্তন সৌন্দর্যের সংস্পর্শ। এই যাত্রার দ্বিতীয় দিনটা আমাদের স্মৃতিতে চিরকাল বেঁচে থাকবে, ঠিক যেন নদীর ধার ঘেঁষে গড়ে ওঠা জীবনের মতো শান্ত, সরল আর গভীর।সেতুর পাশে বসে যখন বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, তখন কয়েকজন স্থানীয় কৃষক আর জেলে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে এলেন। তারা নিজেদের জীবনের গল্প বলছিলেন কিভাবে তিস্তার পানি কখনো আশীর্বাদ হয়ে আসে, আবার কখনো বন্যা হয়ে সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তাদের সহজ সরল ভাষা আর মাটির গন্ধ মেশানো জীবনদর্শন আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে গেল।

IMG_9861.jpeg

মনে হচ্ছিল, আমরা কেবল দর্শনার্থী নই, বরং এই নদীর জীবনের অংশ হয়ে উঠেছি কিছুক্ষণের জন্য হলেও।আছরের নামাজের পর আমরা কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে ছিলাম সেতুর ধারে। তখন বাতাসে ছিল এক অন্যরকম শূন্যতা, যেন প্রকৃতি নিজেই বিশ্রামে যাচ্ছে। সূর্য আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছিল, আকাশ রাঙা হয়ে উঠছিল লালচে-কমলা আলোয়। পাখিরা দল বেঁধে ফিরে যাচ্ছিল বাসায়। সেই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল, এই পৃথিবীটাও যেন কিছু বলে যেতে চাইছে—শুধু শুনতে জানতে হয়, অনুভব করতে হয়। তিস্তার এমন এক সন্ধ্যা আমাদের মনে এক অনন্ত প্রশান্তি রেখে গেল।

সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

ক্যামেরা পরিচিতি
DeviceiPhone 11
Camera11+11 MP
CountyBangladesh
LocationRangpur, Bangladesh

2FFvzA2zeqoVJ2SVhDmmumdPfnVEcahMce9nMwwksSDdRvZ6f4GKSwLn3BBFmPFifbbr21AhPTJ7XiTPJGbzxXNzpL3AeDnWebvp5DxFE241B8HGEVAqqCDY5m5Sn.png

Vote@bangla.witness as witness

54TLbcUcnRm3sWQK3HKkuAMedF1JSX7yKgEqYjnyTKPwrcNLMcZnLnFrW5PDaQKxbWWqwrRezSAe39S7RTiEk7NCzgzD1reVavwZGUMbjasjujy1CQqSedvtuVGKXod3vcdSqiXp2.png

Or

Set@rme as your proxy

2r8F9rTBenJQfQgENfxADE6EVYabczqmSF5KeWefV5WL9WEX4nZPQpSChVhr5YUqUeT6qhYr1L6PMHKqtRnepY2a8e1tqsDtWfr4V8KDGvJtydqvz4V68PMUyu9EWpez2.png


আমার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

1728830339945~3.jpg

আমি একজন বাংলাদেশের নাগরিক। আমি বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি এবং আমার মাতৃভাষা বাংলা। আমি একজন ছাত্র, আমি আসন্ন এইচএসসি সমমান পরীক্ষা শেষ করে দিনাজপুর সরকারি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছি। আমি পড়ালেখা করার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করি। আমি গত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হই। এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি। আমার বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের তিন নং ওয়ার্ড।আমি ফটোগ্রাফী ও ভ্রমণ করতে অনেক ভালোবাসি।
Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 14 days ago 

তিস্তা ব্য্যারেজে খুব সুন্দর কিছু মুহূর্ত কাটিয়েছেন। ভালো লাগলো ফটোগ্রাফি গুলো দেখে। সেদিনের আকাশটা আসলে খুব সুন্দর ছিল। ফটোগ্রাফিতে আকাশটা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। চারপাশের প্রকৃতিটাও খুব দারুণ। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মুহূর্ত গুলো শেয়ার করার জন্য।