উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে
আচ্ছা আপনাদের কি আগেকার দিনের বাংলাছায়াছবির কথা মনে আছে? আরে ঐ যে যখন সম্পূর্ণ গ্রাম মিলে মাত্র একটা টিভি থাকত,আর সেই টিভিতেও থাকত একটা মাত্র চ্যানেল থাকত "বিটিভি"। আর বিটিভি তে প্রতি শুক্রবার করে দিত সেই ছায়াছবি গুলো।পুরো গ্রামের লোক চলে আসত সেই ছায়াছবি দেখার জন্য।যদিও অর্ধেক ছবি দেখা যেত না ঝিরঝির করার কারনে। সেই দিনে গুলো মনে আছে?
আচ্ছা দিন গুলো মনে না থাক সিনেমা গুলো মনে আছে৷ যেখানে নায়ক অনেক সহজ সরল থাকে,ভিলেন একজন কে খুন করে চলে যায়।তখন নায়ক সেখানে ঘুরতে ঘুরতে চলে আসে আর নায়ক সেই লোক কে বাচানোর জন্য যেই চাকু তুলে হাতে নেয়,তখনই সেখানে পুলিশ চলে আসে আর লোকটাও মারা যায়। তখন নায়ক যায় ফেসে,আদালত তাকে জাবজ্জীবন দেয়৷ কি মনে পড়ে সেসব গল্প?
এমন একটি ঘটনা রিসেন্টলি আমাদের এলাকায় হইছে৷ তবে বিষয়টা খুনের মত অত টা গুরুতর নয়।তবে ছোট খাট ও না। কি ঘটেছিল সেটাই এখন জানাব আপনাদের।
আপনারা সবাই জানেন আমার সকালে হাটাহাটি করার অভ্যাস। প্রতিনিয়ত সকাল বেলা না হাটলে খারাপ লাগে। আমার দেখাদেখি আমার এলাকার আরো কয়েকজন হাটে। আমরা একসাথেই হাটতে যাই। গল্প করতে করতে হাটতে মজাই লাগে। মনটাও ফ্রেশ হয়,আবার শরীর ও ঠিক থাকে।রিসেন্টলি আমাদের সাথে একটি ছোট ভাই ও যোগ দেয়।
ছোট ভাইয়ের নাম টা বললাম না। সে বেশ কয়েকদিন আমাদের সাথে হাটল।এরপর আমার পরীক্ষা শুরু হল,হাটাহাটি কয়েকদিনের জন্য বন্ধ রাখলাম।আমি বাকি গুলোরে ডেকে ডেকে নিয়ে যাই,তাই আমি যাই না দেখে বাকি গুলাও যায়না।এরপর একদিন আমি পড়াইতে গেছি,তখন আমার বান্ধবী নাফি বলল,তুই সকালে হাটতে গেছিলি? নাফিও আমার সাথে হাটতে যায়।আমি বললাম না তো,কেন তুই গেছিলি?
তখন নাফি বলল আমিও যাইনি,কিন্তু একটা কাহিনী হয়ে গেছে জানিস।আমি বললাম না।তখন ও বলা শুরু করল,
আমাদের সেই ছোট ভাই নাকি সকালে হাটতে গেছে।তবে আমরা সাধারণ যে রাস্তা দিয়ে হাটি সে ঐ রাস্তা দিয়ে যায় নি৷ এখন বলে রাখি আমাদের এই ছোট ভাই অনেকটা সহজ সরল টাইপের। ছোট বেলা থেকে বাবা মা বাইরে বেশি বেরোতে দেয়নি,তাই দিন দুনিয়া একটু কম বোঝে।
যাই হোক সে হাটতেছে, সে যে রাস্তা দিয়ে হাটতেছিল সেই রাস্তা দিয়ে বাসার রাস্তায় ওঠার জন্য দুইটি রাস্তা,একটি গলি যেটা শটকার্ট ৫মিনিট লাগে আর লম্বা রাস্তা দিয়ে আসলে ১৫ মিনিট এর মত লাগে। তার প্রাইভেট থাকায় সে শর্টকার্ট রাস্তা ধরে আর হালকা জগিং করতে করতে আসতেছিল।এমন সময় কিছু লোক তাকে পাকড়াও করে।আর বলতেছিল চোর চোর।এই বলেই তারা তাকে ধোলাই দেওয়া শুরু করে। বোঝেনই তো,বাঙালি বউয়ের রাগ ও চোরের উপর ঝাড়ে।চোর শুনলেই হল, সবাই ধোলাই দেওয়ার জন্য রেডি।
বেচারা পুরাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। কারন সে এমন পরিস্থিতি তে আগে পড়ে নি। তাই খানিক খন মার খায়। এরপর লোকজন গুলো তাকে টেনে হিচড়ে একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বেধে রাখে। তখন সে বুঝতে পারে যে আসলে কি হচ্ছে।তখন সে বলে আমি চোর নই,আমি সকালে হাটতে বেড়িয়েছিলাম।আমি চোরের ঘটনা কিছু জানিনা।কিন্তু কে কবে চোরের কথা বিশ্বাস করেছে। ফলে সে আরো খানিকটা ধোলাই খায়।
এরপর এই খবর পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।তখন এলাকার গন্যমান্য লোকেরা সেখানে যায়।তখন একজন তাকে চিনতে পারে৷ তখন উনি জিজ্ঞেস করে তার বাবার নাম।ছোট ভাই বাবার নাম বললে,উনি সেই লোকদের বলেন আপনারা এমনি এমনি কাকে ধরে রাখছেন।এ ভাল ছেলে,কিন্তু লোকগুলো বিশ্বাস করে না। তারপর সেই লোকটি ওর পরিচয় বিস্তারিত বলে এবং ছোট ভাইয়ের বাবাকে ফোন দেয়। তারপর ওর বাবা যায় এবং সেই গণ্যমান্য লোকেদের উপস্থিতিতে বিষয়টি মিমাংসা হয়।
এখন আপনারা হয়ত ভাবছেন লোকগুলো প্ল্যান করে এই কাজ করেছে।আসলে বিষয়টা তাও নয়।ঐ বাড়িতে চোর আসলেই ঢুকেছে।এলাকা টা একটু বস্তিমত।তাই লোকগুলো বের হতে হতে চোর কোন চিপায় গিয়ে লুকিয়ে পড়ে আর তাদের সামনে পড়ে সেই ছোট ভাই। আর সে যেহেতু জগিং করছিল তাই সবাই তাকেই চোর ভেবে নেয়। এখানে পুরো বিষয়টিই ভুল বোঝাবুঝির। তাও ছোট ভাইয়ের কপাল ভাল যে তাকে কেউ চিনতে পেরেছিল।নইলে আরো যে কত দুর্ভোগ ছিল তার কপালে।
OR
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
বিপদ মানুষের বলে কয়ে আসেনা। ঠিক তেমনি হয়েছে এই ছেলেটির ক্ষেত্রেও। সকালে ভালো মনে করে হাঁটতে গিয়ে চোর হিসেবে লোকের সন্দেহ করে পিটানি দিল। তাও তো ভালো মনে হয় অল্পের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। তাছাড়া সকালবেলা একা একা হাঁটাও একটু রিস্কতো বটেই। ছেলেটি সহজ সরল জন্যই হয়তো বুঝে উঠতে সময় লেগেছে। যাক অবশেষে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি এসে তাকে উদ্ধার করেছে জেনে ভালো লাগলো। আসলেই খুবই দুঃখজনক একটি ঘটনা।
হ্যা আপু। এই যুগে সহজ সরল হওয়াই বিপদ।