কার মৃত্যু কখন, কিভাবে হবে, সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ জানেন না

in Incredible India8 months ago

হ্যালো বন্ধুরা , সবাই কেমন আছেন? গতকাল রাত টা জীবনের অন্যতম বিভীষীকা ময় এক রাত পার করেছি। হয়তো আজকের লেখার টাইটেল দেখে আপ্নারা কিছুটা অনুধাবন করতে পারছেন আমি কি লিখতে চাচ্ছি। গতকাল রাতের সেই দুঃসহ স্মৃতি আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি।

pexels-rahulp9800-2086748.jpg
Source

রাতে খাবার খেয়ে বিছানায় গিয়ে ডায়েরি লিখছিলাম। রাত তখন সাড়ে এগারোটা। গিন্নি আর মেয়ে ঘুমাচ্ছে। হটাত দরজায় জোরে জোরে নক শুনে তারাতারি ঊঠে ডোর ভিউওয়ার দিয়ে তাকিয়ে দেখি পাশের ফ্ল্যাটের দুলাল ভাই নক করছে। বুঝতে পারলাম বড় কোন বিপদ। তারাতারি দরজা খুলেই দেখতে পেলাম তার বাসার ফ্লোরে তার শাশুড়ি মা পড়ে আছে। পাশেই ভাবী আর ভাবীর বোন কান্নাকাটি। কি হয়েছে জিগেস করার আগেই দুলাল ভাই জানালেন, উনার মা রুটি খাচ্ছিলেন, হটাত করে খাবার গলায় আটকে গিয়ে শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, এর পর অজ্ঞান। এমন পরিস্থিতিতে কি করতে হয় কেউই বুজতে পারছিল না, আমি তারাতারি গিন্নিকে ডেকে তুললাম, সে মেডিকেল লাইনে পড়াশোনা করেছে, তারাতারি বিপি মেশিন নিয়ে প্রেসার চেক করতে লাগলো। তার মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারলাম কিছু একটা গরমিল হচ্ছে, প্রেসার পাচ্ছে না দেখে থারমিন নিয়ে গলা ,বুকে দেখতে লাগলো। শার্ট বিট তখনো সচল আছে, যা করার দ্রুত করতে হবে।

জ্ঞান ফেরানোর জন্যে চোখে মুখে পানি দেয়া, কানের পাশে থেকে মাথার পাশে জোরে জোরে চাপ দেয়া, বুকে চাপ দেয়া থেকে শুরু করে সম্ভাব্য সব কিছুই করা হলো কিন্তু কোন ভাবেই হুস ফিরছে না।

তারাতারি পাশের বাসার এক ভাইকে রিকুয়েস্ট করলাম, উনার নিজস্ব গাড়ি ছিল, যে করেই হোক রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে, উনিও সাড়া দিয়ে দ্রুতই গাড়ী নিয়ে বাসার সামনে চলে এলেন, ৬ তলা থেকে নিথর দেহ নীচে নামাতে আমাদের ৪ জন মানুষ রীতিমত হিমশিম খেলাম। কোনরকম গাড়ীতে তুলে পাঠালাম হাসপাতালে।

pexels-pavel-danilyuk-6754163.jpg
Source

সিড়ি দিয়ে নামানোর সময়ই গিন্নি আমাকে জানালো এই রোগির কামব্যাক করার সম্ভাবনা অনেক কম। সবাই মিলে উপরওয়ালা কে ডাক্লাম, রাতের রাস্তা ফাকা থাকায় রোগীকে নিয়ে দ্রুতই হাসপাতালে যাওয়া হল, আমি ফোনে যোগাযোগ রাখছিলাম। হলি ফ্যামিলির ইমারজেন্সি ডাক্তার জানালো ২০% সম্ভাবনা আছে, দ্রুত ইসিজি করে লাইফসাপরটে নিতে হবে, ইসিজি করতে গিয়ে ডাক্তার জানালো রোগী বেচে নেই।

দুলাল ভাই যখন জানালো এই সংবাদ আমার গিন্নি কান্না শুরু করে দিয়েছে, কেননা সন্ধ্যা অব্দি এই আন্টি নাকি আমার বাসাতেই ছিল, মেহেকের সাথে গল্প করছিল। কোন রকম অসুখ বিহীন সুস্থ একটা মানুষ এত অল্প সময়ের ব্যবধানে পৃথিবী থেকে চলে গেল, এই সত্যটা আসলে আমাদের কারোরই বিশ্বাস হচ্ছিল না।

