সেই রাতের মেয়ে
রাত প্রায় আনুমানিক ১২টা বাজে — শহর থেকে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি। আব্বু-আম্মু অনেক আগেই চলে গিয়েছেন। আমি সাধারণত ওদের সাথেই যেতাম, কিন্তু আজ কলেজের একটা অ্যাসাইনমেন্টের জন্য আটকে গিয়েছিলাম। যাই হোক, বাসে বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে আরিজিৎ সিং-এর গান শুনছি — “আব হি সামনে...”
গানটা শুনে জানি না কেন চোখের কোণে জল চলে এল। অথচ আমি তো কোনোদিন প্রেমও করিনি, সেকাও খাইনি! তবুও মন কেমন করে, বুকটা ভারী হয়ে আসে। হয়তো আরিজিৎ সিং-এর গানগুলোর জাদুই এমন — শুনলেই মনে হয় যেন জীবনে কোনো এক হারানো প্রেম ছিল, আর সেই স্মৃতিই চোখের পানি হয়ে ঝরে পড়ে।
এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখি বাস এসে থেমেছে আজিমপুর বাসস্ট্যান্ডে। তখন রাত প্রায় ১টা বাজে। গ্রামের দিকে রাত ১টা মানে তো একেবারে গভীর অন্ধকার, নিস্তব্ধতা আর রহস্যে ঢাকা একটা সময়। নামার পর হাঁটতে হাঁটতে অটোস্ট্যান্ডের দিকে গেলাম — কিন্তু হায়! একটাও অটো নেই।
এখন আমার সামনে একটাই পথ — কয়েক কিলোমিটার হেঁটে হেঁটে যেতে হবে গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত। ভাবতেই গা শিরশির করে উঠল। প্রথমে ভেবেছিলাম, বাসস্ট্যান্ডের ওয়েটিং রুমেই রাতটা কাটিয়ে দেব। কিন্তু একা একা সেখানে থাকা ঠিক হবে কিনা, সেই ভয়ও কাজ করল। কারণ শুনেছি, এই গ্রামের আশপাশে নাকি “জিন-বhoot” এর উৎপাত আছে।
তাই আর দেরি না করে পা বাড়ালাম গ্রামের পথে। রাস্তা ফাঁকা, চারপাশ নিস্তব্ধ — শুধু মাঝে মাঝে শেয়ালের ডাক ভেসে আসছে দূর থেকে। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ মনে হল, কেউ যেন আমার পেছনে হাঁটছে! সাহস করে পিছনে তাকাতে পারলাম না। বুকের ভিতর ধুকপুক শব্দটা যেন আরও জোরে শোনা যাচ্ছে।
আরেকটু হাঁটার পর দেখি সামনে কিছু একটা আসছে। একটু কাছে আসতেই থমকে গেলাম — এমন অপূর্ব সুন্দর একটা মেয়ে, চোখ ফেরানো যায় না। মনে হচ্ছিল, এ কি সত্যিই মানুষ? না কি কোনো পরী নেমেছে এই রাতের আঁধারে!
আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি, এমন সময় মেয়েটি মিষ্টি গলায় বলল —
“এই যে ছেলেটি, এত রাতে তুমি এই নির্জন রাস্তায় কী করছো?”
আমি একটু ইতস্তত করে বললাম,
“শহর থেকে আসছি... এটাই আমার গ্রাম। বাড়ি যাচ্ছিলাম।”
মেয়েটি হালকা হেসে বলল,
“তোমার তো বেশ সাহস আছে...”
তারপর আরও কিছু কথা বলল, কিন্তু আমি তখন আর কিছু শুনছিলাম না। মেয়েটার সেই হাসি, সেই চোখের দৃষ্টি — যেন মন্ত্রমুগ্ধ করে দিল। হঠাৎ মনে পড়ল, শুনেছিলাম “পরীরা” নাকি খুব সুন্দর হয়, আর তারা নাকি গভীর রাতে গ্রামের পথ ধরে ঘুরে বেড়ায়।
আমার শরীর কাঁপতে শুরু করল — মনে একটাই প্রশ্ন ঘুরছে, “এটা কি সত্যিই পরী নয় তো?”
আমি সাহস করে জিজ্ঞেস করলাম,
“তুমি এত রাতে এখানে কী করছো?”
মেয়েটি হেসে বলল,
“তোমার জন্যেই তো অপেক্ষা করছিলাম...”
(চলবে...)
গল্প : সেই রাতের মেয়ে
লেখক: TH Rifat
পর্ব : ১
🔔 এই ফার্স্ট লিখলাম জানিনা কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে কমেন্টে জানান আর উৎসাহ পেলে বাকি পর্বগুলো পোস্ট করবো
ধন্যবাদ ❤️