দার্জিলিং-এ কাটানো প্রথম দিন
নমস্কার বন্ধুরা, সকলে কেমন আছেন? আজকে চলে এসেছি আপনাদের সাথে আরো নতুন একটি ব্লগ শেয়ার করার জন্য। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।
আমার দার্জিলিং ভ্রমণের অনেক ঘটনায় আপনাদের সাথে ইতিমধ্যে শেয়ার করেছি। তবে ছবির মত সুন্দর এই জায়গাটির গল্প এত সহজে কি শেষ করা যায়! কতশত গল্প এখনো রয়ে গেছে যা আপনাদের সাথে শেয়ার করা হয়নি। তার মধ্য থেকেই এক টুকরো গল্প আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
রাত ২.৩০ নাগাদ নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গাড়ি ছাড়ে দার্জিলিঙের উদ্দেশ্যে। রাতের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে করতে কখন যে ভোর হয়ে গেল আমরা টেরও পাইনি। তবে আমাদের ভাগ্য খুবই ভালো ছিল। কারণ আমরা একদিকে যেমন পাহাড়ের রাতের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পেরেছি ঠিক তেমনি রাত থেকে ভোর হওয়া এবং ভোর থেকে সকাল হওয়ার সমস্ত দৃশ্যই আমরা খুব কাছ থেকে উপভোগ করতে করতে দার্জিলিংয়ের দিকে ছুটে চলেছিলাম। তবে আস্তে আস্তে যখন গাড়িটি গোল গোল করে পাহাড়ের গা ঘেঁষে উপরের দিকে উঠছিল, তখন হঠাৎ করেই আমি আমার কানে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করি। এর আগে কখনো আমার কানে ব্যথা হয়নি। তাই কানে ব্যথা হলে ঠিক কতটা যন্ত্রণা অনুভব হয় তা আমি আগে কখনো বুঝিনি। তবে হঠাৎ করে কেন এরকম কানে ব্যথা হচ্ছিল সেটা প্রথমে বুঝে উঠতে পারিনি। তারপর আবার নিজে থেকেই অনুধাবন করলাম যে, যেহেতু উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে বায়ুর চাপ বাড়ছে, তাই কানে সেই বায়ুর চাপের ফলেই যন্ত্রণা হচ্ছে। যদিও গাড়িতে একমাত্র আমারই এই সমস্যাটা হচ্ছিল।
আমার মোশন সিকনেস এর কথা তো আমি আগেও বলেছি। এতটা রাস্তা পাক খেতে খেতে আসছি, বমি বমি ভাব তো পাবেই। তবে বড় হওয়ার পরে সকলের সামনে বমি করতেও লজ্জা লাগে। তবে যখন আমাদের গাড়ি কার্শিয়াং পৌঁছায় তখন আর গাড়িতে থাকা সম্ভব হচ্ছিল না। আমি স্যার কে জানাই, তাই স্যার এক জায়গায় গাড়ি থামানোর জন্য ড্রাইভারকে বলে। গাড়ি থেকে নামতেই আমরা রীতিমতো থরথর করে কাঁপছিলাম। কারণ আমাদের সমস্ত শীতের ভারী পোশাক লাগেজের মধ্যে ছিল। আমাদের কাছে খুব মোটা শীত বস্ত্র ছিল না। আর গাড়ির মধ্যে যেহেতু জানলার কাঁচ লাগানো ছিল তাই এই শীতটা গাড়িতে থাকাকালীন অনুভব করিনি। ঠিক কি পরিমান যে ঠান্ডা লাগছিল তা হয়তো আমি লিখে প্রকাশ করতে পারছি না। তবে এত বছরে সেই পরিমাণ শীত আমি আগে কখনো অনুভব করিনি তা আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি। পুরো যেন হাঁড় কাঁপানো শীত। পরবর্তীকালে আবার যদি কখনো শীতের জায়গায় ঘুরতে যাই তাহলে এই ভুল আর কখনো করবো না। আসলে সকলে বলেছিল মার্চ মাসে দার্জিলিংয়ে সেইরকম শীত থাকে না। তাই সাথে খুব মোটা কোন শীতের জিনিস রাখিনি। তবে ব্যাগের মধ্যে নেওয়া ছিল। যাই হোক সেখানে হাঁড় কাঁপুনি শীতে আর বমি হয়নি। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছিল তাই স্যারকে তাড়াতাড়ি গাড়ি ছাড়তে বলেছিলাম।স্যার সেইমত ড্রাইভারকে গাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেয়। তবে তার আগে আমরা একটা ফটো তুলে নিয়েছিলাম।
