Incredible India monthly contest of May #1| How do we control the loneliness of our parents?

বাবা মায়ের ভালোবাসা পূর্ণতা পায় তার সন্তানের মধ্য দিয়ে ।তাইতো সংসারের এই বন্ধন আরো মজবুত করার জন্য তাদের সংসারে সন্তান নিয়ে আসে । সেই সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখানো থেকে শুরু করে একটু একটু করে হাঁটতে শেখা, তোদেরকে প্রতিষ্ঠিত করা সকল পিতা মাতারই স্বপ্ন থাকে । এমন একটি বিষয় নিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য আমাদের কমিউনিটি কর্তৃপক্ষকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাতে চাচ্ছি ।

কথা না বাড়িয়ে আমি মূল পর্বে চলে যাচ্ছি। প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুসারে স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের তিনজন বন্ধুদের @shahid76 , @arjinarahman & @leicorp1 কে আমন্ত্রণ জানাতে চাচ্ছি । আশা রাখি তাদের পিতা মাতার সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য আমাদের সাথে শেয়ার করবেন ।

আমাদের জীবনের তিনটি অধ্যায় কৈশোর, যৌবন ও বার্ধক্য। শিশুকালে আমরা বাবা মায়ের হাত ধরে বড় হই ,যৌবনে আমরা প্রতিষ্ঠিত হয়ে নিজের জীবন সঙ্গী পেয়ে যাই। বৃদ্ধ বয়সে আমরাই আবার সেই বাবা-মায়ের পর্যায়ে চলে আসি।আমাদের এই জীবন চক্রে কৈশোর এবং বার্ধক্য দুটিতে অনেক মিল লক্ষকরা যায়। ছোটবেলা আমরা যেমন বাবা-মা ছাড়া চলতে পারিনা তেমনি বৃদ্ধ বয়সে এসেও প্রতিটি বাবা-মাই তার সন্তানকে খোঁজে ।

হ্যাঁ আমিও মনে করি, সময়ের সাথে সাথে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানের উপস্থিতির জন্য আকুল হয়ে ওঠে ।আমি এর সাথে সম্পূর্ণ একমত প্রকাশ করছি কারণ বাস্তব জীবনে আমিও তাই দেখতেছি। আমার বৃদ্ধ বাবা-মা আছেন। বাবাকে দেখেছি সে অফিস করেছে , আমাদের পড়াশোনার খোঁজখবর নিচ্ছে , আবার আমাদের গ্রামের বাড়ি গিয়ে সব কিছু দেখে আসছেন। আবার দেখা গেছে ৫ দিন / ১০ দিন ট্রেনিংয়ের জন্য অনেক দূরে গিয়েছেন। আমাদের প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তারা অনেক পরিশ্রম করেছেন ।আমরা দুর্ভাগ্যবশত দিদা- দাদু এবং দাদু-ঠাকুরমা কাউকে পায়নি । বাবা-মা আমাদের মাঝে তাদেরকে খুঁজে পেতেন ।

আমার বাবা সচেতন একজন ব্যক্তি ছিলেন এবং তিনি সততার সাথে কর্মজীবন পার করেছেন। আমাকে খুব অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। পড়াশোনার জন্য মায়ের কাছে অনেক বছর রেখেছিলো। মা চেয়েছিল তার কাছে রেখে মেয়েকে সমস্ত কিছু শিখে তারপরে শ্বশুরবাড়িতে পাঠাবে, তাই হলো। আমরা তিন ভাই- বোন, সবাই সবার কর্মস্থল ও সংসার জীবন নিয়ে সম্পূর্ণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছি ।আমরা চাইলেও বেশিদিন বাবা-মায়ের কাছে থাকতে পারিনা। তোদের খুব ইচ্ছে সকল সন্তান একত্রে হোক, একত্রে থাকুক ও ভালো থাকুক।

