আমসত্ত্ব রেসিপি
নমস্কার বন্ধুরা, সকলে কেমন আছেন? আশা করছি সকলেই ভালো আছেন। আজকে আবারো নতুন একটা পোস্ট নিয়ে হাজির হব আপনাদের মাঝে আশা করি সকলেরই ভালো লাগবে।
আজকে আপনাদের মাঝে শেয়ার করব আমসত্ত্ব রেসিপি। এর আগে কখনো আমি আমসত্ত্ব বানায়নি বা বলতে পারেন বানানোর চেষ্টাও করিনি। প্রত্যেক বছর আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে প্রচুর পরিমাণে আম আনা হয়। কিন্তু সেগুলো আশেপাশের বাড়িতে বিলি করে দেওয়া হয়।এছাড়া আমি নিজেই বাদ বাকি সমস্ত আম খেয়ে ফেলি। আম খেতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। এবছরে আমের ফলন খুবই বেশি পরিমাণে হয়েছে। বাজারেও আম একদম কম দামে বিক্রি হচ্ছে। গ্রামের বাড়ি থেকে আম পেড়ে আনতে আনতেই অনেক সময় আমগুলো একটু বেশি গলে যাচ্ছে অথবা চাপে নরম হয়ে যায়। আমরা অনেক সময় আম একটু বেশি নরম হয়ে গেলে সেগুলো যদি ছাড়ানো না যায় তাহলে ফেলে দিই। কিন্তু এ বছরেই ভাবলাম সেগুলো যদি ফেলে না দিয়ে কিছু বানানো যায় তাহলে বেশ ভালো হয়। এই প্রথমবার আম দিয়ে বেশ কয়েকটা নতুন নতুন জিনিস আমি তৈরি করেছিলাম ।আসলে এগুলো আমি বাড়িতে কোনদিনই তৈরি করিনি ।তাই আমার কাছে নতুন। অনেকের কাছে নতুন নাও হতে পারে।
ছোটবেলাতে যখন ফলের দোকানে যেতাম তখন ওই হলুদ প্যাকেটে মোড়ানো আমসত্ত্ব দেখে ভীষণ লোভ লাগতো। তখন বুঝতাম না যে ওর প্যাকেটের ভিতরে কি পোড়া রয়েছে। তখন বাড়ির লোক বলতো ওগুলো আমসত্ত্ব। অনেক সময় প্রসাদের থালা তে আমসত্ত্ব দিলে ভাবতাম সেটা কখন খাব। অন্যান্য বাড়িতে কেউ প্রসাদ দিয়ে গেলে প্রসাদে আমসত্ত্ব দিয়েছে কিনা সেটা আমি আগেই খুঁজি। আমসত্ত্ব খেতে আমার খুবই ভালো লাগে। তবে এই প্রথমবার নিজে কোনরকম উপকরণ ছাড়াই বাড়িতে আমসত্ত্ব বানিয়ে ফেলেছিলাম। বেশ কয়েকদিন যেমন প্রচন্ড গরম পড়েছিল। তার সাথে কড়া রোদ। তাই সেই রোদটাকে কাজে লাগিয়ে আমি আমসত্ত্ব বানিয়ে ফেলেছি।
তবে প্রথমবারই এত সুস্বাদু হবে আমি একদমই বুঝতে পারিনি। বাড়ির সকলেরই খেয়ে ভীষণ ভালো লেগেছে। আসলে বাড়িতে বানানো যেকোনো জিনিসই খেতে ভীষণ ভালো লাগে। আমার শ্বশুর মশাই সচরাচর কোন জিনিস একদমই খেতে চান না ।কিন্তু সেদিন দেখলাম আমার বানানো আমসত্ত্ব খেয়ে ভীষণ খুশি হয়েছিলে। কারণ আমি আমসত্ত্বের মধ্যে কোন কিছুই ব্যবহার করিনি। প্রচন্ড রোদ ছিল তাই আমসত্ত্ব গুলো খুব ভালো শুকিয়ে ছিল। এই সময় আমসত্ত্ব বানিয়ে স্টোর করে রেখে দিলে সারা বছর ধরেই খাওয়া যায়। আমের সিজন চলে গেলে আর বানানো যাবে না।আমসত্ত্ব যেকোনো আমের তৈরি করা যায়।
চলুন তাহলে শুরু করি আজকের আমসত্ত্ব রেসিপি:-
নং | সামগ্রী | পরিমাণ |
---|---|---|
১ | পাকা আম | ১ কেজি ৫০০ গ্ৰাম |
২ | চিনি | পরিমাণ মতো |
প্রথম ধাপ
প্রথমেই আমি বেশ কয়েকটা আম নিয়ে নিয়েছিলাম। আমি আমার প্রয়োজন মতো আম নিয়েছি। আপনারা আপনাদের প্রয়োজন মত আম নেবেন। এরপর আম গুলোকে খুব ভালো করে ধুয়ে নিয়েছি। খানিকক্ষণ জলে ভিজিয়ে রেখেছিলাম। খানিকক্ষণ জলে ভিজিয়ে রাখলে আমের বোটা থেকে আঠা বেরিয়ে যায়।
দ্বিতীয় ধাপ
এরপরে আমের পিছন দিকটা একটা ছুরি দিয়ে কেটে নিয়েছি দিয়ে আমটা চাপ দিয়ে আমের সমস্ত অংশটা বের করে নিয়েছি। আপনারা চাইলে খোসা ছাড়িয়ে আমের সমস্ত রস বের করতে পারেন। আমি খুব সহজভাবেই আমের পিছনের অংশটা কেটে চাপ দিয়ে আমের রস বের করে নিয়েছিলাম।
তৃতীয় ধাপ
এরপর সমস্ত আম একই পদ্ধতিতে রস বের করে নিয়ে আমগুলো খুব ভালোভাবে হাত দিয়ে চটকে নিতে হবে। চটকে আমের আঁটি গুলোকে ফেলে দিয়েছি যাতে কোন দলা ভাব না থাকে তাই খুব ভালোভাবে চটকে নিতে হবে।