এরপর আর কোথাও গাড়ি থামাতে বলিনি। প্রথমবার দার্জিলিং দেখার ও পাহাড় দেখার উত্তেজনা এতটাই ছিল যে বমির কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। চারিদিকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, বাড়িঘর এবং মানুষজন দেখতে দেখতে অবশেষে সকাল আটটা নাগাদ আমরা হোটেলে পৌঁছাই। তারপর বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছিল আমাদেরকে। বেশ কিছু ফর্মালিটি পূরণ করার পর অবশেষে এক ঘন্টা পরে আমরা রুম পাই। প্রথমে বলা হয়েছিল আমাদের পাঁচ জন বান্ধবী কে দুটো আলাদা রুম দেওয়া হবে। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা গেল আমাদের পাঁচজনকে একটা বড় রুমে দিয়েছে। প্রথমে ভেবেছিলাম এটা খুবই সমস্যা জনক হবে কারণ একটাই ঘর, একটাই বাথরুম, একটাই আয়না... যার ফলে আমাদের রেডি হতে অনেক সময় লেগে যাবে। তবে সত্যি কথা বলতে গেলে পাঁচজন একসাথে এক ঘরে থাকার ফলেই কিন্তু আরো অনেক বেশি আনন্দ হয়েছে, আমরা আরো অনেক বেশি মজা করতে পেরেছি, পাগলামি করতে পেরেছি।
রুমে গিয়ে আমরা কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে সকলেই ফ্রেস হয়ে গিয়েছিলাম। ইতিমধ্যে আমাদের ব্রেকফাস্ট রেডি হয়ে গিয়েছিল। আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে আমাদের ব্রেকফাস্ট রেডি হয়ে গেছে এবং আমরা যেন সকলে নিচে গিয়ে ব্রেকফাস্ট খেয়ে আসি। আসলে আমাদের দুটো হোটেল দেওয়া হয়েছিল যেহেতু ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। আর আমাদের প্রথম দিন ব্রেকফাস্ট করতে যেতে হয়েছিল অন্য একটি হোটেলে। প্রথম দিন ব্রেকফাস্টে ছিল লুচি ও ঘুগনি। প্রচন্ড খিদে পেয়ে গিয়েছিল তাই খাবারটা খেয়ে খুব ভালো লাগছিল। যদিও আমার কাছে ব্রেকফাস্ট খাওয়ার ছবি নেই তাই লাঞ্চ খাওয়া ছবি শেয়ার করছি।।
এরপর আবার রুমে ফিরে এসেছিলাম। প্রথম দিন যেহেতু আমাদের অনেকটা জার্নি হয়েছিল তাই সেই দিন আর স্যাররা আমাদের কোন স্পটে ঘুরতে নিয়ে যায়নি। আমরা সকলে দুপুর টাইমটা রেস্ট নিয়েছিলাম এবং তারপর বিকেলবেলা স্যারেরা আমাদেরকে নিজেদের মতো ঘুরতে বলেছিল। তাই বিকেলে আমরা কি করেছিলাম সেই গল্প নিয়ে আগামী ব্লগে আপনাদের বলবো।
আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোনো লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
Your post has been supported by the TEAM FORESIGHT. We support quality posts, good comments anywhere, and any tags