এক অন্য রকমের দোল উৎসব

নমস্কার বন্ধুরা। সকলে কেমন আছেন? আজকে মোবাইল গ্যালারি ঘাটতে ঘাটতে বেশ কিছু পুরনো ফটো চোখে পড়ল। এই এক একটা ফটোকে কেন্দ্র করে কত শত স্মৃতি যে মনের মধ্যে সযত্নে তোলা আছে তা হয়তো বলে কিংবা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। আজকে আমি আপনাদের সাথে সেই স্মৃতি সম্ভার থেকেই দু'বছর আগের দোল উৎসবের কিছু সুন্দর মুহূর্ত শেয়ার করব। আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে।

ছোটো থেকেই দোল উৎসব আমার খুব পছন্দের। রং মেখে ভুত সেজে পাড়ার ছেলেমেয়েদের সাথে ছোটাছুটি করা এক দারুণ আনন্দের ব্যাপার। তাছাড়া যে পাড়ায় বড় হয়ে উঠেছে সেই পাড়ায় অনেক সমবয়সী ছেলে-মেয়ে থাকার ফলে এই উৎসবটা আমরা আরো দ্বিগুণ উপভোগ করেছি। বড়ো হওয়ার সাথে সাথে তার প্রকৃতি পরিবর্তন হলেও দোল খেলা কিন্তু এখনও আমার খুব পছন্দের।

তবে ২০২৪ এর দোল উৎসব টা একটু ভিন্ন ছিল। সেবার আমাদের কৃষ্ণনগরের একটি নামিদামি রেস্টুরেন্টে এই দোল উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই বারই ছিল তাদের প্রথম উদ্যোগ। তাই আমার হবু বরের খুব সখ হল সেখানে যাওয়ার। প্রতিবছরই তো আমরা বাড়িতে কিংবা পাড়ার মধ্যেই রং খেলি। তাই আমারও মনে হয়েছিল একবার অন্তত এই ভিন্ন ধরনের দোল উৎসবে অংশগ্রহণ করা যেতে পারে। এই দোল উৎসব উপলক্ষ্যে সেই রেস্টুরেন্টে ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ এর ব্যবস্থা ছিল। সেই সাথে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ও আয়োজন করা হয়েছিল। মাথাপিছু টিকিটের মূল্য ছিল ভারতীয় মূল্যে ৩৫০ কিংবা ৪০০ টাকা। মানে মোটামুটি ৩৫ Steemit বা ৪০ Steemit। যদিও এই মুহূর্তে আমার সঠিক মনে পড়ছে না। যাই হোক সমস্ত দেখেশুনে তিনটে টিকিট কেটে নেওয়া হল। তারপর দোল উৎসবের দিনে ওদের বাড়িতে গিয়ে প্রথমেই ঠাকুমাকে পায়ে আবির দিয়ে প্রণাম করে নিয়েছিলাম। আমার শ্বাশুড়ি মা এবং হবু বর দুজনেই ঠাকুমাকে আবির দিয়ে প্রণাম করেছিল।

আমাদের সাথে ওর মাকেও নিয়ে নিয়েছিলাম কারণ আমাদের মতো ওনারও তো ইচ্ছে করে যেতে। তাছাড়া একদিন একটু ঘুরে এলে মনটা ভালো লাগবে। তাই আমরা প্রথম থেকেই ভেবে রেখেছিলাম শাড়ি পরে যাব। তাই ওনাকে আমি শাড়ি পছন্দ করে দিয়েছিলাম। সেই সাথে ম্যাচিং করে গলার হার দিতে চেয়েছিলাম তবে দোকানে ওই রঙের জুয়েলারি পাইনি। তাই আমার কাছে থাকা একটা জুয়েলারি দিয়েছিলাম। সেই সাথে আমি মাথায় ফুল দিয়েছিলাম তাই ওনার জন্য ম্যাচিং করে ফুল নিয়ে নিয়েছিলাম। মাথায় ফুল বলতে একটু লজ্জা পেলেও, ওখানে গিয়ে যখন দেখছিল সবাই সেজে আছে তখন বেশ আনন্দ পেয়েছিল। যাইহোক, সেখানে গিয়ে দেখি লম্বা লাইন পড়ে গেছে। আমরাও লাইনে দাঁড়িয়ে পড়লাম। তারপর টিকিট ভেরিফাই করা হলো। তারপর আমাদের হাতে একটা করে লাল ব্যান্ড পরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। সেই সাথে দুই প্যাকেট করে অর্গানিক আবির দেওয়া হচ্ছিল। বাইরের কোন আবির এখানে অ্যালাউ ছিল না। তারপর তিনজনে রেস্টুরেন্টের পিছন দিকে থাকা আম বাগানে আয়োজিত এই দোল উৎসবের স্পটে চলে গিয়েছিলাম।

