কারখানার পথে এক আনন্দ ভ্রমণ
আজকের সকালটা শুরু হয় একেবারে সাধারণভাবে কিন্তু কখন যে সেটা রূপ নিল এক অপূর্ব আনন্দঘন অভিজ্ঞতায় তা আমি নিজেই বুঝতে পারিনি। আসলেই মেয়েদের কাছে তার বাবার বাড়িতে ঘুরতে আসা প্রত্যেকটা দিনই অন্যরকম ভাবে কাটে। শশুরবাড়িতে প্রতিদিন তার ব্যস্ততা রান্না বান্না আর বাচ্চা সামলানো এই নিয়ে তো দিন কাটে। বাবার বাড়িতে এসে সব ব্যস্ততা দূর হয়ে যায়। আজ সকাল বেলা আমার চাচির ডাকে যেন পুরো পরিবেশটাই বদলে গেল।
চাচি বললেন চলো সবাই মিলে একটু ঘুরে আসি পাশের পাড়ায় একটা খাবারের কারখানা হয়েছে। সিঙ্গারা পাউরুটি ছিম পিঠা আরো অনেক কিছু বানায় সেখানে,চলো ঘুরে আসলে ভালো লাগবে। প্রথমে একটু দ্বিধায় পড়েছিলাম মেয়েটাকে নিয়ে বের হওয়া সহজ নয়। সেই সাথে মাও বলল চল কিছু হবে না আমরা আছি না। অনেক বলাবলির পর যখন বের হচ্ছিলাম না তখন অভিমান করেই বলল চল রে মা আমরা সবাই যাচ্ছি তুইও চল একটু ভালো লাগবে। মা দুই চাচি চাচাতো ভাই বোনদের উৎসাহে আর না করতে পারলাম না।
আমরা সবাই মিলে হাটা দিলাম কারখানার পথে। আমার বাড়ি থেকে খুব একটা দূরে নয় মাত্র ১০ মিনিট হাঁটার পথ। তবে আমাদের মত হৈচৈ করতে করতে যেতে গেলে সে পথ হয়ে যায় অনেক লম্বা। আমার মেয়ে, চাচাতো দুই বোন লাফালাফি দুষ্টুমি শুরু করলো বলেই বোঝানো যাবে না। কেউ দৌড়াচ্ছে কেউ মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে, দুষ্টামি করতে করতে অবশেষে পৌঁছে গেলাম কারখানার সামনে। সিঙ্গারা পাউরুটি সিমপিঠা কেক বিস্কুট আরো অনেক কিছু কি নেই সেখানে।
প্রতিটা খাবার তৈরি হচ্ছে সুশৃংখল ভাবেকর্মীরা খুব সুন্দর ভাবে প্যাকেট গুলো গোছাচ্ছে। আমার মেয়ে তো একদম মুগ্ধ চোখ বড় বড় করে সব কিছু দেখছে আর আমার হাত ধরে টানছে আম্মু ওইটা কি?
আম্মু এটা কিনব। এটা আমি খেতে চাই। আমার মেয়ে ও আমার চাচাতো দুই বোন প্রায় সমবয়সী তারা একসঙ্গে নাচানাচি শুরু করছে। সেখানকার কর্মীরা বক্সে গান চালিয়ে রেখে কাজ করছে এই গান শুনে আমার মেয়ে ও আমার চাচাতো দুই বোন নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে। ওদের নাচানাচি দেখে সেখানকার কর্মীরাও অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। আমার চাচাতো ভাই বোনদের তো কথাই নেই তারা যেন এই প্রথম এমন কিছু দেখলো। কারখানার এক কোণে দাঁড়িয়ে খাবার বানানোর প্রক্রিয়াটা কৌতুহল ভাবে দেখছে সেই সাথে আমিও দেখছি এই প্রথমবার। সবাই আনন্দে লাফাচ্ছে।
আমার মা চাচীরাও খুব খুশি হলেন ওনারা বলেছিলেন এই জিনিসগুলো এত পরিষ্কার ভাবে তৈরি হয় দেখে ভালো লাগছে।আগে তো বাজার থেকে কিনতে ভয় করতাম এখন তো নিশ্চিন্তে কিনে খেতে পারব। কারখানার লোকজনও খুব ভদ্রভাবে ব্যবহার করছিল। আমরা পছন্দ করে নিলাম সিঙ্গারা কিছু কেক আর পাউরুটি কিনলাম। ভাবছিলাম বাসায় ফিরে গরম গরম চা বানিয়ে সবার সঙ্গে খাব। ফিরতি পথে কম মজা হয়নি।ফেরার সময় আমার মেয়ে ও চাচাতো ভাই-বোনেরা আবার নতুন করে ছোটাছুটি শুরু করে দিল।মা চাচীরা হাসতে হাসতে বলছিল আজকের দিনটা সত্যি মনে রাখার মত হল।বাসায় ফিরে আসার পর খাবারগুলো গুছিয়ে রাখলাম তারপর একসাথে বসে চা নাস্তা করলাম সবাই মিলে।
এমন ছোট ছোট আনন্দ পরিবার নিয়ে একসাথে সময় কাটানো এই সবই তো জীবনের আসল সুখ। একটা সাধারন দিন কিভাবে বিশেষ হয়ে উঠতে পারে তা আজ হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। চাচির জোর করে নিয়ে যাওয়া আজ সেটা যেন এক সুন্দর মুহূর্ত উপহার হয়ে এল। পরিবার মানেই ভালোবাসা আর ভালোবাসা মানে একসাথে ভাগ করে নেওয়া। এই ছোট্ট ভ্রমণটা যেন মনে রেখে দেওয়ার মতো একটা সুন্দর অভিজ্ঞতা হয়ে থাকলো।জীবনের ব্যস্ততার মাঝেও এমন দিনগুলো আমাদের হৃদয়কে আনন্দে ভরিয়ে দেয়।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
The TEAM FORESIGHT has supported your post. We support quality posts, good comments anywhere, and any tags
Thank you so much @sduttaskitchen mam