অসাবধানতার কারনে শিশু মৃত্যুর পথযাত্রী

in আমার বাংলা ব্লগlast year

হ্যালো,

আমার বাংলা ব্লগ বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই। আশা করছি ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি আপনাদের আশীর্বাদ ও সৃষ্টিকর্তার কৃপায়।
আমি @shapladatta বাংলাদেশ থেকে। আমার বাংলা ব্লগের একজন ভেরিফাই নিয়মিত ইউজার। আমি গাইবান্ধা জেলা থেকে আপনাদের সঙ্গে যুক্ত আছি।

free-photo-of-mano-pidiendo-ayuda.jpeg

ইমেজ সোর্স
আজ আমি আপনাদের সাথে ভাগ করে নেবো একটু অসাবধানতার কারনে কি করে একটি শিশু মৃত্যুর পদযাত্রী হয়েছিল সেই ঘটনা।

তো চলুন দেখা যাক ঘটনাটি কি ছিলো।

আমাদের গ্রামে এক বৌদি ছিলেন। দাদা ঢাকায় জব করতেন।ওনাদ বিয়ে হয়েছিলো ভালোবেসে। বৌদি ছিলেন অনেক সুন্দর ও স্মাট ও মিশুক প্রকৃতির।একা থাকা সে একদমই পছন্দ করতো না গ্রামের সব ছেলে মেয়েকে নিয়ে আড্ডা দিতো। গ্রামের সব ছেলে মেয়েরাও বৌদিদির সাথে আড্ডা দিতে ভালো বাসতো।কখনো খোস গল্প,কখনো লুডু খেলা এরকম নানা রকম খেলাধুলায় মেতে থাকতো সবাই।আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি।বউদির কাছে আড্ডা দিতাম বেশি ভাগ সময়।

বৌদি আসলে আমাদেরকে নিয়ে একাকিত্ব ঘোচানোর চেষ্টা করতেন। বৌদির কোল আলো করে একটি ছেলে সন্তান আসে।ছেলেটির নাম রাখে অনুপ। গ্রামের এক মাত্র বাচ্চা সে।বাড়িতে প্রথম বাচ্চা হলে যেমন সবাই খুব ভালোবাসে সেরকম গ্রামে আর কোন বাচ্চা না থাকার কারণে বৌদির ছেলে অনুপকে সবাই ভালোবাসতো।আমরা সব সময় অনুপের খেলায় রাখতা।বাচ্চাটি অনেক সুন্দর ও শান্ত প্রকৃতির ছিলো এজন্য আরো বেশি ভালোবাসা পেতো সবার।

যেহেতু গ্রামের সবাই বাচ্চাটিকে ভালোবাসে তাই বৌদির কাছে কম থাকতো বাচ্চা টি শুধু খাওয়ানোর সময় ও ঘুমানোর সময় থাকতো।বৌদি বাবার বাড়িতেও মাঝে মাঝে যেতেন। তখন আমাদের সবার কেমন জানি একা একা লাগতো।বৌদি আমাদের সাথে গল্পগুজব করতেন ও তরিতরকারি কাটতেন মাঝে মাঝে আমাদের কে বলতো তোমরা বসে আমার সাথে গল্প করো আমি রান্না শেষ করি তারপর একসাথে খেলবো।বৌদিদের তেঁতুল ও জাম্বুরা গাছ ছিলো আর সেই তেঁতুল মাখা ও জাম্বুরা খাওয়ার লোভে আমরা বেশি বেশি যেতাম।

আমরা সব ছেলে মেয়েরা স্কুল কলেজ যেতাম তখন বৌদির একা থাকতে হতো ও বাচ্চা সামলাতে হতো।বৌদির শ্বশুড়িও দেওর ছিলো একটা।ঘটনার দিন আমরা সবাই যে যার মতো স্কুল ও কলেজে গেছি সেই দিনটি ছিলো বৃহস্পতিবার আর বৃহস্পতিবার হাফ স্কুল। বৌদি দুপুরের রান্না তুলে দিয়েছে। যেহেতু সবাই স্কুল কলেজ চলে গেছে তাই বৌদিকে বাচ্চা সামলাতে হচ্ছিলো।

বৌদি সেদিন রান্না করবে খাসির মাংস আর সেজন্য শিল পাটায় মসলা বাটতে হয়েছিল আর বাচ্চা বিরক্ত করছিলো জন্য বাচ্চাকে উঠানে খেলনা দিয়ে বসিয়ে রেখেছিলো।বাচ্চাটি তখন মাত্র হামাগুড়ি দেয়া শিখেছে। বৌদি বাচ্চা কে খেলনা দিয়ে বসিয়ে রেখে নিশ্চিন্তে রান্না করছিলো।এদিকে উঠানে বালতিতে করে জল রোদে দিয়েছিলো বাচ্চাকে স্নান করাবে বলে।

