"চাচার শশুর বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার স্মৃতি"
আসসালামু আলাইকুম
প্রিয় বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই আমার চাচার শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা। আমরা মানে, আমি, আমার ছোট্ট মেয়ে মিরা, আমার চাচা, চাচি, আমার চাচা তো বোন দাদা-দাদি আরো অনেকে সবাই মিলে গিয়েছিলাম চাচার বাড়িতে বেড়াতে।
শহরের কোলাহল থেকে একটু দূরে গ্রামের এক শান্ত সবুজ শুকনো পরিবেশে কাটানো সেই দিনটি আমার হৃদয়ে আজও অংশ নিয়ে আছে। শুরুটা হয়েছিল এক সকালে। আকাশ ছিল পরিষ্কার,এমন দিনে ঘুরতে যাওয়ার মজাই আলাদা। আগেই ঠিক করা ছিল আজ আমরা চাচার শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যাব। আমার চাচা বিদেশ থেকে ফিরেছেন কয়েক সপ্তাহ আগে। দেশে আসার পর তিনি চেয়েছিলেন তার স্ত্রী পরিবারকে নিয়ে একটু সময় কাটাতে। আর আমরা তার সঙ্গী হলাম সেই আনন্দ যাত্রায়। আমি সকালে ঘুম থেকে উঠিয়ে নিজের আর মেয়ের জন্য কাপড়-চোপড় গুছিয়ে ফেলি।
মেয়েটা বেশ উত্তেজিত ছিল কারণ ওর সমবয়সী আমার চাচাতো বোন। ওরা তিনজন মিলে কত হাসি দুষ্টমি খেলা যে করে, তা বলে বোঝানো যাবে না। আমাদের সঙ্গে ছিল আমার দাদা দাদিও। সবাই মিলে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে রওনা দিলাম যাওয়ার উদ্দেশ্যে। যখন পৌঁছালাম তখন যেন এক অন্যরকম ভালোবাসার জায়গায় পা রাখলাম। গ্রামের শান্ত পরিবেশ খোলা আকাশ মাঠঘাট সব কিছুই অপূর্ব । বাড়ির পাশেই কলা গাছ,সজনে গাছের ছায়া পড়ছে একপাশে সব কিছু মিলিয়ে যেন একটা ছবির মত দৃশ্য।
চাচার শশুর শাশুড়ি আমাদের দেখে ভীষণ খুশি হলেন। তাদের অতিথি পরায়নতা মন ছুয়ে গেল। আমার চাচী আগে থেকেই তার পরিবারকে বলে রেখেছিলেন যে আমরা সবাই মিলে তাদের বাড়িতে যাচ্ছি। সেইমতো সব ব্যবস্থা করা হয়েছে, বাড়ির উঠনে বসে আদা চা মুরি নারিকেল পিঠা আর বাগানের পাকা কলা দিয়ে প্রথম আপ্যায়ন।
চাচার শ্বশুরবাড়ি উঠোনে একটা পাটাতন টেনে সবাই গোল হয়ে বসে গল্প করছিলাম। দাদা তার পুরনো স্মৃতি শোনাচ্ছিলেন। আমার দাদী হেসে বলছিলেন এই বাড়িতে এসে আমার মনে হয় যেন নিজের মেয়ের বাড়িতে এসেছি। আর চাচার মেয়েরা আর আমার মেয়ে তখন উঠোনে খেলছে। একে অপরের চুল টেনে টেনে হাসাহাসি করছে একসাথে ফোনে কার্টুন দেখছে। পরে সবাইকে খেতে ডাকা হল।
গরম ভাত দেশি মুরগির ঝোল বয়লার মুরগির রোস্ট সজনে ডাটার ডাল সেই সাথে গরুর মাংস ইলিশ মাছ আহা এমন খাওয়ার স্বাদ আজকাল কোথায় মেলে। আমি তো মুগ্ধ হয়েই খেয়ে গেলাম। আমার দাদা তো রসিকতা করে বললেন এবার বুঝলাম জামাইয়ের শ্বশুরবাড়ির খাবার এত মজা হয় কেন। বিকেলে আমরা সবাই মিলে বাগানে হেঁটে বেড়ালাম। বাচ্চারা খেলাধুলা করতে লাগছিল। আর হাসাহাসি করছিল সেই হাসির শব্দ যেন পুরো পরিবেশকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলছিল।
