বারোদোলের মেলা - শেষ পর্ব
নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। আজকে মেলায় কাটানো মুহূর্তগুলোর শেষ পর্ব শেয়ার করছি আপনাদের সকলের সাথে।।
মেলা মানে যে সকলের সাথে দেখা, তা সত্যিই প্রত্যেকবার মেলা প্রমাণ করে দেয়। আমরা যখন মেলার মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছি, হঠাৎ করে দেখা হয় আমার বড় পিসির ফ্যামিলির সাথে। বড় পিসি, বড় পিসির মেয়ে, আমার দাদার বউ, তার ছেলে অর্থাৎ নিলয় ,সবাই একসাথে মেলা ঘুরতে গিয়েছে। আমাদের সকলকে দেখে তারাও খুব খুশি হলো। বিশেষ করে আমার পার্টনারকে দেখে।
তারপরে ওদের কে ধরে বেঁধে আমার পার্টনার নিয়ে গেল আইসক্রিমের দোকানে, কিছুতেই ওদেরকে টাকা দিতে দিল না, সকলের জন্য আইসক্রিম কিনে দিল, আমাকেও আইসক্রিম খাওয়ালো।
আসলেই ছোট ছোট ম্যাটারগুলো সত্যিই অনেক মূল্যবান। ও চাইলে এই ছোট্ট একটা কাজ নাও করতে পারত। কিন্তু এমন করাতে আমার পিসি যে কতটা খুশি হয়েছে, তা আমি বুঝতে পেরেছি। আমি পরবর্তীতে মায়ের কাছে গল্প শুনেছি পিসি মায়ের কাছে গল্প করছিল।
আইসক্রিম খাওয়ানো হয়তো কোন বড় ব্যাপার নয়, কিন্তু এই ছোট ছোট বিষয়গুলো মানুষের মনে দাগ কেটে যায়। একটা মানুষের সাথে আমরা কেমন আচরণ করছি এবং আমাদের কর্তব্য কি কি থাকছে সেগুলো সত্যিই সকলে খেয়াল করে। ও যে একটা ভালো ইমপ্রেশন তৈরি করার চেষ্টা করল ,শুধুমাত্র আমার জন্য ,তাই আমি প্রচন্ড খুশি হয়েছি। এরকম একটা ছেলের ওপর ভালোবাসা কেন আসবে না আপনারাই বলুন।
আইসক্রিম খাওয়া হয়ে যাওয়ার পর আমরা খেলাম কটন ক্যান্ডি । আমার ভাইয়ের সবথেকে পছন্দের খাবার কটন ক্যান্ডি, মেলাতে গেলে ও কটন ক্যান্ডি না খেয়ে যেন বাড়িতেই আসবে না ।তাই যখন খাচ্ছিলাম ,তখন ওর কথা বারবার মনে পড়ছিল।
মেলা ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ করে একটা দোকানে আমি আটকে গেলাম ।দেখলাম প্লেটে সাজিয়ে রাখা আমাদের বাঙালির খাবার দাবার। প্রথমে তো ভেবেছি ওরা প্লেট ধরে এইভাবে বিক্রি করছে। যেমন থালি হয় ।অনেকটা সেরকম। পরে শুনি ওটা একচুয়ালি একটা আর্ট। রেজিন এর কাজ করা রয়েছে ।তাতে আমি সত্যিই এত অবাক হয়ে গেলাম ।ওই দোকানেই মনে হয় আমি পাঁচ দশ মিনিট মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম এবং ওদের হাতের কাজ গুলো দেখছিলাম। এর আগে এই মেলাতে, আমি এরকম কখনোই দেখিনি। সেদিনকে দেখে আমি সত্যিই অবাক হয়ে গিয়েছি।
রাত বেশি হয়ে যাচ্ছিল ,তাই আমি এবার বাড়ি যাওয়ার জন্য জেদাজেদি শুরু করলাম। কিছুতেই দিদি আর দাদা ছাড়তে চাইছিল না ।কিন্তু তার সত্বেও বাড়ি যেতে হবে তাড়াতাড়ি। মাকে যেহেতু কথা দিয়েছি। অবশেষে ঠিক হলো আমি আর বৌদি অর্থাৎ আমার পার্টনারের দাদার বউ টোটো করে আমাদের বাড়িতে যাব। তারপর সেখান থেকে দাদা বৌদিকে তুলে নিয়ে বাড়ি রওনা দেবে।
সেই মতোই আমরা দুজন মিলে টোটো করে বাড়ির দিকে রওনা হলাম। আর ওদিকে ওরা দুজন চলে গেল অন্যদিকে ।পরে শুনি ওরা মোমো কিনতে গিয়েছে। আমাদের কৃষ্ণনগরের জজ কোর্টের ঠিক উল্টোদিকে একটা মোমোর দোকান বসে বিকেল থেকে। ওই দোকানের মোমো দারুন খেতে । তাই ওরা মোমোর দোকানে মোমো কিনতে চলে গিয়েছিল। এদিকে আমাদের বাড়িতে আসতে আসতে 10-15 মিনিট লেগে গেল ।যেহেতু রাস্তায় ভিড় ,সকলেরই মেলার উদ্দেশ্যে যাওয়া, তাই মেলা থেকে ফিরতে ওই রাস্তাটুকু বেশ জ্যাম হয়।
আমি বাড়িতে এসে আগে ফ্রেশ হলাম ,তারপর বৌদিও ফ্রেশ হয়ে নিল। বৌদির ভালো নাম অনিষা। আমি ওকে দিদি বলে ডাকি। যাইহোক তারপর আমি মেলা থেকে যে কটা জিনিস কিনেছি, মাকে বার করে দেখালাম ।সামান্য কিছু জিনিস । চিনেমাটির দোকান থেকে একটা বড় কাপ ,এগুলোকে হয়তো bowl কাপ বলে। আর আরো তিনটে সুন্দর কাপ কিনেছিলাম, সেটাও মাকে বার করে দেখালাম। এর সাথে কিছু ক্লিপ কিনেছিলাম। সেটা দেখালাম।
এসব দেখাতে দেখাতে দেখলাম ওরা দুজন ছেলে চলে এসেছে ।তারপর বাবাকে ফোন করে বলা হয়েছিল। তাই বাবাও চলে আসলো। আমরা সবাই মিলে ভাগ করে মোমো প্লেটে তুলে নিলাম। বাবার কথামতো সবাই মিলে চলে গেলাম ছাদে। ছাদে মোমো খেতে খেতে বেশ গল্প হচ্ছিল ।আর দুর্দান্ত হাওয়া দিচ্ছিল বলে পরিবেশটাও সুন্দর লাগছিল।
এসব খাওয়া দাওয়ার পরে ওরা যখন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেবে, তখন আমার বাবা আবার ওদেরকে আটকে নিল, বলল আরো কিছুক্ষণ থাকতে হবে এবং রাতের খাবারটা এখান থেকেই খেয়ে যেতে হবে। সকলের জন্য রুটি আর মিকস ভেজ অর্ডার করা হলো। এর সাথে ছিল মিষ্টি। তারপরে তো সবাই মিলে বেশ আনন্দ করে খাওয়া দাওয়া নানান ধরনের গল্প আড্ডা চলেছে বেশ কিছুক্ষণ।
ওদের বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় পৌনে এগারোটা বেজে গিয়েছিল। আপনাদের সাথে সমস্তটা শেয়ার করতে পেরে বেশ ভালো লাগলো। আজকে এখানেই শেষ করছি ।সকলে ভালো থাকুন।।
Your post has been supported by SC-05. We support quality posts, quality comments anywhere, and any tags