অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে হসপিটালে কেটে গেল ১৩ টি দিন|| পর্ব :২

in আমার বাংলা ব্লগ22 hours ago
আসসালামুআলাইকুম

বন্ধুরা, সকলে কেমন আছেন ? আশা করি ভালোই আছেন, আমিও আলহামদুল্লিাহ ভাল আছি।

IMG_8603.jpeg

আমার গতকালের পর্বটি ছিল অপারেশনের পর হসপিটাল থেকে বাসায় ফেরা। হ্যাঁ বন্ধুরা হসপিটাল থেকে বাসায় ফেরার পর দুই তিন ঘন্টা বেশ ভালোই ছিলাম।এরপর শুরু হয় অসহ্য ব্যাথা ও যন্ত্রণা।সহ্য করার মতো কোনো ক্ষমতা আমার তখন ছিল না।চিৎকার করে কান্না শুরু হয়ে গেল এমন কান্না মনে হয় আর জীবনে কখনো করিনি। এত জোরে কান্না করেছিলাম যে গলা ভেঙ্গে গিয়েছিল। আমার কান্না দেখে আমার মেয়ে দুটি কান্না শুরু করে দেয়। এরপর আমার হাজব্যান্ড পড়ে যায় বিপদে, আমার চিৎকার আর অন্যদিকে বাচ্চা দুটির কান্না।দ্রুত হসপিটালে ফোন করে আর সাথে সাথে আমার ছোট ভাসুর কে বাসায় আসতে বলে।পশু পাখি জবাই করার সময় তারা যেমন ছটফট করে এই মুহূর্তে আমার ঠিক একই অবস্থা হয়েছিল।তখন রাত বাজে প্রায় সাড়ে দশটা।এরপর হসপিটালে ফোন করলে তারা ট্রিপল নাইনে ফোন করতে বলে।ট্রিপল নাইনে ফোন করার পর তারা ডিটেলস নেয় কি হয়েছে? কিভাবে হয়েছে? কখন হয়েছে? এরপর তারা আমার চিৎকারও শোনে ফোনে। ফোন করার পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মধ্যেই তারা বাসায় অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে হাজির হয়।দ্রুত তারা আমার ব্লাড প্রেসার ও টেম্পারেচার মেপে নিয়ে যায় এম্বুলেন্সে।

অ্যাম্বুলেন্সের বেডে শুয়ে শুয়ে চিৎকার করতে থাকি। কোনভাবেই ব্যথা কন্ট্রোল হচ্ছিল না।এরপর বাচ্চা দুটিকে ভাসুর তাদের বাসায় নিয়ে যায়।এরপর ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই হসপিটালে পৌঁছে যাই।সেখানে নেওয়ার পরও অসহ্য ব্যথা চিৎকার করে কান্না তখনো চলছিল কারণ ব্যথা আমি সহ্য করতে পারছিলাম না।অ্যাম্বুলেন্স থেকে একটি বেডে তারা আমাকে নিয়ে যায় হসপিটালের মধ্যে। কিন্তু সেখানেও নানান রকমের প্রসেসের কারণে আরও ১৫-২০ মিনিট ওয়েট করতে হয়েছিল।এরপর দ্রুত ব্যথা কমানোর জন্য তারা আমাকে মরফিন পুশ করে শরীরে।মরফিন দেওয়ার কিছুক্ষণ পর একটু আরাম পাই।কিন্তু আবার কয়েক ঘন্টা পর শুরু হয়ে যায় অসহ্য ব্যথা।একটি পর একটি ওষুধ পুশ করতে থাকে ক্যানেলা দিয়ে।এরপর আবার একটু বেটার ফিল করি।এরপর নার্স এসে বলল হাজব্যান্ড এখানে থাকা এলাও না।তখন রাত বাজে দুইটা।ওই সময় হাসব্যান্ড ট্যাক্সি ডেকে বাসায় চলে যায়।এরপর ডক্টর আসে, কিন্তু ডক্টরও বুঝতে পারছিল না কেন এমন হচ্ছে? স্ক্যান না করে কিছুই বলা যাবে না ওই মুহূর্তে।যেহেতু ঐদিন অপারেশন হয়েছিল, সাথে প্রচুর ব্যথা তাই ঐদিন আর সিটি স্ক্যান করেনি।পরের দিন সকালবেলা নিয়ে যায় সিটি স্ক্যান করাতে।