মৃত্যু কতটা নিষ্টুর তা আজ খুব কাছে থেকে দেখলাম। জন্ম হলে মরতে হবে এটাই চিরন্তন সত্য। আমরা অনেকেই মরণকে ভুলে যাই, মনে করি এখন তো সুস্থ, বয়স কম। আরো মেলাদিন বাচবো, কিন্তু এমন মৃত্যু দেখার পর আসলে বুঝতে পারছি যেকোন মুহুরতেই আমাদের চলে যেতে হতে পারে।

মানুষ হয়ে কত মানুষকে আমরা কষ্ট দেই, কত জনকে কটু কথা বলি, কতজনের পেছনে তার নিন্দা করি, কি হবে এগুলো দিয়ে। মরণ যখন চলে আসবে তখন তো তাদের থেকে ক্ষমাটাও চাওয়ার সময় পাব না। হয়তো নিজের অজান্তে কতজনকে কত কষ্ট দিয়েছি, আমাদের সকলের উচিৎ সবার সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা, সুযোগ পেলে খারাপ ব্যবহারের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাওয়া, কেউ আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করলে তাকেও নিজ থেকে ক্ষমা করে দেয়া।

pexels-brettjordan-6037808.jpg
Source

অনেক মানুষকে মরতে দেখেছি, আপনজনকেও হারাতে দেখেছি, কিন্তু চোখের সামনে এখন সুস্থ মানুষ্কে এভাবে মরতে দেখে নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিল।

এই আন্টির বড় মেয়ে মানে দুলাল ভাইয়ের স্ত্রী আমাদের পাশের ইউনিটে থাকে। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে উনার ছোট মেয়েকে নিয়ে এই বাসার চারতলায় ঊঠার কথা ছিল। এক মেয়ে ৬ তলায় থাকবে, অন্য মেয়ে চারতলায়। নাতি-নাতনি নিয়ে সুখে দিন পার করবে। কিন্তু এক ঝরে সব শেষ হয়ে গেল।

তিনি আমার আপনজন নন, রক্তের কোন সম্পর্ক নেই, তার পরেও ওনার চলে যাওয়া মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। বার বার একটা কথাই মনে পরছে, আমাদের কবে কখন কোথায় কিভাবে মৃত্যু হবে তা উপরওয়ালা ছাড়া কেউ জানে না। মরণের সময় একজন ভালো মানূষ হিসেবে যেন মরতে পারি এটাই চাওয়া। সবাই ভালো থাকবেন।

Sort:  
Loading...
 8 months ago 

আপনার লেখাটা পড়ে খারাপ লাগলো আর এটাও উপলব্ধি করলাম যে আমাদের জীবন কতই না অনিশ্চিত। জন্ম ও মৃত্যু ঈশ্বরের হাতেই থাকে। এই অনিশ্চিত জীবনে আমাদের কখন কি হবে এটা কল্পনাও করতে পারি না।

তবে আপনার পোস্টটা পড়ে আমার দাদুর কথা মনে পড়ে গেলো কারন আমার ভাত খাওয়ার সময় আমার দাদুর গলায় ভাত বেঁধে যেতো এবং তখন অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যেত সেটা দেখে আমাদের অবস্থাই খারাপ হয়ে যেত। এই সমস্যার জন্য ডাক্তারও দেখানো হয়েছিলো তবে কোনো লাভ হয়নি।ভালো থাকবেন।

 8 months ago 

আপনার লেখাটা পড়ে মনটাই৷ খারাপ হয়ে গেল। আমার শশুড়কে আমি এভাবে চোখের সামনে মারা যেতে দেখেছি। সুস্থ একজন মানুষ বাজার করে এসে পরে গেলেন তার মিনিট দুয়েক এর মাঝে মারা গেলেন।তাই জানি এই সময় কতটা অসহায় লাগে।
মাঝে মাঝে রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও মানুষ খুব আপন হয়ে উঠে। তাদের অভাবটা পীড়া দেয় আপনজন হারানোর মতো করেই।