এইতো সেদিন মা আমার বাসায় এসে প্রায় ৪০ দিনের মতো থেকে গেল । যাবার সময় মা খুব কান্না করলো।এক সন্তানকে রেখে অন্য সন্তানের কাছে আসলে, সেই রেখে আসা সন্তানের জন্য মায়ের মন কাঁদে। প্রতিটি সন্তান হলো বাবা-মায়ের এক একটা শরীরের অঙ্গ ।যে সন্তানটাই দূরে যাক তার জন্য অবশ্যই মন কাঁদে। এই বৃদ্ধ বয়সে এসে তারা সকল সন্তানদের কাছে পেতে চায় ।

সকল সন্তানকে একত্রে কাছে পাওয়ার ইচ্ছে আমার শাশুড়ি মায়েরও ছিল ।আমার ভাসুর, দেবর তারা পাঁচ ভাই ।সবাই সরকারি চাকরিজীবী হওয়ার জন্য সকলের পরিবার নিয়ে তার কর্মস্থালে থাকেন । মা বেশিরভাগ সময় গ্রামের বাড়িতে থাকতেন এবং সব ছেলেদের বাসায় মাঝে মাঝে আসতেন। আমাদের সকলের একত্রে বাড়ি যাওয়া হত না ।

মায়ের খুব আশা ছিল বিশেষ করে শ্বশুড় বাবার মৃত্যুবার্ষিকীতে তার পাঁচ ছেলে এবং দুই মেয়ে সবাই যদি একত্রিত হতে পারতো । আমরাও চেষ্টা করতাম তার আশাটা পূর্ণ করার । কিন্তু সব সময় হয়ে উঠতো না কারণ সরকারি চাকরি মানে ছুটি নিয়ে অনেক ঝামেলা থাকে ।

আমরা যখন হাঁটতে শিখিনি তখন বাবা-মা প্রথম আমাদের হাত ধরে হাঁটতে শিখিয়েছেন, চলতে শিখিয়েছেন এবং আমাদেরকে ভবিষ্যৎ গড়তে সহযোগিতা করেছেন। আজ বাবা মা অবসর নিয়েছে তার কর্মস্থল থেকে এবং সংসারের দায়িত্ব থেকেও ।তাদের এই অবসর জীবনের দিনগুলো যেন অনেক বড় হয়। তাদের এই একাকীত্ব দূর করার জন্য তারা সন্তানের ভালোবাসা খুঁজে ।

বয়সের ভারের জন্য হয়তো সে এখন ততটা কাজও করতে পারছে না ,কোথাও দূরে ঘুরতে যেতে পারছে না তাই এই সময় তারা ছেলে-মেয়ে, নাতি- নাতনি নিয়ে আনন্দে সময় কাটাতে চায়। হয়তো আমরা অনেক ব্যস্ত ।তারপরও ,প্রতিটি সন্তানের উচিত আমাদের এই কর্মব্যস্ত জীবন থেকে কিছুটা সময় হলেও বাবা-মায়ের সাথে কাটানো, তাদের একাকীত্বতা দূর করা ।

তবে কিছু কিছু ঘটনার শুনে সত্যি খুব অবাক লাগে বিশেষ করে বৃদ্ধাশ্রম গুলোতে গেলেপরে বোঝা যায়, এই পৃথিবীতে বাবা-মা কত অসহায় ।বাবা মা অনেক কষ্ট করে সন্তানকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সন্তানদেরকে ডাক্তার ,ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রথম পর্যায়ের কর্মকর্তা তৈরি করেছেন ।সন্তানরা দেশ-বিদেশে ভালো ভালো স্থানে বসবাস করেন কিন্তু তাদের এই বিশাল অট্টালিকার ভিতরে বাবা-মাকে রাখার মত একটু জায়গা হয় না। তাইতো আজ বাবা-মা বৃদ্ধাশ্রম।

