"লামাহাটায় ঘোরার অনুভূতি- প্রথম পর্ব "

in Incredible India6 days ago
IMG_20250802_210238.jpg

Hello,

Everyone,

আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো দার্জিলিং এ ঘোরার আরও একটি পর্ব। দার্জিলিং ঘোরার আগের পর্বে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম একটা রেস্টুরেন্টের রিভিউ। পাহাড়ের কোলে বাঙালিয়ানার অনুভূতি যেখান থেকে পেয়েছিলাম, অর্থাৎ লামাহাটায় লালমোহন রেস্টুরেন্টে আমাদের লাঞ্চ করার অভিজ্ঞতা।

IMG_20250802_200219.jpg

আর আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো লামাহাটায় কাটানো আমাদের সুন্দর মুহূর্তের গল্প। চলুন তাহলে শুরু করা যাক। সর্বশেষ যে রিসোর্ট থেকে আমরা এই লামা হাটার উদ্দেশ্যে রওনা করেছিলাম, সেটি ছিল অভিরাজ হোমস্টে। সময়মতো তৈরি হয়ে আমরা সকলেই গাড়িতে উঠে পড়েছিলাম এবং গাড়িও ছুটে চলেছিল লামাহাটার উদ্দেশ্যে।

IMG_20250802_210153.jpg

এই জায়গার ভিডিও এবং রিলস দার্জিলিং এ যাওয়ার আগে এতোবার দেখেছি যে, সব থেকে বেশি এক্সসাইটেড ছিলাম এই জায়গাটা পরিদর্শন করার জন্য। গাড়িতে চলতে চলতে এই জায়গাটা নিয়ে মনের মধ্যে কত যে অনুভূতির আনাগোনা চলছিল সেগুলো শব্দে লিখে বোঝানো অসম্ভব।

IMG_20250802_210224.jpg

যাইহোক আগের দিন আমাদের ড্রাইভার দাদা বলে রেখেছিলেন পরদিন উনি গাড়িটা একটু পরিষ্কার করবেন। তাই গাড়িতে ওঠার পর আমরা বলেছিলাম ওনার সুবিধা মতন যে কোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে উনি যেন গাড়ি পরিষ্কার করে নেন। তাই বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর একটা চা বাগানের কোলে ছোট্ট একটা দোকানের সামনে উনি গাড়িটি দাঁড় করিয়েছিলেন।

IMG_20250802_210251.jpg

প্রথমত সেখানে খুব সুন্দর চা বাগান ছিলো।আর চাইলে ওখানের চা বাগানে গিয়ে ছবি তোলা এবং চা পাতাও তোলার অনুমতি ছিলো। তাই তিনি সেখানেই দাঁড় করিয়েছিলেন, যাতে আমরাও বিরক্ত না হই‌ আর সেখানকার প্রকৃতি ভালো ভাবে উপভোগ করতে পারি।

IMG_20250802_210310.jpg

তখন সকালের টাইম, তবুও রোদ্দুর ছিলো বেশ ভালো। নামার পর আমরা সকলেই মোটামুটি চা বাগানে একটু ঘুরে নিলাম। পাশেই একটা ছোট্ট মতো দোকানে ছিলো, যেখানে বিভিন্ন ধরনের খাবার ছিলো। আর এই দোকানেরই একটা অংশে পোশাক বদলানোর একটা জায়গা ছিলো। যেখানে ৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে পাহাড়ি পোশাক পড়ে আপনারা চাইলে চা বাগানে গিয়ে ছবিও তুলতে পারেন।

আমরা যদিও কেউ পোশাক বদলে ছবি তুলিনি। তবে দোকানের ভিতরে বসে সকলেই একটা করে কোল্ড ড্রিংকস খেয়েছিলাম এবং সেই দোকানের মালিকের সাথে কথোপকথনের সময় দোকান মালিকের কাছ থেকে জানতে পারি, এখান থেকে শরৎকালে কাঞ্চনজঙ্ঘার ভিউ ভীষণ সুন্দর দেখতে পাওয়া যায়। তাই সেই সময় এই জায়গাটায় টুরিস্টদের ভিড় অনেকটাই বেশি থাকে। কিন্তু আফসোস আমরা যখন গিয়েছি, তখন সবটাই মেঘে ঢাকা তাই কোনো কিছুই দেখা যায়নি।

IMG_20250802_200059.jpg

যাইহোক চা বাগানে ঢুকে দেখলাম সেখানে একজন চা তুলছেন, তাই তার একটা ছবি আমরা তুলে নিয়েছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে গাড়ির কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমরা লামাহাটার উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। লামাহাটায় নামার পর মনটা এক নিমেষেই ভালো হয়ে গেলো লামাহাটার দৃশ্য দেখে। জানিনা লিখে কতটুকু আপনাদেরকে বোঝাতে পারবো, তবে এই সৌন্দর্য্য চোখে না দেখে উপলব্ধি করা আসলেই সম্ভব নয়।