বাচ্চা খেলতে খেলতে এক সময় বালতি ধরে দাড়িয়েছে এবং উপুর হয়ে হাত দিয়ে জল দিয়ে খেলছিলো।খেলার একপর্যায়ে উপর হয়ে বালতিতে পড়ে যায় এবং বালতির জলের নিচে মাথা ও পা আকাশ মুখে হয়ে যায়।কখন এমন হয়েছে তা বৌদি বলতে পারছে না তবে যখন বাচ্চার কোন সাড়াশব্দ উঠানে না পেয়ে রান্না ঘর থেকে উকি দেয় আর তখনি চোখ পড়ে বালতির দিকে এবং ভয়ংকর দৃশ্য দেখে বিকট চিৎকার করে বাচ্চাকে বালতি থেকে তুলে আনে এবং মাথার উপরে তুলে ঘোরানোর চেষ্টা করে।

আমি স্কুল থেকে এসে মাত্র পুকুর পাড়ে বসেছি ঠান্ডায় তখনি চিৎকার শুনে দেই ভোঁদৌড় আর সবাই গ্রামের দৌড়ে যায়।আমি গিয়ে প্রথম দেখতে পাই বাচ্চাটির শরীর লাল আমি তো ভয় পেয়ে যাই এবং ভেবে নেই হয়তো কোনভাবে পেটে চুকু কিংবা বটি ঢুকে গিয়েছে। তারপর বুঝতে পারি আসল ঘটনা।এরপর আশেপাশের গ্রামের সব মানুষ ছুটে আসে এবং জলে পড়লে বাচ্চাকে প্রাথমিক যা যা করা লাগে সব করে।একজন বাচ্চাকে পাধরে ঘোরাতে গিয়ে একটি গাছের সাথে বাচ্চা মাথায় লাগে।

অনেক সময় ঘোরাঘুরি করার পর বাচ্চা পেট থেকে অনেক জল বেরিয়ে আসলেও বাচ্চার কোন রেসস্পন্স নেই।একটুও নারাচরা করে না।সবাই নিরাশ হয়ে যায় এবং বাচ্চা মরে গেছে বলে একটি পিড়ির উপরে উপর করে রেখে দেয়।হাসপাতালে নেয়ার মতো অবস্থা নেই এমন অবস্থা।

এদিকে বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায় এবং আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে বাচ্চার পরিবারের কান্নায় এবং গ্রামের মানুষের কান্নায়।এরপর হঠাৎ কেউ একজন রান্না ঘর থেকে লবন এনে বাচ্চাটির পুরা শরীরে দেয় এবং ঘরে আরো লবনের প্যাকেট কেটে বাচ্চাটির শরীরে দেয়।

আশ্চর্যের বিষয় হলো একটু পর বাচ্চাটি সিনেমার কাহিনির মতো আস্তে আস্তে হাতের আঙ্গুল নড়াচড়া করতে থাকে এবং হাত মুঠো করে ফেলে সবাই তখন খুশি হয়ে যায়। আসলে যখন বাচ্চাটির ওই অবস্থা হয়েছিল তখন হিন্দু মুসলিম ছোট থেকে বড়ো এমন কোন মানুষ নেই যে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকেনি সবাই চোখের জলে সৃষ্টিকর্তাকে ডেকেছিলো এবং সৃষ্টিকর্তা এতো মানুষের চোখের জলের মূল্য দিয়েছেন।

সত্যি সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে বাঁচিয়ে নিয়েছে বাচ্চা টিকে।
আসলে অসাবধনতার ফলে কতো বড়ো দূর্ঘটনা ঘটপ গিয়েছিলো মনে হলোই পুরা শরীরে কাটা দেয়।

পরিশেষে একটি কথাই বলতে চাই যে আপু ভাইয়াদের ছোট বাচ্চা আছে তারা অবশ্যই বাচ্চাদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখবেন। বাথরুমে বালতিতে জল ভরিয়ে রাখবেন না।যাদের গ্রামে বাড়ি তারা অবশ্যই বাচ্চাদের কে চোখে চোখে রাখবেন যতোদিন অবদি সাঁতার না শেখে।বাচ্চাদের কে খুব ছোট বয়সেই সাঁতার শেখান।আমি আমার মেয়েকে অনেক ছোটতেই সাঁতার শিখেছি।
একটি দূর্ঘটনা সারাজিবনের কান্না।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি আবারও দেখা হবে অন্যকোন পোস্টের মাধ্যমে।
সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।

টাটা

পোস্টবিবরণ
পোস্ট তৈরি@shapladatta
শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
ডিভাইসOppoA95
লোকেশনবাংলাদেশ