চতুর্থ ধাপ
এরপর পরিমাণমতো চিনি এড করে দিয়েছিলাম। চিনি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। আপনারা চাইলে গুঁড়ো চিনি ব্যবহার করতে পারেন।
পঞ্চম ধাপ
এরপর গ্যাস অন করে আমের পাত্রটা বসিয়ে দিতে হবে। দুই থেকে পাঁচ মিনিট খুব ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে ।একদম মিডিয়াম ফ্লেমে। মিডিয়াম ফ্লেমে না দিলে আমের রস যখন ফুটবে চারিদিকে ছড়িয়ে যেতে পারে। যখন আমের রসটা ফুটবে তখন চামচ দিয়ে নাড়াচাড়া করতে হবে না হলে পাত্রের নিচে লেগে যেতে পারে।
ষষ্ঠ ধাপ
এরপর গ্যাস থেকে নামিয়ে খানিকক্ষণ রেখে দিতে হবে, ঠান্ডা করার জন্য । ঠান্ডা হয়ে গেলে একটা ছাকনা নিয়েছি ছাকনার সাহায্যে আমের রসটা ভালো করে ছেঁকে নিতে হবে।
সপ্তম ধাপ
এদিকে আমি দুটো স্টিলের থালা নিয়ে ছিলাম। থালাতে সরিষার তেল সাড়া থালায় মাখিয়ে নিয়েছিলাম। সরিষার তেল না দিলে আমসত্ত্ব থালায় লেগে যাবে । থালা থেকে উঠতে চাইবে না।এবারে আমের রসটা থালার চারিদিকে ছড়িয়ে ঢেলে দিতে হবে। খুব পাতলা করে আমের রস ঢালতে হবে। মোটা করে দিলে শুকাতে দেরি হয়।
অষ্টম ধাপ
এবারে থালাটা রৌদ্রে রেখে দিতে হবে ।এক থেকে দুই দিন কড়া রোদে ফেলে রাখলেই খুব ভালো করে শুকিয়ে যাবে।
তৈরী
থালা থেকে একটা ছুরির সাহায্যে পিস পিস করে তুলে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে আমসত্ত্ব ।আপনারা যে যার মত পছন্দ অনুযায়ী তুলে নেবেন।
আশা করি আমার এই ঘরোয়া পদ্ধতিতে আমসত্ত্ব তৈরি আপনাদের সকলেরই ভালো লাগবে। আমি বিশেষ কিছু উপকরণ ব্যবহার করিনি। একদম অল্প সময়ের মধ্যে আমসত্ত্ব তৈরি করেছিলাম। খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু হয়েছিল। তবে আমার মনে হয় দোকানের থেকে কিনে খাওয়ার চেয়ে বাড়িতে তৈরি করে খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভীষণ উপকারী। আমাদের বাড়িতে সকলেরই ভীষণ পছন্দ। এছাড়া আমার বোনেরা যখন শুনেছে আমি বাড়িতে আমসত্ত্ব বানিয়েছি তাদেরও বায়না তাদের জন্য যেন রেখে দিই। ছোট থেকে কাউকে কখনো দেখিনি আমাদের বাড়িতে এভাবে আম সব তো তৈরি করেছে। আমিও প্রথমবার বিশেষ কোনো রকম উপকরণ ছাড়াই এত ভালো আমসত্ত্ব বানিয়েছি, আমারও ভীষণ ভালো লেগেছে।
আজ এই পর্যন্তই। আবার অন্য কোন রেসিপি নিয়ে হাজির হব। সকলে ভালো থাকুন ।সুস্থ থাকুন।
আমি আমের সাথে সাথে আমসত্ত্ব খেতে খুব পছন্দ করি ।আমসত্ত্ব বানানোর ইচ্ছে করে কিন্তু রোদের অভাবে সাহস পাই না।যাদের প র্যাপ্ত রোদ আছে তারা আপনার রেসিপি অনুসরণ করে খুব সহজেই আমসত্ত্ব বানিয়ে ফেলতে পারবে।
চমৎকার এই রেসেপিটা শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
ভালো থাকবেন সবসময় ।
আমসত্ত্ব আমার অনেক প্রিয় একটি খাদ্য আমি এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে আমসত্ত্ব নিয়ে আসি আমার খালা তৈরি করে দেয় আগে যখন আম্মা ছিলো তখন আম্মা তৈরি করে মানুষের মাধ্যমে এখানে পাঠিয়ে দিতো এবং বাড়ি থাকতে তো আম্মা অনেক সুন্দর ভাবে আমসত্ত্ব তৈরি করত যেটা খেতে সত্যি অনেক সুস্বাদু ও ভালো লাগতো আপনার টা ও দেখে মনে হচ্ছে খেতে অনেক সুস্বাদু হয়েছে ধন্যবাদ সুন্দর একটি রেসিপি আমাদের মাধ্যমে শেয়ার করার জন্য।
উফ কত সুন্দর দেখেই তো লোভ লেগে যাচ্ছে,, আমসত্ত্ব পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজলে খুব কমই পাওয়া যাবে আমি তো ভীষণ রকমের পছন্দ করি।
প্রতিবছরের মতো এ বছর আমসত্ত্ব দেওয়া হয়েছে মাঝেমধ্যে খাওয়া পরে, আমসত্ত্ব খেতে ভীষণ ভালো লাগে আমার। ধন্যবাদ খুব সুন্দর একটা রেসিপি শেয়ার করার জন্য