'সাজানো সংসার গল্পের শেষ পর্ব

in আমার বাংলা ব্লগyesterday

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভাল আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে এই গল্পের শেষ পর্ব নিয়ে হাজির হয়েছি। আশা করি, সবার ভালো লাগবে। তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।

pexels-august-de-richelieu-4262424.jpg
সোর্স

রাকেশ বলে, তুই আমাকে অস্বীকার করতে পারিস আমাকে অপমান করতে পারিস আমি কিছু মনে করব না। কিন্তু তোর বাবা মাকে তুই অস্বীকার করিস না। তোর বাবা আজ চিকিৎসার অভাবে মরতে বসেছে। আমি জানি, তোর কাছে এলে আমি অপমানিত হব।তোর কাছ থেকে আমি কোন সাহায্য পাব না। এ জানা সত্ত্বেও আমি তোর কাছে এসেছি কারণ আমার যেটুকু সামর্থ্য ছিল আমি ততটুকুই করতে পেরেছি তার থেকে বেশি আমি আর পারছি না। আমি বেঁচে থাকতে আমার বাবা চোখের সামনে বিনা চিকিৎসাতে মারা যাবে এটা আমি কিভাবে দেখব। তাই কোন উপায় না পেয়ে তোর কাছে ছুটে এসেছি। তুই আমাকে ভিক্ষা দে আমি কথা দিচ্ছি তোর টাকা আমি পরিশোধ করে দেবো।


রাকেশের মুখে, এই কথাগুলো শোনার পর প্রদীপ থমকে যায়। সে কিছুই বলছিল না সে দোটানায় পড়ে গিয়েছিল। একদিকে সত্যি অন্যদিকে মিথ্যা। সত্যি স্বীকার করলে তার ভালোবাসা তার সাজানো সংসার এত টাকা পয়সা সবকিছু হাতছানি হয়ে যাবে। এমন সময় হঠাৎ প্রদীপের স্ত্রী প্রদীপকে বলে, এই ব্যক্তিটি কি সব বলে যাচ্ছে। তোমার বাবা অসুস্থ? তুমি তো বলেছিলে তোমার বাবা মারা গেছে এই পৃথিবীতে তোমার কেউ নাই?তুমিতো বলেছিলে তুমি অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছো। প্রদীপের স্ত্রীর মুখে এইসব কথা রাকেশ শোনার পর রাকেশ হাসতে হাসতে বলে, বাহ প্রদীপ বাহ তুই এতটা নিচে নেমে গেছিস। তোর মা বাবা বেঁচে থাকা সত্ত্বেও তুই তাদেরকে মেরে ফেলেছিস। কিসের জন্য এই সম্পত্তির জন্য তোর ভালোবাসার মানুষটাকে মন রাখার জন্য। এই সম্পত্তি এত টাকা পয়সা নিয়ে তুই ভাল থাক আমি চলে যাচ্ছি। আমি বাবা মাকে বলবো আজ থেকে তোমার একটি সন্তান। তোমার অন্য সন্তানের কাছে তোমরা অনেক আগেই মারা গিয়েছো।


এই বলে রাকেশ চলে যায়। তখন প্রদীপের স্ত্রী প্রদীপকে বলে, কেমন মানুষ তুমি? এই সম্পত্তির জন্য আমাকে পাওয়ার জন্য তুমি তোমার সত্যিটা গোপন করেছ। তুমি সত্যিটা বললে, আমি কি তোমার হতাম না? আজ আমাদের সন্তান বড় হয়ে যদি আমাদের সঙ্গে এমনটি করে তখন কি করবে তুমি। মা-বাবা যখন বৃদ্ধ হয়ে যায় তখন মা-বাবা সন্তানের উপর নির্ভর করে। তুমি একটি অমানুষ তুমি আমাকে ভালোবাসোনি তুমি ভালোবেসেছো আমার সম্পত্তিকে। আমার তো এখন তোমাকে বিশ্বাস করতে ভয় হচ্ছে।না জানি কোনদিন এই সম্পত্তির জন্য তুমি আমাকে মেরে না ফেলো। কারণ যে তার জন্ম দাতা জন্মদাত্রী মা-বাবাকে সম্পত্তির জন্য ভুলে যেতে পারে। আর আমি তো আপন কেউ না।


প্রদীপ সবকিছু বুঝতে পেরে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে। আর বলতে থাকে আমি মস্ত বড় ভুল করে ফেলেছি সম্পত্তির লোভে আমি অমানুষে পরিণত হয়েছি। আমি কথা দিচ্ছি যে ভুল আমি করেছি সে ভুলের মাশুল অবশ্যই দিব। আমি বেঁচে থাকতে বিনা চিকিৎসাতে আমার বাবাকে আমি মরতে দেব না। যত টাকা লাগে আমি দিবো আমার বাবাকে আমি সুস্থ করে তুলবো। এই বলে, সে রওনা দেয় কিন্তু সে জানেনা তার বাবা কোন হাসপাতালে রয়েছে। হঠাৎ দেখতে পায় তার দাদা রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে প্রদীপ রাকেশের পা দুটো জড়িয়ে ধরে বলে দাদা আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আমি বেঁচে থাকতে আমার বাবাকে আমি মরতে দেব না তুমি আমার বাবার কাছে নিয়ে চলো।


এরপর দুই ভাই মিলে চলে যায় হাসপাতালে। হাসপাতালে যে সম্পূর্ণ অপারেশনের খরচ প্রদীপ পরিশোধ করে। এরপর ডাক্তাররা অপারেশন শুরু করে দীর্ঘ সময় অপারেশন চলতে থাকে। অপারেশন শেষ করে ডাক্তার জানায় তিনি আপাতত সুস্থ আছেন কোন ভয়ের কারণ নেই। আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর বাবার জ্ঞান ফিরলে পরিবারের সবাই তার কাছে যায় কিন্তু প্রদীপ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। বাবা চোখ মেলে তার পরিবারের সবাইকে দেখে বলে, প্রদীপ কোথায়? রাকেশ বলে ও বাইরে আছে। বাবা বলে, বাইরে কেন দাঁড়িয়ে আছে? ওকে আমার কাছে আসতে বল কতদিন ওকে আমি দেখি না। এরপর প্রদীপ তার বাবার কাছে এসে বাবার পা দুটো জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে আর বলতে থাকে আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি তুমি যদি আমাকে ক্ষমা না কর ঈশ্বর আমাকে ক্ষমা করবে না। তখন বাবা বলে, ওরে পাগল ছেলে সন্তান যতই অপরাধ করুক না কেনো মা বাবার কাছে কি সে কখনো অপরাধী হয় নাকি। বাবা সবাইকে কাছে পেয়ে বলে এইতো আমার সাজানো সংসার।🙂🙂🙂

আজ এখানে শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।