নীরবতা সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিবাদ
নমস্কার বন্ধুরা। সকলে কেমন আছেন? আজকে চলে এসেছি আপনাদের সাথে নতুন কিছু শেয়ার করে নেয়ার জন্য। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।
"নীরবতা সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিবাদ"---উক্ত কথাটি শুনলে অনেকেই বিস্মিত হতে পারেন যে এ আবার কেমন কথা। কারণ প্রতিবাদ বলতে আমরা বুঝি উচ্চস্বরে চেঁচামেচি করে, ঝামেলা-অশান্তির মধ্যে দিয়ে কোনো মত প্রতিস্থাপন করা। তবে অনেক জ্ঞানী ব্যক্তিরাই বলেছেন চিৎকার চেঁচামেচির থেকে নীরবতা অনেক বেশি শক্তিশালী। এটি এমন এক শক্তি যা উচ্চ স্বরকেও ছাপিয়ে যেতে পারে। অনেকেই মনে করেন নীরবতা মানেই দুর্বলতা। তবে এই ভাবনা কিন্তু একেবারেই সঠিক নয়। নীরবতা মানেই সব সময় সমস্ত কিছু মুখ বুঝে মেনে নেওয়া নয়। এই নীরবতা এক গভীর অর্থ বহন করে থাকে, যা শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা যায় না। অনেক সময় সন্তান কোন বড় ভুল করলে মায়েরা নিশ্চুপ হয়ে যান। তারা মুখে কিছু না বললেও বা তাদের সন্তানের গায়ে হাত না তুললেও তাদের নীরবতা সন্তানের মনে এক গভীর ভীতির সৃষ্টি করে, যা তাকে পরবর্তী কোনো ভুল করা থেকে বিরত করে।
একই রকম ভাবে কোন জনসমাজের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করলে তারা মুখে কিছু না বললেও তাদের এই নিশ্চুপতা, প্রতিবাদের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। ইতিহাস ঘাটলে আমরা এরকম নীরব প্রতিবাদের অনেক দৃষ্টান্ত খুঁজে পাবো। যেমন আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী মহাত্মা গান্ধী ছিলেন একজন অহিংস সংগ্রামী। তিনি কোনো মারামারি, হিংসা ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা চাননি। তার অহিংস আন্দোলন তাঁর এই মনোভাব কে বর্ণিত করে। এরপর যখন ১৯১৯ সালে জালিওনাবাগের হত্যাকাণ্ড ঘটে তখনও কিন্তু অনেকেই নীরবতার মাধ্যমে তাদের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার 'নাইট' উপাধি ত্যাগ করে দিয়েছিলেন এই জালিওনাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে।
উচ্চস্বরে চিৎকার চেঁচামেচি করে শব্দ ব্যয়ের মাধ্যমে অনেক সময় পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে ওঠে। যার ফলে প্রতিবাদের যে আসল উদ্দেশ্য থাকে তা অনেক সময় বিলুপ্ত হয়ে যায়। আমাদের সাহিত্যে এই নীরবতাকে নানাভাবে মহৎ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তাঁর এক কবিতায় বলেছিলেন-----
"শব্দ দিয়ে ব্যথা বলা যায়, কিন্তু নীরবতা দিয়ে ব্যথা বোঝানো যায়।"
বর্তমানের আধুনিক যুগে মানুষ যেখানে কথা বলতে তৎপর, সেখানে নীরব থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারাও একটি মহৎ গুণ, যা সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। অনেক সময় কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য শুধুমাত্র শব্দই যথেষ্ট হয় না। কখনো কখনো নীরব থেকে সেই অন্যায় থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে কিংবা মৌন থেকেও কিন্তু সেই অন্যায় বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যায়। ধরুন আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যেই একদল কোন অন্যায়ের সাথে যুক্ত রয়েছে। আপনি তাদের সাথে তর্কাতর্কি না করে শুধুমাত্র সেখান থেকে নিরবে বেরিয়ে আসলেও কিন্তু তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হয়।
ইতিহাস ঘাটলে আমরা সাইলেন্ট প্রটেস্ট বা মৌন মিছিলের কথা জানতে পারি। আমেরিকাতেই ঘটে যাওয়া এক আন্দোলনে, যার নাম ছিল ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার আন্দোলন। যেখানে বহু মানুষ নিরবে মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিল। তারা হাঁটছিল, তাদের মুখে কোন কথা ছিল না। তবে দুই চোখ ভরে ছিল প্রতিবাদের শিখা।
তবে তাই বলে আমি সব সময় নীরবতাকে সাপোর্ট করিনা। বহু অন্যায়ের ক্ষেত্রে এই নীরবতা কার্যকর হয় না। তাই কখনো কখনো প্রতিবাদের ভাষা কথার মাধ্যমেই প্রকাশ করা উচিত। নইলে অনেক সময় এই নীরবতা ভুল অর্থ প্রকাশ করে।অনেক সময় মানুষ মনে করে নীরব থাকা মানেই সম্মতি জানানো। তাই মানুষের মনে যাতে এরকম ভুলের জন্ম না হয় তাই অনেক সময় কথা বলা উচিত।
আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোনো লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
The TEAM FORESIGHT has supported your post. We support quality posts, good comments anywhere, and any tags
Thank you so much.