"আদিত্যর (তুতুনের) জন্মদিনের আয়োজন- প্রথম পর্ব "

in Incredible India2 days ago
IMG_20250920_144846.jpg
"তুতুনকে জন্মদিনে ওর দাদার দেওয়া উপহার"

Hello,

Everyone,

আশাকরি আপনারা সকলে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন এবং আপনাদের সকলের আজকের দিনটি খুব ভালো কেটেছে।

মহালয়া আসা মানেই দূর্গা পূজার শুরু। গতকাল মহালয়া ছিলো, তাই ইতিমধ্যে দেবীপক্ষ সূচনা হয়েছে। চারিদিকে পুজোর আমেজ ইতিমধ্যেই অনুভূত হচ্ছে। আমাদের পাড়ার পুজোর মাইকের আওয়াজ গতকাল থেকেই পাওয়া যাচ্ছে।

প্রতিবছরের মহালয়ার দিন থেকে রাস্তায় আলো জ্বলতে শুরু করে এবং তার সাথে সকাল বিকাল চলতে থাকে পুজোর গান। মাঝে মধ্যে বিরক্ত লাগে ঠিকই, কিন্তু তবুও এই সকল আনন্দ অনুষ্ঠানগুলি আসছে এই অনুভূতিটাই সবথেকে বেশি উপভোগ্য।

আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো আমার ননদের ছোটো ছেলে আদিত্যর, যাকে আমরা আদর করে তুতুন বলে ডাকি, তার জন্মদিনের গল্প।

IMG_20250920_200427.jpg
"আদিত্যর (তুতুন) জন্মদিনে নতুন পোষাক পরার পরে তোলা ছবি"

২০ শে সেপ্টেম্বর ছিলো তার জন্মদিন। ঐদিন তার ১১ বছর পূর্ণ হলো। ছোটোবেলায় সব বাচ্চারাই নিজেদের জন্মদিন নিয়ে অনেক বেশি আনন্দে থাকে। তবে একটা বয়সের পর এই আনন্দ গুলো জীবনের বাস্তবতায় বিলীন হয়ে যায়।

ভাইয়ের জন্মদিনে উপস্থিত থাকবে বলেই ননদের বড় ছেলে পূজোর বেশ কয়েকদিন আগেই বাড়িতে এসেছে। অথচ পরের মাসে অর্থাৎ ২২ শে অক্টোবর ওর নিজের জন্মদিন, যেদিন ওর পক্ষে বাড়িতে থাকা সম্ভব নয়। কারণ ও মাত্র ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে এসেছে।

যেহেতু একটু বড় হয়ে গেছে, তাই ওর কাছে নিজের জন্মদিন সেলিব্রেশন করার থেকেও ভাইয়ের জন্মদিনে উপস্থিত থাকাটা বেশি আনন্দের। আমরা প্রত্যেকেই হয়তো এমনটাই ভাবি একটা বয়সের পর। যাইহোক শশুর শাশুড়ি যেহেতু ননদের বাড়িতেই ছিলো, তাই জন্মদিনের সকালে আমার সেখানে যাওয়ার কথা ছিলো।

কিন্তু যেহেতু শুভর অফিস ছিলো, তাই আমি সকালের সমস্ত কাজ সেড়ে, প্রায় ১ টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। শুভ অফিস থেকে ফিরলে রাতে ননদের বাড়িতে যাবে এমনটাই ঠিক হয়েছিলো।

IMG_20250920_115716.jpg
"জন্মদিনের সকালের আবহাওয়া"

তুতুন যেদিন জন্মগ্রহণ করেছিলো, সেদিনও প্রচন্ড বৃষ্টি হয়েছিলো। তাই প্রতি বছর ওর জন্মদিনে বৃষ্টি হবে, এই বিষয়টি আমাদের জানা। এ বছরও তার অন্যথা হয়নি। সকালের দিকে একটু রোদ্দুর থাকলেও, বেলা বাড়ার সাথে সাথেই আকাশ মেঘলা করে এসেছিলো এবং আমি যখন ওদের বাড়িতে যাচ্ছিলাম তখনও টুপটাপ বৃষ্টি পড়ছিল।

ননদের বাড়িতে পৌঁছে গিয়ে দেখি দুপুরের রান্নার আয়োজন মোটামুটি শেষ। আসলে দুপুরে আমরা নিজেরাই কয়েকজন খাওয়া-দাওয়া করবো। বাকি সকলের নিমন্ত্রণ ছিলো রাতে। এদিন আমার শরীরটাও বিশেষ ভালো ছিল না, তাই আমি গিয়ে কিছুক্ষণ শুয়েছিলাম।

IMG_20250920_143156.jpg
"এই বছর আমাদের তরফ থেকে দেওয়া উপহার"

সেই মুহূর্তে তুতুন এসে আমার পাশে শুয়ে পড়লো। আর জন্মদিনে আমি কি গিফট দেবো সেই বিষয়ে চুপিচুপি দুজনের কথাবার্তা চললো। আমি আর দেরি না করে ব্যাগ থেকে ওর উপহারটা বের করে দিলাম। আসলে অনলাইন থেকে ওর জন্য একটা ঘড়ি অর্ডার করা হয়েছিলো। গত বছর একটা সাদা রঙের ঘড়ি দিয়েছিলাম, যেটা ও খুব যত্ন করে পড়েছে।

IMG_20250920_143133.jpg
"গতবারের জন্মদিনে এই ঘড়িটা দেওয়া হয়েছিলো"

