ডিপার্টমেন্ট থেকে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ- পর্ব ৩ (শেষ পর্ব)

in আমার বাংলা ব্লগlast month

আসসালামু আলাইকুম। আমার বাংলা ব্লগবাসি, কেমন আছেন আপনারা? আশা করি সকলেই ভাল আছেন। এই পর্বের মাধ্যমে আমার সেন্টমার্টিন ভ্রমণের শেষ পর্ব আপনাদের সামনে তুলে ধরব।

১ম পর্ব
২য় পর্ব


img_1_1748080184208.jpg

দ্বিতীয় পর্বে আমরা রাতে ঘুরার কথা বলে শেষ করেছিলাম। তারপর দিন আমাদের চলে যাবার কথা। তাই সেদিন আমরা আবারো শেষবারের মতো সেন্টমার্টিন ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। আমরা হুমায়ূন আহমেদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্য আমাদের সহায় ছিল। কারণ সেদিন কক্সবাজার অঞ্চলে তিন নাম্বার স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকট ঘোষনা করা হয়েছিল। যার কারণে টেকনাফ থেকে আর সেদিন জাহাজ ছাড়েনি। অর্থাৎ প্রাকৃতিক কারণে আমরা আরও একটি সেন্টমার্টিনে থাকার সুযোগ পেয়েছিলাম।

ততক্ষণে আমাদের সাথে আনা পয়সা-কড়ি সবই শেষ হয়ে গিয়েছে। এজন্য আমরা বিকাশের মাধ্যমে সবাই যার যার বাসা-বাড়ি থেকে আরো কিছু টাকা নিয়ে আসি। যেন আরেকটা দিন দারুন ভাবে কাটানো যায়। এভাবে আমরা সেন্টমার্টিনে আরও একটি দিন কাটিয়ে ফেললাম। তারপরের দিন আমাদের শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত নিলেন, পরিস্থিতি যাই হোক ফিরে যাব। সেদিনও সতর্কতা সংকেতের জন্য টেকনাফ থেকে জাহাজ আসেনি। তাই পূর্ব সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা ট্রলারে করে ফিরে আসার প্রস্তুতি নিতে থাকি।

আমাদের জন্য দুটি ট্রলার ঠিক করা হয় টেকনাফে নামিয়ে দেওয়ার জন্য। ভাবলাম, খারাপ কি? নতুন একটি অভিজ্ঞতা হবে। আমরা ট্রলারে চেপে বসলাম। ট্রলার ছেড়ে দিল। বাংলাদেশ নৌবাহিনী সদস্যরা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছে, টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনের মধ্যে যেকোনো স্থানে তারা পাঁচ মিনিটের মধ্যে পৌঁছানোর সক্ষমতা রাখে। এই আশ্বাসে আমরা ট্রলারে চেপে বসি। সেন্টমার্টিন থেকে কিছুদূর সামনে এগুনোর পর আমরা বুঝতে পারি কেন সবাই ভয় পাচ্ছিল।

আমি মেঘনার তীরে বড় হয়েছি। বড় বড় ঢেউ এর সাথে পরিচয় আমার ছোটবেলা থেকে। কিন্তু নদীর ঢেউ আর সমুদ্রের ঢেউয়ের মধ্যে বিস্তর তফাৎ রয়েছে। বঙ্গোপসাগর এমনিতে উত্তাল থাকে। এত বড় বড় ঢেউ এসে ট্রলারের গায়ে আছর কাটতে লাগলো, টলারো ঢেউয়ের মাথায় উঠে লাফাতে লাগলো। আমরা কমবেশি সবাই ভীত হয়ে পড়েছি। মুসলমানরা আল্লাহর কাছে আর হিন্দু বন্ধুবান্ধবরা তাদের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে লাগলাম যেন আমরা নিরাপদে টেকনাফে পৌঁছাতে পারি। সমুদ্রের ঢেউ আমাদের ট্রলার নাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা কেবল আল্লাহ আল্লাহ করছিলাম। কতক্ষণ জানি না এভাবে কেটেছে, এই সময়ের মধ্যে আমরা এতটাই ভীত ছিলাম যে সমুদ্র উপভোগ করার কথা কারোই মাথায় আসেনি।