সিটি স্ক্যান করার পর তারা দেখে ভিতরে ব্লাড অথবা সামথিং অন্য কিছু জমাট বেঁধে গিয়েছে।কিন্তু তারপরও তারা ক্লিয়ার না, এরপর কয়েক ঘন্টা পর আবার নিয়ে যায় আল্টাসাউন্ড স্ক্যান করাতে। স্ক্যান করার কয়েক ঘন্টা পর তারা নিয়ে যায় এক্সরে করতে।এরপর তারা বলেন লিভারের সাইডেও একটু প্রবলেম হয়েছে।নান রকমের মেডিকেশন তখন চলছিল কিন্তু আমার অবস্থা একেবারেই খারাপ। বমি, পেটে ব্যথা, একেবারে দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম।কোনভাবেই ব্যথা কন্ট্রোল হচ্ছিল না।শুধুমাত্র মরফিন দেওয়ার পর একটু আরাম লাগতো।এরপর ডক্টর ও তাদের টিম এসে বলল আমার অপারেশন টি ছোটখাটো ছিল না, অনেক বড় একটি অপারেশন ছিল।কিন্তু আমার মাথায় ঢুকলো না অপারেশনে আগে বলেছিল সহজ অপারেশন, কিন্তু অপারেশনের পরে এ কথা বলছিল।তখন আমি বললাম এই অপারেশন অনেকেরই হয়েছিল কিন্তু সকলেরই খুব ভালোভাবেই হয়েছে, কিন্তু আমার বেলায় কেন এমন হলো? তখন তারা বলল কোন কোন ক্ষেত্রে এমন হয়।এটি খুবই রেয়ার, প্রতি এক হাজারের মধ্যে একজনের এমন হয়।যাইহোক কপাল খারাপ কি আর করা? আজ তাহলে এতটুকুই, আগামী পর্বে বাকি দিনগুলো হসপিটালে কিভাবে কাটিয়ে বাসায় ফিরেছি তা আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

আজ তাহলে এতটুকুই, পরবর্তীতে নতুন কিছু নিয়ে হাজির হব আপনাদের মাঝে।

Photographer@tangera
DeviceI phone 15 Pro Max

বন্ধুরা এটিই ছিল আমার আজকের আয়োজন।আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে।

ধন্যবাদ,

@tangera

1927F0BC-A81B-459C-A2F6-B603E4B2106C.png


👉 আমাদের discord চ্যানেল এ JOIN করুন :

👉 আমাদের discord চ্যানেল এ JOIN করুন :

VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


[witness_vote.png](https://steemitwallet.com/~witnesses

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 11 hours ago 

খুবই খারাপ লাগলো শুনে আপু।আপনার ব্যথ্যার তীব্রতার কথা শুনে আমার অতীতের কিছু অনুভূতি মনে পরে গেলো। যাই হোক এরপরে আল্লাহর অশেষ রহমতে সুস্থ হয়েছেন আমাদের সাথে কষ্টের অনুভূতি গুলো শেয়ার করে নিচ্ছেন এতে আলহামদুলিল্লাহ। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠুন এমনটাই দোয়া করি।

 8 hours ago 

আপু আপনি এবং আপনার ফ্যামিলির সবাই অনেক কষ্ট করেছেন। আমার তো বাচ্চাদের কথা ভেবেই খারাপ লাগছিল। বারবার সোমা আপুকে বাচ্চাদের কথা জিজ্ঞাসা করছিলাম। আসলে এরকম পরিস্থিতি সামলানো অনেক কঠিন। আর ভাইয়াও অনেক কষ্ট করেছেন। ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরলেন আপু।

 7 hours ago 

এটি খুবই রেয়ার, প্রতি এক হাজারের মধ্যে একজনের এমন হয়।যাইহোক কপাল খারাপ কি আর করা?

আসলে ভাগ্য সহায় না হলে যা হয় আর কি। সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে সত্যিই খুব খারাপ লাগছে আপু। আপনি প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে কন্ট্রোল করা যায় না। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম আপু।

 5 hours ago 

আপনার কস্টের কথা পড়ে বেশ খারাপ লাগলো আপু। খুবই খারাপ সময় পার করেছে আপনার পুরো পরিবার। তবে এখন ভালো আছেন জেনে ভালো লাগলো। অনেক অনেক দোয়া আপনার জন্য। ভালো থাকবেন সব সময়।

@tangera, আপনার পোস্টটি পড়ে আমি গভীরভাবে সহানুভূতি জানাচ্ছি। আপনার অপারেশনের পরের জটিলতা এবং শারীরিক কষ্টের বর্ণনা খুবই মর্মান্তিক। আপনার সাহস এবং পরিস্থিতির সাথে লড়াই করার মানসিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।

এই পোস্টে আপনি যেভাবে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন, তা একইরকম পরিস্থিতিতে থাকা অন্যদের জন্য সাহস যোগাতে পারে। বিশেষ করে, স্বাস্থ্যখাতে অপ্রত্যাশিত ঘটনার সম্মুখীন হলে কিভাবে মোকাবেলা করতে হয়, সে বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতা একটি মূল্যবান দিকনির্দেশনা দিতে পারে।

আমি আশা করি আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন এবং আপনার পরবর্তী পোস্টে হাসপাতালের দিনগুলোর বাকি গল্পগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করবেন। আপনার লেখাগুলো Steemit কমিউনিটির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।