আমরা গিয়েছিলাম সাড়ে নটার দিকে। তখন ব্রেকফাস্ট দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। ব্রেকফাস্টে ছিল লুচি, আলুর দম, চা। আর কিছু ছিল কিনা এই মুহূর্তে আমার মনে পড়ছে না। তবে আমি এগুলোই খেয়েছিলাম। ব্রেকফাস্ট এসে আমরা সবাই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করছিলাম। সেখানে একটা বড় স্টেজ করা হয়েছিল। নাচ, গান ইত্যাদি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সেখানে চলছিল। এরপরেই দেখলাম স্টার্টার দেওয়া শুরু হয়েছে। স্টার্টারে ছিল বেশ কিছু আইটেম-- তন্দুরি চিকেন, বেবী চিলি কর্ণ, চিকেন পাকোড়া আরো বেশ কিছু আইটেম। আমরা সবগুলোই অল্প অল্প করে টেস্ট করেছিলাম। তবে সেই সবকিছুর ছবি আর তোলা হয়নি।

পুরো জায়গাটা এত সুন্দর করে সাজিয়েছিল যে সারাদিন ফটো তুলতে ইচ্ছা করবে। তবে সব থেকে ভালো লেগেছিল আমার ওইখানে দুটো দোলনা বানানো হয়েছিল। আম গাছের ডাল থেকে মোটা দড়ি ঝুলিয়ে দোলনা বানিয়ে সেগুলোকে সুন্দরভাবে ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছিল। যারা যারা ওখানে গিয়েছিল প্রায় সবাই সেই দোলনায় বসে ফটো তুলেছিল। আমি এবং আমার শ্বাশুড়ি মা দুজনেই ফটো এবং কিছু ভিডিও তুলেছিলাম। দারুন মজা হয়েছিল।

এরপর শুরু হল লাঞ্চ খাওয়ার পালা। লাঞ্চে মেনু ছিল হরেক রকমের। Buffet system ছিল। এত হরেক রকমের খাবারের নাম মনে রাখা সম্ভব নয়। তবে টিকিটের মূল্য হিসেবে বেশ ঠিকঠাকই ছিল। আমরা আমাদের পছন্দ মতো খাবার নিয়ে নিয়েছিলাম। এই প্লাটফর্মের সাথে যুক্ত হওয়ার আগের ঘটনা যেহেতু আপনাদের সাথে শেয়ার করছি তাই সেই সব ফটো আমার ফোনে তোলা নেই। তবে সবকিছু আমরা একটা আইসক্রিম খেয়েছিলাম। সেই একমাত্র ছবি আমার কাছে আছে। যদিও প্রচন্ড রঙ খেলার ফলে জামা কাপড়ে রং লেগে গিয়েছিল। এবং তার ছিটেফোঁটা আইসক্রিমের মধ্যেও পড়ে গিয়েছিল।

লাঞ্চ সেরে, কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আমরা আবার বাড়ি চলে এসেছিলাম। এভাবেই আমরা একটা সুন্দর দিন উপভোগ করেছিলাম। আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোনো লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।