এই বছরের ঘড়িটা বের করতেই খুব খুশি হয়ে গেলো। কারণ তাতে ওর প্রিয় কার্টুন ক্যারেক্টার শিনচ্যান ছিল। দুটো ঘড়ি পাশাপাশি রেখে দেখছিলো। পরেরবার একটা কালো ঘড়ি দিতে হবে এমনটাই ঠিক হলো।

এরপর আমাকে একটা বাইক এনে দেখালো, যেটা দাদা ওকে কিনে দিয়েছে। এই বাইকের সিটের আবার তিনটে অপশন আছে, যেগুলোকে মাঝেমধ্যে সে চেঞ্জ করে থাকে। বাকি দুটোর ছবি তুলতে আমি ভুলে গিয়েছি। এটা আমাকে দেখাচ্ছিলো, তাই সেই মুহূর্তে আমি ছবিটা তুলেছিলাম। বাইকটা তার এতোই পছন্দের যে, দাদা আসার পর থেকে মোটামুটি সেটা নিয়েই সারাদিন ব্যস্ত থাকে।

জামা কাপড়ের বিষয়ে সে খুবই মুডি। নিজে কি পড়বে, কোনটা পড়লে নিজেকে ভালো লাগবে, এই বিষয়ে তার বেশ ভালো মতামত রয়েছে। তবে তার দাদা একেবারেই উল্টো। এখনও পর্যন্ত বাবা-মায়ের পছন্দেরই সবকিছু পরে। তবে তুতুন নিজের জন্মদিনে একটা জিন্সের হাফপ্যান্ট চাই এটা অনেক আগেই জানিয়ে রেখেছিলো।

IMG_20250920_151648.jpg
"ঘড়িটা হাতে পরার পরে তোলা ছবি"

তাই ননদ ওর জন্য একটা হাফ শার্ট আর হাফপ্যান্ট নিয়ে এসেছিলো। দুপুরে স্নান করার পর সেটা পড়ে আমার কাছে এসে জানতে চাইছিলো, তাকে দেখতে কেমন লাগছিলো। আমি ওর ছবি তুলছিলাম দেখে আমাকে আবার বললো, - দাঁড়াও হাতে ঘড়িটা পড়ে নিই, তারপর ছবিটা তোলো। তাহলে সবকিছুই নতুন থাকবে।

ঘড়িটা হাতে একটু বড় হয়েছে, আরও একটা ঘাট বাড়িয়ে দিলে তবে সেটা একদম সঠিক হবে। তবে সেই মুহূর্তে ঘড়ির দোকানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিলো না। তাই সে এইভাবেই পড়েছিলো। আপনারা দেখে জানাবেন তাকে কেমন লাগছে নিজের পছন্দের পোশাক পরে।

ওর চোখের চশমাটা দেখেছেন? ফ্রেমটার রংটা খুব সুন্দর ঠিকই, তবে ওর চোখে অনেক পাওয়ার। স্কুলে গিয়ে ক্লাসের প্রথম বেঞ্চে বসলেও বোর্ডের কোনো লেখা ভালো করে দেখতে পায় না, এ কথা জানানোর পরেই ওকে ডাক্তার দেখানো হয়েছিলো।

তখনই ধরা পড়লো ওর চোখে অনেক পাওয়ার। সেই সময় থেকেই চশমা পড়ে। দিদির হাজব্যন্ডের এই একই সমস্যা ছিলো, তিনিও খুব ছোটো বয়স থেকে চশমা ব্যবহার করেন।

IMG_20250920_200801.jpg
"দুপুরে রান্না হচ্ছিলো ইলিশ মাছ"

দুপুরে ঘরোয়া খাবারের জন্য ইলিশ মাছ, ডাল, বেগুন ভাজা, রান্না হয়েছিলো। সব কটা পদের ছবি তোলা হয়নি, রান্নাঘরে একটু দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন শুধু ইলিশ মাছের ছবিগুলো তুলেছিলাম। যাইহোক এরপর আমি কিছুক্ষণ শুয়ে ছিলাম।

রান্নাবান্না শেষ হলে শাশুড়ি মা আমাদের সকলকে খেতে দিলেন। তারপর শুরু হল রাতের জন্য রান্না বান্নার আয়োজন। বেশিরভাগ কাটাকুটি শাশুড়ি মা করেছিলেন, আমি শুধু মাংসের পেঁয়াজ, আদা ও রসুনগুলো কেটেছিলাম।

IMG_20250920_213946.jpg
"সকলের সাথে তুতুন"

আসলে অনেকেই রয়েছে যারা মাংস পেঁয়াজ রসুনের ছোঁয়া খান না। তাই বাকি সমস্ত রান্না হয়ে যাওয়ার পর সেগুলোকে আলাদা করে রেখে, সব শেষে চিকেন বসানো হয়েছিলো। সন্ধ্যা নাগাদই রান্নাবান্না শেষ হয়ে গিয়েছিলো। তাই সন্ধ্যার পর ননদ ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলো। আর ততক্ষণে সকলে মিলে কেক কাটার আয়োজন করে ফেলেছিলো।

সমস্ত কিছু আয়োজন হয়ে যাওয়ার পর আমরা কেক কাটা শুরু করি এবং তারপর রাতের খাবারের আয়োজন করা হয়। সেই সংক্রান্ত মুহূর্ত গুলোর গল্প আমি পরবর্তী পোস্টে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। এই একটা পোস্টে শেয়ার করতে গেলে পোস্টটা অনেকটাই বড় হয়ে যাবে।

সকলের সুস্থতা প্রার্থনা করে আজকের এই পোস্টটি এখানেই শেষ করছি। ভালো থাকবেন সকলে। শুভরাত্রি।

Sort:  


Hello there, you have posted a great quality post and we are happy to support you, stay up with good quality publications
Curated by heriadi

Loading...