"দার্জিলিং ভ্রমন পর্বের প্রথম রাত্রিযাপনের অভিজ্ঞতা"
![]() |
---|
Hello,
Everyone,
আজ এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো পাহাড়ে কাটানো প্রথম রাত কাটানোর অভিজ্ঞতা। যেমনটা আপনাদেরকে গত পোস্টে জানিয়েছিলাম যে আমাদের প্রথম রাত্রি যাপনের জায়গা ছিল শিটং এর একটি হোমস্টে। যার নাম ছিলো ববিতা হোমস্টে।
![]()
|
---|
![]() |
---|
আমাদের সাথে যাওয়া একজন দাদা ফোনে মালিকের সাথে পূর্বে কথা বলে আমাদের জন্য দুটো রুম বুক করে নিয়েছিলো। যার একটিতে আমরা চারটে মেয়ে ছিলাম এবং অন্যটিতে দুজন দাদা ছিলো। রুমগুলো খুবই সুন্দর এবং একেবারে নতুন তৈরি হয়েছিলো, যে কারণে আরও বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ছিলো।
![]() |
---|
![]() |
---|
সবথেকে আকর্ষণীয় ছিলো জানালাগুলো, যেগুলো কাঁচের তৈরি ছিলো, আর শুধুমাত্র পর্দা দেওয়া ছিলো। এছাড়াও বেডগুলো ছিল অত্যন্ত পরিষ্কার। আমরা যতগুলো জায়গাতে এই ট্রিপের মধ্যে রাত কাটিয়েছি, এই হোমস্টেটাই ছিলো আমার সব থেকে বেশি পছন্দের।
![]() |
---|
যাইহোক পাহাড়ি পথ পেরিয়ে হোমস্টেতে পৌঁছাতে আমাদের প্রায় সাড়ে সাতটা বেজে গিয়েছিলো। আগের দিনে রাত থেকে জার্নি শুরু হয়েছিলো, তাই তেমনভাবে ফ্রেশ হওয়ার সুযোগ হয়নি বলে, এক এক করে প্রত্যেকে রুমে ঢুকে লাগেজ খুলে নিয়ে নিজেদের মতো ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর সকলেই একটুখানি শুয়ে নিয়েছিলাম, কারণ ডিনার টাইম এখানে শুরু হয় রাত নটার পর থেকে।
![]() |
---|
আমাদের হোমস্টেটা রাস্তা থেকে বেশ খানিকটা উপরে ছিলো এবং খাবার যে জায়গা সেটা ছিলো আরো একটু উপরে। সম্পূর্ণ জায়গা একজন মালিকেরই ছিলো। উপরেও অনেকগুলো কটেজ করা আছে, যেখানে চাইলে আপনারাও থাকতে পারেন। তবে কটেজে থাকতে গেলে তার ভাড়া একটু বেশি পড়ে।
![]()
|
---|
যাইহোক খাবারের সময় হতেই আমাদের কাছে খবর এলো, আমরাও নিজেদের মতো তৈরি হয়ে খাওয়ার জন্য উপরে পৌঁছালাম। উপরের সম্পূর্ণ জায়গাটা এতো সুন্দর সাজানো গোছানো ছিলো, যেটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। এমনকি বাইরে খুব সুন্দর বসার জায়গাও করা ছিলো। আসলে যখন পর্যটকদের চাপ বাড়ে, তখন ডাইনিং এরিয়া ফুল হয়ে গেলে বাকিরা যাতে বাইরে বসে অপেক্ষা করতে পারে, সেই কারণেই এই ব্যবস্থা।
এমনকি খাওয়া দাওয়ার পরেও সকলেই বাইরে বসে বেশ কিছুটা সময় উপভোগ করে, প্রকৃতিকে দেখে কাছ থেকে দেখে। এই জায়গার একটা সুন্দর ভিডিও আমি করেছি কিন্তু যেহেতু ইউটিউবে আমার কোনো চ্যানেল নেই, তাই আপনাদের সাথে সেটা শেয়ার করতে পারলাম না।
![]() |
---|
![]() |
---|
যাইহোক আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন ডাইনিং এড়িয়াতে ততটা ভিড় ছিল না, তাই ছয় জন বসার মত একটা টেবিল দেখে আমরাও বসে পড়লাম ডিনার করতে। আমাদের অর্ডার ছিলো চিকেন থালি। রান্নাবান্না মোটামুটি ভালোই ছিলো, তবে পাহাড়ের সমস্ত জায়গাতেই ভাতগুলো একটু অন্য স্বাদের হয়।
![]() |
---|
যাইহোক সারাদিন পরে গরম গরম ভাত খেতে ভালোই লাগলো। খাবার জায়গার পরিবেশটাও খুব সুন্দর ছিলো এবং তাদের আতিথেয়তাও ছিল অতুলনীয়।
খাওয়া-দাওয়া শেষে আমরা সকলে বাইরে এসে একটু হাঁটাহাঁটি করলাম এবং নিজেদের মতো করে সময়ও কাটালাম। ততক্ষণে বাইরে অনেক শিশির পড়ে গিয়েছিলো, ঠান্ডাও ছিলো বেশ।
![]() |
---|
![]() |
---|