সেদিন এক সাক্ষাৎকারে দেখে ছিলাম একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অবসরে আসার পরে কিছুদিন তার সন্তানদের সাথে ছিল কিন্তু সন্তানদের অবহেলা সহ্য করতে না পেরে তিনি স্বেচ্ছায় বৃদ্ধাশ্রমে চলে এসেছেন। তিনি স্বেচ্ছায় তারা একাকিত্ব জীবন গ্রহণ করেছেন। সারা জীবন ব্যাংকে গ্রাহকদের সঞ্চয় হিসাব নিকাশ করলেও তার নিজের জীবনের হিসেবে ভুল করে গেছেন।

এরকম হাজারো বাবা-মায়ের গল্প আছে। তবে আমরা অনেক ক্ষেত্রে দেখতে পাই , যে সন্তানরা কম শিক্ষিত আছেন তারা বৃদ্ধ বাবা -মাকে কাছে রাখেন ‌। বৃদ্ধাশ্রমে বেশিরভাগ বাবা-মাই হলেন প্রতিষ্ঠিত সন্তানের বাবা-মা। শহর থেকে গ্রামাঞ্চলের বাবা-মায়েরা একাকিত্বতে কম ভোগেন কারণ তারা তাদের সন্তানের সাথে থাকে।

আমাদের উচিত এই বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মাকে সঙ্গ দেওয়া ,তাদের ভালো মন্দের বিষয়টি আমাদের খোঁজখবর নেওয়া উচিত । তাদের দামি দামি পোশাক, অলংকার প্রয়োজন হয় না, তাদের কাছে সবথেকে দামি হলো তাদের সন্তান। সে সন্তানকে তারা কাছে পেতে চায় । বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মা সন্তানের মত হয়ে যায় তাই সন্তান হিসেবে আমাদের উচিত বাবা-মাকেও সন্তানের মত ভালবাসা ।

জীবনের শেষ বয়সে এসে বাবা-মা একাকী হয়ে যায়। এই একাকিত্বের অনেক কারণ রয়েছে । প্রধান কারণ গুলো মধ্যে একটি হলো ,সন্তানরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের বাহিরে চলে যাচ্ছে। কখনো বা দেশের ভিতরে থেকেও সে কর্মস্থলকে এত গুরুত্ব দিচ্ছে যে বাবা মায়ের প্রতি লক্ষ্য রাখার মত তিনি সুযোগ পাচ্ছেন না বা চেষ্টাও করছেন না ।

যখন বাবা মা তার কর্মস্থল থেকে অবসরে চলে আসে তখন তিনি একাকীত্ব অনুভব করে । সকাল নয়টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত অফিস টাইম ছিল , তখন সে ব্যস্ত ছিল ।এখন তার কোন অফিস টাইম থাকে না ।সে সারাদিন ফ্রি থাকে কিন্তু সন্তানরা তো আর ফিরে থাকেন না। তারা সবাই যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ।অনেক সময় দেখা যায় অবসরে আসার পরে বাবা মা তারা তাদের মত গুছিয়ে নিতে চেষ্টা করে ।হ

হঠাৎ যদি একজনকে ছেড়ে অন্য জন চলে যায় তখন সে আরও বেশি একাকীত্ব হয়ে পারে। জীবনসঙ্গীকে হারিয়ে তখন বাবা /মা সন্তানকে আঁকড়ে ধরতে চায়।সন্তানদের সাথে তার মনের কথা শেয়ার করতে চান।এই একাকীত্বের জন্য ঘুম কমে যাওয়া খাওয়া-দাওয়ায় অরুচি আসে এবং শরীরের নানা রোগ ব্যাধি বাসা বাঁধে ।এভাবে বাবা-মা একদিন আমাদেরকে ছেড়ে চলে যায় ।

সকল বাবা মা ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক ।সকল বাবা-মায়ের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি ।সকলে ভালো থাকুন ও সুস্থ থাকুন ।বাবা-মাকে ভালোবাসুন। আমাদের দেখেই আমাদের সন্তানেরা শিখবে ।