শুভ রথযাত্রার ইতিহাস
নমস্কার বন্ধুরা। সকলে কেমন আছেন? আজকে চলে এসেছি আপনাদের সাথে আজকের দিনের কিছু বিশেষ মুহূর্ত শেয়ার করার জন্য। আজ ছিল হিন্দুদের অন্যতম উৎসব রথযাত্রা। এই রথ যাত্রার দিনে আমি আজকে সন্ধ্যাটা কিভাবে কাটালাম সেটাই আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।
আজকে সন্ধ্যাটা কিভাবে কাটিয়েছি সেটা বলার আগে আপনাদের রথযাত্রা সম্পর্কে কিছু তথ্য দিয়ে রাখি। আমি আগেই জানিয়েছি যে রথযাত্রা হল হিন্দুদের একটি বিশেষ উৎসব। ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে, যেমন -- পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা , বিহার ও ঝাড়খণ্ডে এই উৎসব বিশেষভাবে পালিত হয়। ভারতের সবচেয়ে বড় রথ যাত্রার উৎসব পালিত হয় ওড়িশা রাজ্যে। ওড়িশা রাজ্যের একটি অন্যতম শহর হল পুরী। এই পুরীতেই রয়েছে সর্ববৃহৎ জগন্নাথ ধাম। এই জগন্নাথ দেবের আরাধনা উপলক্ষ্যেই এই রথযাত্রা পালিত হয়।
ব্রহ্মপুরাণে বলা রয়েছে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার এক বিশেষ ভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যন্মুকে স্বপ্নাদেশে বলেন, সে যেন পুরীর সমুদ্রতটে ভেসে আসা কাঠের টুকরো দিয়ে তার মূর্তি বানানোর ব্যবস্থা করে। এই স্বপ্নদেশ পেয়ে রাজা তখন একজন ভালো কাষ্ঠশিল্পী খুঁজতে শুরু করেন। সেই সময় এক রহস্যময়ী ব্রাহ্মণ কাষ্ঠশিল্পী রূপে আবির্ভূত হন। তিনি রাজার কাছে কিছুদিনের সময় চেয়ে নেন সেই কাঠের টুকরো দিয়ে মূর্তি বানানোর জন্য। সেই সাথে তিনি রাজাকে আরো জানান যে, এই কাঠের মূর্তি বানানোর সময় তাকে যেন কেউ বিরক্ত না করে। বন্ধ দরজার আড়ালে শুরু হয়ে যায় সেই রহস্যময়ী ব্রাহ্মণের কাঠের মূর্তি তৈরীর প্রস্তুতি। রাজা রানী সহ প্রত্যেকেই কাজ কতদূর এগুলো এই নিয়ে ভীষণ পরিমাণে আগ্রহী হয়ে ওঠে। প্রতিদিনই সকলে বন্ধ দরজার আড়াল থেকে কাঠের কাজ হওয়ার আওয়াজ পেতেন। এইভাবেই রাজা ও রানী প্রত্যেকদিন দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কাজের আওয়াজ শুনতেন। ছয় সাত দিন কাজ হওয়ার পর হঠাৎ একদিন রাজা ও রানী দেখেন দরজার ভিতর থেকে কোনরকম কাঠের কাজের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। সেই সময় রানী ভীষণ পরিমাণে কৌতুহলী হয়ে ওঠেন। এই কৌতূহল সংবরণ করতে না পেরে তিনি দরজা খুলে ফেলেন। রানী দরজা খুলে দেখেন কাঠের কাজ তখনও সম্পূর্ণ হয়নি। এবং আরো দেখেন যে ঘরের মধ্যে কোন মানুষই নেই। আসলে যিনি কাঠের কাজ করছিলেন তিনি ছিলেন দেবতাদের শিল্পী বিশ্বকর্মা। সেই মূর্তিটির হাত এবং পা তৈরির কাজ তখনো বাকি ছিল। রানীর এরকম কর্মকাণ্ডে রাজা প্রচণ্ড পরিমাণে দুঃখিত হন। প্রচন্ড দুঃখে যখন তিনি ঠাকুর দেবতাকে স্মরণ করছেন সেই সময় দেবর্ষি নারদ তার ডাকে সাড়া দিয়ে জানাই যে এই অর্ধ নির্মিত মূর্তিই দেবতার রূপে পূজিত হবে।
এখানে তিন ভাইবোন অর্থাৎ জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা একসাথে পূজিত হন। কথিত আছে, এই রথ যাত্রার দিন এই তিন ভাইবোন তাদের মাসির বাড়ি জান। লক্ষ্য করে দেখুন এই তিনটি মূর্তির কারোরই কিন্তু হাত বা পা সম্পূর্ণ নেই।
ছোটবেলায় এই রথযাত্রা আমাদের কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ ছিল। মায়ের হাত ধরে দাদা আর আমি বাড়ির কাছাকাছি যেখানে রথ এর মেলা হত সেখানে যেতাম। মা দুজনকে দুটো মাটির পুতুল কিনে দিত। এই রথযাত্রাতে কিন্তু মাটির পুতুলের বিশেষ সমাদর রয়েছে। এই সময় অনেক মাটির পুতুলের দোকান বসে। আর বহু ক্রেতা মাটির পুতুল কিনে নিয়ে যান।
আজ সন্ধ্যেবেলায় আমরা সপরিবারে চলে গিয়েছিলাম কৃষ্ণনগরের হাই স্ট্রিটে। যেখানে একটি বড় রথ থাকে। তাই প্রতিবছরই প্রথমে ওখানে যাওয়া হয়। আর এই রথ কে কেন্দ্র করে প্রচুর খেলনা জিনিসের দোকান, খাবারের দোকান বসে। এই রথের মেলার অন্যতম খাবার হলো পাঁপড় ভাজা আর জিলিপি। মানুষ আর যাই থাক না কেন এই দুটো জিনিস কিন্তু একেবারেই মিস করেনা। সেইমতো আমরাও কিন্তু এগুলো খেয়েছিলাম।
ভেবেছিলাম একটি পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের সাথে পুরোটা শেয়ার করব। তবে পোস্টের দৈর্ঘ্য অনেক বড় হয়ে যাবে। তাই বাকি পর্ব টা আগামীকাল শেয়ার করব। আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
This post has been curated by
Team #5
@mikitaly
Thank you so much 🙏.