শৈশবের এক রাতের ভয় আর জীবনের শিক্ষা
আসসালামুআলাইকুম/আদাব🤝
বর্তমানে বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলায় অবস্থান করছি ।
ঘটনাটা অনেক দিনের পুরোনো। আমি তখন ছোট। একবার আমি আর আমার ছোট ভাই নানির বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে মামারা একটা বার্ষিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল। আমি তো ছোটবেলা থেকেই একগুঁয়ে স্বভাবের ছিলাম। অনুষ্ঠানটা না দেখে ফেরত আসব না এটা মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলাম। কিন্তু সেই সময় এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। চারপাশ অন্ধকারে ডুবে ছিল। এমন অবস্থায় যাওয়া কতটা বিপজ্জনক হতে পারে সেটা তখন আমার মাথায়ই আসেনি।
যাওয়ার পথে নানি আমাকে দাঁড় করিয়ে রেখে খালাতো ভাইকে নিয়ে এগিয়ে গেলেন। আমি ভেবেছিলাম নানি আমাকে নিতে ফিরে আসবেন। আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম কিন্তু অনেকক্ষণ পরও তিনি আর ফিরলেন না। তখন আমি একাই হাঁটতে শুরু করলাম অন্ধকার রাস্তায়। চারপাশে শুধু ঘুটঘুটে অন্ধকার আর নিস্তব্ধতা। ভয় পাওয়ার মতো পরিবেশ ছিল কিন্তু অনুষ্ঠান দেখার জেদ আমাকে এগিয়ে যেতে বাধ্য করছিল।
আমি হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার দুই পাশের বাড়িগুলো দেখতে দেখতে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ খেয়াল না করেই একেবারে বিল্ডিংয়ের সিঁড়ির ধারে উঠে গিয়েছিলাম। আমার বুঝতেই বাকি রইল না যে কোথায় যাচ্ছি। হঠাৎ পা পিছলে গেল এবং আমি সেখান থেকে সোজা নিচে পড়ে গেলাম। নিচে ছিল লাউয়ের বাগান আর বাঁশ দিয়ে তৈরি করা মাচা। আমি সেই মাচার ওপর জোরে আছড়ে পড়লাম।
পড়ে যাওয়ার পর মুহূর্তের মধ্যে মনে হলো আমার জীবন এখানেই শেষ। শরীরের ব্যথা আর ভয়ের কারণে আমি জোরে চিৎকার করতে লাগলাম। আমার সেই চিৎকার আশেপাশের মানুষের কানে পৌঁছে গেল। মামারা আর আশপাশের লোকজন দৌড়ে এলো। সবাই আমাকে মাচা থেকে নামালেন। তখন তাদের মুখেও আতঙ্ক স্পষ্ট ছিল। তারা ভয় পেয়েছিল আর আমি তো ভয়ে প্রায় জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থায় ছিলাম।
সেই রাতে আমি বুঝেছিলাম কত বড় বিপদের হাত থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছি। ছোটবেলায় হয়তো বুঝিনি কিন্তু এখন মনে হয় আল্লাহর রহমত ছাড়া সেদিন আমি বাঁচতে পারতাম না। এরপর থেকে আমার আম্মু আর কখনো আমাকে নানির বাড়িতে একা যেতে দেননি। আর আমারও মনে গেঁথে গিয়েছিল একটা শিক্ষা যে অন্ধকারে একা বের হওয়া কতটা ঝুঁকিপূর্ণ।
আজও সেই রাতের কথা মনে হলে গা শিউরে ওঠে। মনে হয় সেদিন যদি আমি একটু এদিক সেদিক পড়তাম তাহলে হয়তো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটত। আমি শিখেছি জীবনে সতর্ক থাকা কতটা জরুরি। ছোটবেলায় আমরা হয়তো বুঝি না কিন্তু প্রতিটি অভিজ্ঞতা আমাদের বড় হতে সাহায্য করে।
শৈশবের সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা আমার জীবনে এক ধরনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। আমি শুধু ভয় পাইনি বরং শিখেছি জীবনে সবসময় সাবধানে চলতে হবে। পরিবারের কথায় কান দেওয়া জরুরি কারণ তারা আমাদের নিরাপত্তার জন্যই চিন্তা করেন। আজও যখন গল্পটা মনে করি তখন মনে হয় আমি যেন নতুন করে জীবন ফিরে পেয়েছিলাম।
শৈশবের স্মৃতি যত পুরোনোই হোক না কেন কিছু কিছু ঘটনা এমন থাকে যা সারাজীবন মনে থাকে এবং বারবার মনে করিয়ে দেয় জীবনের মূল্য কতটা। সেই রাত আমাকে শিখিয়েছে জীবন কতটা নাজুক আর পরিবারের সঙ্গ কতটা প্রয়োজনীয়।
এতক্ষণ আমার পোষ্ট মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আজ এখানেই শেষ করছি, অন্য কোনদিন নতুন কিছু নিয়ে আপনাদের সামনে উন্মোচিত হব। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
ধন্যবাদ সকলকে✨💖
ফোনের বিবরণ
ক্যামেরা | Redmi note 9 |
---|---|
ক্যামেরা.মডেল | note9 |
কভার ফটো | পিক্সাবে। |
অবস্থান | সিরাজগঞ্জ- বাংলাদেশ। |
আমার পরিচয়
আমি শেলি। আমি বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুরে খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়ে সি এস ই তে অধ্যায়নরত আছি। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকতে ভালোবাসি। নতুন কিছু শিখতে এবং জানতে ভালোলাগে।ঘুরতে আর খেতে খুব ভালোবাসি।অবসর সময় পেলেই ছবি আঁকি। এই ছিল আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়, আপনারা সবাই আমার পাশে থেকে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে উৎসাহিত করবেন, ধন্যবাদ সবাইকে। 🌼💖🌼 |
---|
🎉 Congratulations!
Your post has been upvoted by the SteemX Team! 🚀
SteemX is a modern, user-friendly and powerful platform built for the Steem community.
🔗 Visit us: www.steemx.org
✅ Support our work — Vote for our witness: bountyking5
https://x.com/JannatulF57996/status/1970544694825537612
https://x.com/JannatulF57996/status/1970545275715625409
সবচেয়ে সুন্দর লাগলো ঘটনার ভয়ংকর দিক থাকা সত্ত্বেও সেটি আপনার জীবনে শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছে। জীবন আসলেই এমন কখনো ছোট ছোট অভিজ্ঞতা থেকেই বড় শিক্ষা পাওয়া যায়।
এটি শুধুই একটি শৈশবের গল্প নয় বরং সাহস শিক্ষা আর পরিবারের প্রতি ভরসার এক গভীর স্মৃতি।