বাড়ি ফিরার আগে আমি সবার সবার সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে দিলাম। ভিডিও করছিলাম যেন এই সৃতিগুলো হারিয়ে না যায়। চাচার শ্বশুরবাড়ির মানুষগুলোর আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমাদের জন্য তারা কি যত্ন টাই না করল আমি মনে মনে ভাবলাম সম্পর্কের গভীরতা তখনই বোঝা যায় যখন সেখানে আন্তরিকতা আর ভালোবাসা থাকে। শেষ বিকেলে বিদায়ের সময় যখন এলো তখন মনটা কেমন জানি করে উঠলো সবাই এত সুন্দর ভাবে মিশে গিয়েছিলাম যে বিদায় বলাটা কষ্ট কর লাগছিল। চাচার শাশুড়ি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন আবার যেন আসো শুধু জামাই নয় তোমরা সবাই আমাদের পরিবারের অংশ।
সেই দিনের প্রতিটি মুহূর্ত আজও আমার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করে। একসাথে গল্প করা,মেয়েদের খেলাধুলা দাদার গল্প আছে আন্তরিকতা অতিথি আপ্যায়নে সবকিছু মিলে যেন এক ছোট্ট উৎসব হয়ে উঠেছিল। আমি বিশ্বাস করি জীবনের আসল সৌন্দর্য এমন পারিবারিক মিলনের লুকিয়ে আছে যেখানে সম্পর্ক হাসি আর ভালোবাসা মিলেমিশে এক হয়ে যায়।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আহা,
বোঝা যাচ্ছে বাবার বাড়ি গিয়ে বেশ আনন্দে আছেন, বাবার বাড়ি সহজ চাচার শ্বশুর বাড়িতে ও বেড়াতে গিয়েছেন , মেয়ের সহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছেন সত্যি একটা মেয়ের বিয়ের পরে এরকম সুযোগ পাওয়া বেশ আনন্দের ব্যাপার।।
প্রার্থনা করছি আপনার এই সুন্দর মুহূর্তের গুলোর জন্য যেন জীবনে বারবার ফিরে আসে খুব ভালো লাগলো ভালো থাকবেন।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য। আসলেই বিয়ের পরে অনুভব করা যায় বাবার বাড়ি আসতে পারা একটা মেয়ের জন্য কতটাজরুরী। আমিও প্রার্থনা করি এরকম সুন্দর মুহূর্ত সব মেয়েরই জীবনে বারবার ফিরে আসুক।
আজকে আপনি চাচার বাড়িতে যাওয়ার মুহূর্ত শেয়ার করেছেন। আপনার চাচার বাড়ি শহর থেকে একটু গ্রামের দিকে। আপনি ঠিকই বলেছেন শহর ছেড়ে গ্রামে স্নিগ্ধ পরিবেশ সকলেরই মন ছুয়ে যায়। আমিও শহর থেকে গ্রামে গিয়ে অনেক শান্তি খুঁজে পাই। চারিদিকে সবুজে ঘেরা প্রকৃতি সকলেরই নজর কারে। শহরের কোলাহল থেকে মাঝে মাঝে যখন নিজেকে একটু গ্রামে সময় কাটাতে যায় তখন মনের ভিতর অনেকটাই শান্তি খুঁজে পাই। আপনার গ্রামে কাটানো মুহূর্ত দেখে আমারও নিজের বাপের বাড়িতে কাটানো মুহূর্ত মনে পড়ে গেল। যাই হোক সেখানে আগে থেকে জানিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাই সমস্ত খাবার আপনাদের জন্য রেডি করে রেখেছিল। ওখানে গিয়ে সুন্দর সময় কাটিয়েছেন সেই সুন্দর মুহূর্তই শেয়ার করেছেন। সুন্দর মুহূর্ত শেয়ার করে নেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনার এমন আন্তরিক মন্তব্য পরে সত্যিই খুব ভালো লাগলো। গ্রামের শান্ত পরিবেশ আর প্রিয়জনদের ভালোবাসা সব কিছু মিলিয়ে আসলে একটা মেয়ের জীবন বিশেষ হয়ে ওঠে। আপনার অনুভূতির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাল থাকবেন।