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230826_182241.jpg

আমি হৈমন্তী দত্ত। আমার স্টিমিট আইডিরঃshapladatta. জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। শখঃবাগান করাও নিরবে গান শোনা,শপিং করা। ভালো লাগে নীল দিগন্তে কিংবা জোস্না স্নাত খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে।কেউ কটূক্তি করলে হাসি মুখে উড়িয়ে দেই গায়ে মাখি না।পিছু লোকে কিছু বলে এই কথাটি বিশ্বাস করি ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।বিপদকে ও অসুস্থতার সাথে মোকাবেলা করার সাহস রাখি সহজে ভেঙ্গে পরি না। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পর হিংসা আপন ক্ষয়। ধন্যবাদ ।

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjddgXFQSs49C4STfzSVsuC3FFbePnB7C4GwVRpxUB36KEVxnuiA7vu67jQLLSEq12SJV1etMVkHVQBGVm1AfT2S916muAvY3e7MD1QYJxHDFjsxQDqXN3pTeN2wYBz7e62LRaU5P1fzAajXC55fSNAVZp1Z3Jsjpc4.gif



IMG_20240812_163609.png

Sort:  
 last year 

এভাবে অনেক বাচ্চা অকালে মৃত্যুবরণ করে।আর আপনার সেই বৌদির বাচ্চার কথা শুনে খুব খারাপ লাগছে। আসলে এমন ঘটনা প্রায়ই দেখা যায়। বালতিতে বা বড় কোনো পাত্রে পানি রাখলে বাচ্চারা তা ধরতে যায়। তাছাড়া ছোট বাচ্চা হলে তো আরও বেশি ভয়। তবে অলৌকিকভাবে বাচ্চাটা বেঁচে গেল এটাই শুকরিয়া।

 last year 

হ্যাঁ আপু ঠিক বলেছেন এরকম ঘটনা প্রায় দেখা যায়।ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

আমার মামাতো বোনের সাথেও একই ঘটনা ঘটেছিল,তবে মাসি খুব জলদি দেখে ফেলায় কোন ক্ষতি হয়নি। এজন্য সদ্য হামাগুড়ি দিতে শেখা আর হাটতে শেখা বাচ্চাদের কখনোই চোখের আড়াল করা উচিত না।ধন্যবাদ মামি সতর্কতা মূলক পোস্টটির জন্য।

 last year 

তোমার মামা তো বোনের সাথেও এমন হয়েছিল আসলে এরকম ঘটনা মাঝে মাঝেই শোনা যায়।ঠিক বলেছো হাটতে শেখা বাচ্চাদের চোখের আড়াল করা মোটোও ঠিক নয়।

 last year 

খুবই ভয়ানক একটি বিষয়। বাচ্চাটি মারা গেলে খুবই খারাপ লাগতো। আসলেই, বাচ্চাদের নিয়ে সাবধানে থাকা উচিৎ। ধারণা করি এটা অনেক আগের ঘটনা। অনুপ এখন আছে কেমন?

 last year 

হ্যাঁ ভাইয়া অনেক আগের ঘটনা।অনুপ ভালো আছে বড়ো হয়ে গেছে।

 last year 

সম্ভবত এটাই মনুষ্যত্ব আপু। ছোট বাচ্চাটির জন্য সবাই সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা শুরু করে দেয়। জেনে ভালো লাগল বাচ্চাটা শেষ পযর্ন্ত বেঁচে গিয়েছিল। যেসব বাড়িতে বাচ্চা আছে তাদের সবসময় অনেক সাবধান থাকতে হয়।

 last year 

আমার পাশের গ্রামে একদম একই ঘটনা ঘটেছিলো। তবে বাচ্চাটা বাঁচেনি।এক্ষেত্রে বাচ্চাটা সুস্থ হয়েছিলো জেনে ভালো লাগলো। সত্যি হয়তো সবার ভালোবাসা ছিলো বলেই এই অলৌলিক ঘটনা ঘটেছে।ছোট বাচ্চাদের কে দেখেশুনে রাখা উচিত।আপনার মেয়েকে সাঁতার শিখিয়েছেন জেনে ভালো লাগলো।

 last year 

আসলে ছোট বাচ্চারা যখন সবেমাত্র হাঁটতে শেখে কিংবা হামাগুড়ি দিতে শেখে, ওই সময় ওদের প্রতি একটু বেশি যত্নশীল হওয়া উচিত। বিশেষ করে জল এবং আগুন এই দুটো জিনিসের ভয় থাকে সবথেকে বেশি। যাই হোক, বাচ্চাটার শেষ পর্যন্ত তেমন কোন সমস্যা হয়নি, এটা জেনে খুব খুশি হলাম। কারণ ওইভাবে জলের ভেতর এত সময় থাকলে তো আরো খারাপ কিছু হতে পারতো। আপনার পোস্ট পড়ে আশা করি অনেকেই সচেতন হবে আজ দিদি।