IMG_20250802_210210.jpg

যাইহোক সেখানে আমরা সবাই গেটের সামনে অপেক্ষা করলাম, কারন টিকিট কেটে আনতে কিছুক্ষণ সময় লাগছিলো। এরপর আমরা প্রবেশ করলাম। পাইন গাছে মোড়া এক টুকরো সবুজের হাতছানি গোটা জায়গা জুড়ে। মাঝখান থেকে সরু রাস্তা চলে গেছে এবং তা ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠেছে। পাইন বনের মধ্য দিয়ে মাঝেমধ্যেই ধোঁয়ার মতন মেঘ দেখা যাচ্ছে। যে দৃশ্য একেবারেই অকল্পনীয়।

IMG_20250802_205921.jpg

যাইহোক একটু একটু করে আমরা উপরের দিকে উঠতে শুরু করলাম এবং যেটা প্রথমেই চোখে পরলো বড় বড় করে লেখা রয়েছে- I❤️LAMAHATTA । সকল পর্যটকের ভিড় সেখানেই। সকলেই নিজেদের মতো করে সেখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে, তাই একেবারে ফাঁকা হওয়ার অপেক্ষা করা মানেই বোকামি। তাই ভিড়ের মধ্যে এখানেই একটি ফটোগ্রাফি করে নিলাম। এরপর ধীরে ধীরে এগোতে থাকলাম পাইন বনের ভিতরের দিকে। আর একটু একটু করে যেন সবুজের মধ্যে হারিয়ে যেতে থাকলাম।

IMG_20250802_210052.jpg
IMG_20250802_210115.jpg

যতো উপরের দিকে উঠছিলাম ততই যেন মেঘের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছিলাম। সেখানে রাস্তা আলাদাভাবে তৈরি করা নেই। মাটি কেটেই ধাপ করা আছে, যাতে ভালো ভাবে উপরে ওঠা যায়। উপরের দিকে উঠতে উঠতে একটা জায়গাতে ফার্ন গাছ চোখে পড়লো। এতো বড় বড় ফার্ন পাতা এর আগে সত্যিই আমি দেখিনি, জানিনা ছবিটা দেখে আপনারা কতখানি বুঝতে পারছেন, তবে পাতাগুলো অসম্ভব বড়ো ছিলো।

IMG_20250802_210035.jpg
IMG_20250802_210013.jpg

তার থেকে বেশ কিছুটা এগিয়ে যেতে দেখলাম বাঁশ গাছ। একেবারে ছোট্ট ছোট্ট বাঁশ গাছ। যার পাতাগুলোকে আবার সুন্দর করে বেঁধে রাস্তার মতো তৈরি করা হয়েছে। আশাকরছি আপনারা ছবিতে দেখেই বুঝতে পারছেন। সেখান থেকে আমরা ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠতে লাগলাম। সামনে মেঘেদের আনাগোনা দেখতে দেখতে, বেশ কিছুটা ওপরে ওঠার পর যেন আর হাঁটতে পারছিলাম না।

IMG_20250802_210130.jpg
IMG_20250802_205941.jpg

তখনই বুঝেছিলাম মাটি থেকে বেশ অনেকটাই উপরে উঠে এসেছি, সেই কারণে নিঃশ্বাস নিতে একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে একেবারে শেষ পর্যন্ত ওঠার ইচ্ছা ছিলো, তাই বিশ্রাম নিতে নিতে ধীরে ধীরে একটু একটু করে পথ এগিয়েছি। একেবারে শেষ পর্যন্ত যাওয়ার পর বুঝেছি এইটুকু কষ্ট না করলে স্বর্গীয় অনুভূতি পাওয়া হত না।

IMG_20250802_205955.jpg

যাইহোক শেষ পর্যন্ত যেতে পথের মধ্যে আরও অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেগুলো পরের পর্বে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। তবে হ্যাঁ যদি আপনারা কেউ কখনো দার্জিলিং যান, লামাহাটার একেবারে শেষ পর্যন্ত যেতে কিন্তু ভুল করবেন না। রাস্তায় যতটুকু সৌন্দর্য্য আপনি অনুভব করবেন, সেটা খুব সামান্য তার কাছে যেটা একেবারে শেষে গিয়ে আপনার অনুভূত হবে, যাকে বলে একেবারে স্বর্গীয় অনুভূতি।

তাই বাকি পর্বটুকু আপনাদের সাথে আগামী পোস্টে শেয়ার করবো। আশাকরছি আজকের পর্ব পড়তে আপনাদের ভালো লেগেছে। তাই আপনাদের ব্যক্তিগত মতামত অবশ্যই মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। সকলে ভালো থাকবেন। শুভরাত্রি।

Sort:  
 5 days ago 

Thank you for your support @ngoenyi. 🙏

Loading...