"দার্জিলিং এর অন্যতম আকর্ষণ মলরোড - ভ্রমনের অভিজ্ঞতা"

in Incredible India3 days ago
IMG_20250808_132415.jpg

Hello,

Everyone,

দার্জিলিং এর কথা বলতেই যেমন ঘুম স্টেশনের কথা মনে আসে, ঠিক তেমনই আরও একটা জায়গার কথা মনে পড়ে, সেটি হলো মল রোড। আজকের পোস্টে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো এই মল রোডে ঘোরার অভিজ্ঞতা। চলুন আগের পোস্ট যেখানে শেষ করেছি, তারপর থেকেই কিছু কথা শেয়ার করি।

দার্জিলিংয়ের ঘুম স্টেশন থেকে বেশ কিছু সময় কাটিয়ে, আমাদের গাড়িতে করে আমরা রওনা দিয়েছিলাম আমাদের পরবর্তী হোটেলের উদ্দেশ্য। তবে যেমনটা আগের পোস্টে আপনাদের জানিয়েছি, ঐ সময় দার্জিলিংয়ের গাড়ির প্রচন্ড জ্যাম ছিলো। আর আমাদের যে হোটেল ছিলো সেটাও ছিলো বেশ কিছুটা দূরে।

IMG_20250808_132049.jpg

সত্যি কথা বলতে দার্জিলিং-এ আসতে গেলে বেশ অনেকদিন আগে থেকেই হোটেলের খোঁজ করতে হয়। কারণ এটি বাঙালির এতটাই প্রিয় জায়গা যে, সারা বছরই এখানে কম বেশি ভিড় হতেই থাকে। আমাদের বাজেটের মধ্যে মল রোডের কাছাকাছি আমরা কোনো হোটেল পাইনি। আর যে হোটেল গুলো অ্যাভেলেবেল ছিলো, তার ভাড়া এতটাই বেশি ছিল যে, আমাদের বাজেটের বাইরে ছিলো। সেই কারণে আমরা একটু ভিতরের দিকেই হোটেল নিয়েছিলাম।

IMG_20250808_132101.jpg

মল রোড থেকে আরো মিনিট দশেক পায়ে হেঁটে আমরা আমাদের হোটেলে পৌঁছেছিলাম। আসলে এটা ছিল একটা সরু গলির মধ্যে, যেখানে গাড়ি ঢোকার সম্ভব ছিল না। না হলে আমাদের গাড়িতে করেই হয়তো আমরা হোটেল পর্যন্ত পৌঁছতে পারতাম। যাইহোক একটা জায়গায় ঘুরতে গেলে সবকিছু আসলে এমন পারফেক্ট হয় না। তাই সকলে মিলে লাগেজ নিয়ে রওনা করলাম হোটেলের উদ্দেশ্যে।

IMG_20250808_132256.jpg

সেদিন বিকেল থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত আমরা মল রোডের আশপাশটা ঘুরে দেখবো এমনটাই ঠিক ছিলো। আর পরদিন সকাল দশটার পর গাড়ি করে পরবর্তী জায়গাগুলো ঘুরে দেখার‌ পর, আবার রাতের হোটেলে ফিরবো। তাই গাড়ি চালক দাদা সকাল দশটার সময় আমাদেরকে রিসিভ করবেন এমনটাই ঠিক হলো।

যাইহোক আমরা যখন হোটেলে পৌঁছলাম তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। সেখানে পৌঁছে লাগেজ গুলো ঠিকঠাক ভাবে রেখে, সকলেই মোটামুটি একটু ফ্রেশ হয়ে নিয়ে রওনা করলাম মলরোডের উদ্দেশ্যে। তখন বাইরে হালকা বৃষ্টি পড়তেও শুরু করেছে। তাই বেশ ভালোই ঠান্ডা লাগছিলো।

IMG_20250808_132217.jpg
IMG_20250808_132240.jpg

এই হোটেলে আমাদের রুমটা অনেকটাই ছোটো ছিলো ঠিকই, তবে রুমের জানালা খুললে যে ভিউ ছিলো, তা বাকি সমস্ত কিছু ভুলিয়ে দিয়েছিলো। মেঘেদের এমন আনাগোনা জানালা দিয়ে দেখতে পারছিলাম যে, ইচ্ছে করছিলো সেখানে বসেই বাকি সময়টা পার করে দেই। সেখান থেকে বাকি দার্জিলিং শহরটারও বেশ‌‌ কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিলো। রাতের বেলা দেখে মনে হচ্ছিলো যেন, দূরে অসংখ্য জোনাকি পোকা মিটিমিটি করে জ্বলছে ।

IMG_20250808_132455.jpg

যাইহোক এরপর সকলেই রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম মল রোড ঘোরার উদ্দেশ্যে। সত্যি কথা বলতে সেখানে মানুষের ভিড় দেখে আমি একেবারেই অবাক হয়েছিলাম। গত কয়েকদিন আমরা যে যে জায়গায় ঘুরেছি সেখানে বেশ ফাঁকা ফাঁকা ছিলো। তবে মলরোড যে ভিড় হবে এমনটা আগে থেকেই জানা ছিলো। বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেও মানুষের ঢল ছিলো একেবারে দেখার মতো। যাইহোক এদিক ওদিক বেশ ভালো ঘুরলাম।

IMG_20250808_132324.jpg

মলরোডের প্রধান আকর্ষণ গ্রিনারিস বেকারি খুঁজে পেতে খুব একটা কষ্ট করতে হলো না। কারণ গোটা মল রোডের মধ্যে সবথেকে যেখানে মানুষের ভিড় চোখে পড়বে, বুঝে নিতে হবে সেটাই সেই জায়গা। যেখানে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার জন্য প্রত্যেকটা মানুষ এই ভিড় ঠেলে লে এগিয়ে চলেছে। আমরাই বা থাকি কেন?

