বৃষ্টি ভেজা সকালে কাঠকচু তোলার গল্প
আসসালামু আলাইকুম
আজ আমি শেয়ার করব এক সুন্দর স্মৃতি মাখা দিনের গল্প যা জড়িয়ে আছে আমাদের জমি কচু তোলা আর গ্রামবাংলার অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্যের সাথে ।চলুন আর দেরি না করে শুরু করে আজকের গল্পটি।
সকালের বাতাসে ছিল এক ধরনের তাজা সুবাস যেন সারা রাতের বৃষ্টি চারপাশ ধুয়ে মুছে একেবারে নতুন করে সাজিয়ে দিয়েছে প্রকৃতিকে। আমি আর আমার বড় ননদ ঠিক করলাম আজ কাঠ কচু অর্থাৎ বাষফুল কচু তুলতে যাব। আমাদের জমিতে এই কচুগুলো হয়েছে আর বৃষ্টির পর কচুর পাতা গাছ আর চারপাশে দৃশ্য যেন আরও সবুজার উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় চারপাশের মাটির গন্ধে মনটা ভরে যাচ্ছিল। খুব বেশি দূরে নয় বাড়ির এর পাশেই প্রায় জমিটা কিন্তু হেঁটে যেতে একটু সময় লাগে। পথে হাঁটতে হাঁটতে দেখলাম গ্রামের লোকজনও বৃষ্টির পর জমিতে কাজ শুরু করেছে।
আকাশ তখন মেঘলা, মাঝে মাঝে সূর্যের আবহাওয়া উকি দিচ্ছিল আর দূরে কাকের ডাক সেই সকালে নীরবতায় এই ভিন্ন সুর যোগ করেছিল। আমরা জমির কাছে পৌঁছে দেখি সারা জমি ভরে গেছে বৃষ্টির পানিতে। পানির ওপর ভেসে আছে কচুর পাতার সবুজ ছাতা আর পাতার কোনায় কোনায় জমে থাকা পানির ফোঁটা গুলো মুক্তোর মত ঝলমল করছে।
আমি আর আমার ননদ একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম এমন দৃশ্য তো প্রতিদিন দেখা যায় না। পানি হাঁটু পর্যন্ত উঠে এসেছে। আমার ননদ আস্তে আস্তে পানির ভিতর চলে গেল কচু তোলার জন্য। শীতল পানির সংস্পর্শে মনে হলো সব ক্লান্তি ধুয়ে যাচ্ছে। খুব সুন্দর ভাবে কচুর গোড়ায় হাত ঢুকিয়ে একেবারে গোড়া থেকে তুলে আনছিলেন। আমি পাশে দাঁড়িয়ে কচু ধরে রাখছিলাম, মাঝে মাঝে আমিও চেষ্টা করছিলাম টেনে তুলতে।
কচু তোলার সময় পানির ভেতর কচুর শিকড় ফিরে আসার যে শব্দ হয় তা শোনার আলাদা আনন্দ আছে, মনে হয় যেন মাটির সাথে একাত্ম হয়ে আছি। বৃষ্টির পানি এতটাই পরিষ্কার ছিল যে তলার কাদা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল। এদিকে চারপাশে শুধু সবুজে সমারোহ।কচুর জমি পাশের ধানক্ষেত আর তার ওপরে নীলচে সাদা মেঘে ঢাকা আকাশ সব মিলিয়ে যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব চিত্রপট।
আরো কচু তোলার ফাঁকে ফাঁকে চারপাশে সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম। পাশেই গ্রামীণ রাস্তা যেটা বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে একেবারে কাদা কাদা হয়ে উঠেছে। রাস্তার দুই পাশে বড় বড় গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।তাদের পাতায় বৃষ্টির পানি ঝরছে টুপটাপ শব্দ করে। রাস্তা দিয়ে মাঝে মাঝে লোকজন সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল কেউ বাজারে কেউ বা জমিতে কাজ করতে। তাদের হাসি মুখ আর ব্যস্ততার ভিতরেও এক ধরনের শান্তি লুকিয়ে ছিল। জমির পাশে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ সেই রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। মনে হচ্ছিল এই দৃশ্য এই শান্তি এই বাতাস সবকিছু যেন আমাকে মনকে নতুন করে গড়ে তুলেছে।
এখানে প্রতিটি মুহূর্ত যেন প্রকৃতির দান প্রতিটি শ্বাস যেন তাজা অক্সিজেনে ভরা। কচুতোলা শেষ সুন্দরভাবে নিচের আগাছাগুলো আপু পরিষ্কার করছিল। আপুর হাতের নিপুনতা দেখে অবাক হচ্ছিলাম কচুর গোঁড়া একেবারে অক্ষত অবস্থায় তোলার জন্য কত দক্ষ হতে হয়। আমি তো কয়েকবার চেষ্টা করেও শিকড় সহ তুলতে পারেনি কিন্তু তিনি একেবারে তুলে আনছিলেন।আমরা হাসতে হাসতে বলছিলাম আজ তো বেশ ভালো সংগ্রহ হবে রান্নাও বেশ মজা লাগবে।
আমরা কচুর জমির ওখানে বেশ আড্ডা দিচ্ছিলাম চারদিকটা এত ভালো লেগেছিল বলে বোঝানো যাবে না। আমরা ভেজা পা তুলে জমির বাইরে এলাম। দূরে গ্রামীণ দৃশ্য যেন আরো মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠেছে। পথের ধারে ছোট খাল তাতে বৃষ্টির পানি বয়ে যাচ্ছে আর খালের ধারে কচুরিপানা দুলছে হাওয়ায়। বাড়ি ফেরার পথে, বারবার পিছনে তাকাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল এই মুহূর্তগুলোই জীবনের আসল সম্পদ যা শহরের কোলাহর আর কংক্রিটের দেয়াল কখনো দিতে পারে না। প্রকৃতির সাথে মিশে থাকার এই আনন্দ পরিবারের সাথে একসাথে কাজ করার এই অনুভূতি এসব কিছুই মানুষকে আরো জীবন্ত করে তোলে।
জীবনের ব্যস্ততা আর যান্ত্রিকতার মাঝে এমন একদিন সত্যিই মনকে অনেক শান্তি দেয়। শেষমেষ বলবো গ্রামের প্রকৃতি বৃষ্টি ভেজা জমি আর আপন জনের সাথে ভাগ করা ছোট ছোট মুহূর্তই জীবনের বড় আনন্দ। আজকের এই কচু তোলার অভিজ্ঞতা শুধু জমি থেকে ফসল তোলার নয় বরং মন থেকে সুখ আর ভালোবাসা তোলার গল্প। আজ তাহলে এ পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.