হাঁটতে হাঁটতে গাছের উপরে পড়ে থাকা শিশিরের ছবিও তোলার চেষ্টা করলাম। জানিনা ছবিতে আপনারা কতখানি বুঝতে পারছেন। উপরে দাঁড়িয়েই নিচে আমাদের থাকার জায়গার ছবিটাও তুলে নিয়েছিলাম, কারণ পরদিন সকালে আবার তৈরি হয়ে বেরোনোর ব্যস্ততা থাকবে, তাই হয়তো সকালে আর এমন সুযোগ হবে না।
সেখানে বসে পরের দিনের কিছু বিষয় নিয়ে প্ল্যানিং করে, কথাবার্তা সম্পন্ন করে আমরা সকলেই রুমে চলে গেলাম। তারপর নিজেদের মধ্যে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে যার যার মতন আমরা শুয়ে পড়লাম। পরদিন সকালে পর্দা ভেদ করে রোদ্দুরের আলো রুমে এসে পড়তেই ঘুম ভাঙলো। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি ৪.৫৪ বাজে।
![]() |
---|
এতো সকালে রুমে এতো আলো হয়ে যাবে সেটা ভাবতেই পারিনি। যাইহোক আগের দিন রাতেই আমরা প্ল্যান করেছিলাম যে সকালে আশেপাশটা একটু ঘুরে দেখবো। সেই উদ্দেশ্যে সকলে তৈরি হচ্ছিলো। আপনাদের হয়তো মনে থাকবে সেই মুহূর্তে বসে আমি আপনাদের সাথে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য পোস্ট লিখেছিলাম।
![]() |
---|
![]() |
---|
পোস্ট লেখা সম্পন্ন করে আমিও তৈরি হয়ে সকলে বাইরে বেড়াতে যাবো,তার আগে কিছুক্ষণ সময় ব্যালকনিতে দাঁড়ালাম। সে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। ঘুম থেকে উঠে এতো সুন্দর পরিবেশ দেখাও যেন চোখকে শান্তি দিলো।রেডি হয়ে বাইরে বেরোনোর সময় দেখি গেটের কাছে বসে আছেন আমাদের পাহারাদার।
ওকে দেখেই পিকলুর কথা মনে পড়লো। পাহাড়ে প্রত্যেকটা জায়গাতে এদের উপস্থিতি আমাকে পিকলুর কথা মনে করিয়েছে। এরা এতো ভালো, প্রত্যেকের সাথে এতো ভালো ভাবে মিশে যায়, সেটা আপনারা সামনে থেকে না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। মুহূর্তের মধ্যে আমাদের বন্ধু হয়ে উঠলো সে। বাইরে বেরিয়ে কিছুটা সময় তার সাথে অতিবাহিত হলো। আমাদের পিছু পিছু সেও আশপাশটা ঘুরে দেখলো বা বলতে পারেন নিজের জায়গা সে আমাদের ঘুরিয়ে দেখালো।
![]() |
---|
![]() |
---|
![]() |
---|
এরপর রুমে ফিরে সকলে মিলে চা খেয়ে নিলাম। রুমের ভিতরেই সব কিছুর আয়োজন ছিলো। তাই আলাদা করে আর কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন ছিল না। দুটো ফ্লেভার এর চা ছিলো সেখানে, আমি দুটোই ট্রাই করেছিলাম। বেশ ভালো ছিল খেতে।
এরপর আমরা তৈরি হয়ে নিজেদের লাগেজ গুছিয়ে নিলাম। কোনো কিছু যাতে রুমে থেকে না যায় সেটা ভালো করে চেক করে, লাগেজ গুলো গাড়িতে তোলার জন্য বাইরে দিয়ে দিলাম। বেরোনোর ঠিক আগের মুহূর্তে ওখানকার মালিকের সাথে সকলে মিলে দাঁড়িয়ে একটা ছবিও তুলে নিলাম। এই মুহূর্তগুলোই তো আসলে সাথে থেকে যাবে।
![]()
|
---|
এই মানুষগুলোর সাথে জীবনে আর কখনো দেখা হবে কিনা জানিনা। তবে জীবনের একটা অধ্যায়ে এদের নাম এবং মুখ গুলো জমা হলো। আর অভিজ্ঞতা হলো এই পৃথিবীতে আজও ভালো মানুষ বিলীন হয়ে যায়নি এই সত্যতার। আজও পোস্ট লিখতে গিয়ে তার কথা মনে পড়লো। যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক এই মানুষগুলো, এই প্রার্থনা নিয়ে আজকের পোস্ট এখানেই শেষ করছি।
এটি ছিলো আমার পাহাড়ের প্রথম কাটানো রাতের অভিজ্ঞতা। যেটা খুবই সুন্দর ও উপভোগ্য ছিলো। আপনাদের আমার পোস্ট পড়ে কেমন লাগলো, তা অবশ্যই মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। সকলে ভালো থাকবেন। শুভরাত্রি।
Thank you for your support @shiftitamanna 🙏