IMG_20250808_132437.jpg

ভিড়ের মধ্যে সামিল হয়ে গেলাম। এরপর এক এক করে প্রত্যেককে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে নিলাম। ছবিটা তোলার সময় আমার বেশ হাসি পাচ্ছিলো, কারণ পাশ থেকে সকলে একটাই কথা বলছিলো-শুনুন এবার কিন্তু আমার পালা।

যাইহোক এই দোকানে খাওয়ার খুব একটা ইচ্ছে ছিল না। শুনেছি এই দোকানে জিনিসের যা দাম তাতে আমাদের সম্পূর্ণ ঘোরার বাজেট ফেল হয়ে যেতো। তাই বাইরে থেকে দেখেই সন্তুষ্ট হয়ে ফিরে এলাম।

IMG_20250808_132337.jpg

এরপর এক এক করে বিভিন্ন বইয়ের দোকান, ছাতার দোকান, সোয়েটারের দোকান, স্টুডিওতে তোলা কাঞ্চনজঙ্ঘার বিভিন্ন সময়কার ছবিগুলো এত সুন্দর করে রাখা আছে যে আপনি বাইরে দাঁড়িয়ে সেগুলো দেখতে পারবেন এই সমস্ত কিছু ঘুরে ঘুরে দেখলাম। সেখান থেকে আমি যদিও কোনো কিছুই কিনি নি। তবে রাখি দুটো ছাতা, আর পিয়ালী দুটো চাদর কিনেছিলো, যেগুলোর ছবি আমার আর তোলা হয়নি।

IMG_20250808_132312.jpg

সবশেষে আমরা মল রোড থেকেই মোমো খেলাম। যেই মোমো খাওয়ার শখ ছিলো, সেটা খাওয়ার পর যে এমন নিরাশ হবো সত্যিই আশা করিনি। দার্জিলিংয়ের মোমো নাকি অনেক বেশি সুস্বাদু হয়। তবে বিশ্বাস করুন এটা এখন শুধুমাত্র লোকমুখেই প্রচলিত। কিন্তু সেখানকার মোমোর কোয়ালিটি এতটাই খারাপ যে বড্ড বেশি নিরাশ হয়েছি আমরা।

IMG_20250808_132550.jpg
IMG_20250808_132517.jpg
IMG_20250808_132536.jpg

যাইহোক ততক্ষণে বৃষ্টির মাত্রাও বাড়তে শুরু করেছে। তাই আমরাও হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। আসলে সারাদিন বেশ ঘোরাঘুরি করাতে ক্লান্ত লাগছিলো। তাই খুব বেশি দেরি না করে আমরা হোটেলের দিকেই ফিরছিলাম। তখন‌ই‌ সেখানে রাস্তার পাশে লাইন দিয়ে গরম ভুট্টা বিক্রি হচ্ছিলো দেখে, আমরা ভুট্টাও কিনে নিলাম। বেশ খানিকটা দূর হেটে আসার পর হোটেলের ভেতরে ঢুকতেই যাব,‌ তখন হঠাৎ করে আকাশের দিকে চোখ পরতেই দেখলাম, কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে।

IMG_20250808_132606.jpg

তখনই প্রকৃতির আশ্চর্যজনক বিষয় নিয়ে আমরা ভাবলাম। কিছুটা দূরে মেঘের কারণে বৃষ্টি পড়ছে, আবার অন্যদিকে আকাশ পরিষ্কার থাকায় এমন সুন্দর চাঁদও দেখতে পাচ্ছি। এগুলো আসলে প্রকৃতির খেলা। যাইহোক এরপর রুমে ফিরে এলাম। রাতে খাওয়ার জন্য অর্ডার দেওয়া ছিলো চিকেন থালি। ফোনগুলো তখন চার্জে দেওয়া ছিলো বলে ডিনারের ছবি আর তোলা সম্ভব হয়নি।

IMG_20250808_132634.jpg

এরপর ঘরে এসে প্রত্যেকের নিজের লাগেজ গুলো একটু গোছগাছ করে রেখে, শুয়ে পড়লাম। সারা দিনের ক্লান্তিতে কখন ঘুম এলো কিছুই বুঝতে পারিনি। বাকি সকালের গল্পটা আপনাদের সাথে পরের দিনের পোস্টে শেয়ার করবো। আজকের গল্প এই পর্যন্তই থাক। আপনাদের কেমন লাগলো আমার পোস্ট পড়ে, সেটা অবশ্যই মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। শুভরাত্রি।

Sort:  
Loading...