‎যখন আমরা নাফ নদীতে প্রবেশ করলাম, ঢেউ শান্ত হয়ে এলো। তখন আমরা ফেলে আসা সমুদ্রের দিকে তাকালাম। কি সুন্দর অনাবিল সমুদ্র! দেখে মন জুড়িয়ে যায়। কিন্তু আফসোস, যখন আমরা সমুদ্রের বুকে ছিলাম ভয়ের কারণে তা উপভোগ করতে পারেনি। এবারও আমরা মায়ানমারের অনাবিল সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকলাম। একসময় টেকনাফের জেটিতে এসে আমাদের ট্রলার ভিড়লো। আমরা ট্রলার থেকে নামলাম। দেখলাম বেশ কয়েকজন রম্ভার কাঁদি অর্থাৎ কলার ছড়া নিয়ে বসে আছে। আমরা সেখান থেকে খুব কম দামে কয়টি কলার ছড়া কিনলাম। ভাগ্যিস তা কিনেছিলাম। পরে বুঝতে পারবেন কেন তা আমাদের জন্য উপকারী হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

EiNq3ddU0AAUd2o.jpeg

টেকনাফে আমাদের জন্য আগে থেকেই বাস প্রস্তুত করা ছিল। আমরা বাসে উঠেছি কি উঠিনি, তখনই ঝড়ো দমকা হাওয়া আমাদের উপর দিয়ে বয়ে গেল। প্রায় পাঁচ থেকে সাত মিনিট অব্যাহত ছিল সেই হাওয়া। আমরা মনে মনে ভাবছিলাম, নির্ঘাত আল্লাহ আমাদের রক্ষা করেছে। না হয়, যদি আর দশটা মিনিট পরে আমরা সেন্টমার্টিন থেকে বের হতাম তাহলে সমুদ্রে কিংবা নদীতে থাকা অবস্থায় আমরা এই ঝড়ের কবলে পড়তাম। হয়তো সমুদ্রের কবলে হারিয়ে যেতাম, অথবা নাফ নদীতে ভেসে ভেসে মায়ানমার চলে যেতাম।

এনিয়ে বেশি বিতর্ক হয়েছিল পরবর্তীতে আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে। আপনাদের সাথে তা শেয়ার না করি। ট্রাভেল এজেন্সির সাথে যে কন্ট্রাক্ট ছিল, তাদের সাথে কন্টাক্ট আমাদের আগের দিনই শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই সেদিন আর তারা আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেনি। তাই আমাদের শিক্ষকরা কিছু টাকা দিয়েছিল, আর আমরা আসার পথে বড় ভাইরা যে লটারির ব্যবস্থা করেছিল, সেখান থেকে জমানো টাকা দিয়ে কোন রকম ভাবে রাতের বেলা ৮০ জনের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আমাদের শিক্ষকরা ইতিমধ্যে এক রাত বেশি থাকার জন্য বেশ ভালো অংকের টাকা গচ্ছা দিয়েছিল। যাইহোক, সে রাতে আমরা যখন কোনরকমে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ফিরে এসেছিলাম, সবারই খিদা লেগে যায়। তখন আমরা টেকনাফ থেকে কেনা কলাগুলো সবার মধ্যে বিতরণ করে খাই। এভাবেই আমরা পরবর্তীতে ঢাকায় ফিরে আসি।

‎সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ আমার জীবনে যথেষ্ট অভিজ্ঞতার সঞ্চার করেছে। সেখানকার ছবিগুলো হয়তো আমি ধরে রাখতে পারিনি, কিন্তু স্মৃতিতে গেঁথে আছে সেন্টমার্টিনের কথা। সেই রাতের বেলা ভ্রমণ, কুকুরের আক্রমণ, বড় ভাইদের ডাব পেড়ে খাওয়া, সাইকেল চালানো এবং ট্রলারে করে টেকনাফে ফিরে আসা। দারুন অভিজ্ঞতা! ধন্যবাদ সকলকে।


PUSSFi_NFT22.png