দীঘার জগন্নাথ মন্দির দর্শন(তিতলি তাতানের আনন্দঘন মুহূর্তের দ্বিতীয় পর্ব)

in Incredible India27 days ago
IMG_20250627_172635.jpg

Hello,

Everyone,

আপনাদের সকলকে জানাই শুভ রথযাত্রার অনেক শুভেচ্ছা। গতকাল আপনাদের সাথে তিতলি ও তাতানের দীঘায় কাটানো কিছু আনন্দের মুহূর্তের কথা শেয়ার করেছিলাম, আজকে পরবর্তী অংশটুকু শেয়ার করবো।

IMG_20250627_103256.jpg

বিয়ের পর আমার দিদি যখন দীঘায় ঘুরতে গিয়েছিলো, তখন এই চন্দনেশ্বর মন্দিরে পূজো দিয়েছিল এবং সেখানে মানত করেছিলো। আসলে শারীরিক কিছু সমস্যার কারণে সেই মুহূর্তে দিদি কিছুতেই কনসিভ করতে পারছিলো না। তাই শুধু এই চন্দনেশ্বর মন্দিরে নয়, তিতলি হওয়ার আগে অনেক জায়গাতে মানত করেছিলো। ধীরে ধীরে সব জায়গাতেই পূজো দেওয়া শুরু করেছে দিদি। চন্দনেশ্বর মন্দির তার মধ্যে একটি ছিলো।

IMG_20250627_103310.jpg

যাইহোক পরদিন সকালে উঠে হোটেল থেকে স্নান সেরে সোজা ওরা মন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা করেছিলো। সেখানে সকলে মিলে পূজো সম্পন্ন করে মন্দিরের বাইরে এসে কিছু ছবি তুলেছিলো। বোধহয় ওখানে মন্দিরের ভিতরের ছবি তোলার অনুমতি নেই, যদিও ফোনে আমি জিজ্ঞাসা করিনি। যাইহোক শান্তিপূর্ণভাবে এবং নিজেদের মনের মতন করে ওরা পুজোর সম্পন্ন করতে পেরেছিলো এটাই বড় কথা।

IMG_20250627_103242.jpg

সেদিন মন্দির থেকে ফিরে ওরা ব্রেকফাস্ট করে আবার বেশ কিছুক্ষণ সমুদ্রে কাটিয়েছিলো। বিকেলের দিকে প্ল্যান ছিল দীঘাতে তৈরি করা নতুন জগন্নাথ মন্দিরের সময় কাটাবে। তাই সমুদ্রে খুব বেশিক্ষণ সময় সেদিন কাটায়নি। সমুদ্র থেকে উঠে হোটেলে এসে স্নান করে, দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বিশ্রাম নিয়ে, বিকালের দিকে গিয়েছিলো জগন্নাথ মন্দির দর্শন করতে।

IMG_20250627_103336.jpg
IMG_20250627_103322.jpg

যদিও দিদিরা ইতিমধ্যে পুরীর জগন্নাথ মন্দির ঘুরে দেখেছে। তবে আমি দুটোর কোনোটাই দেখিনি। আমরা লাস্ট বার যখন দীঘায় গিয়েছিলাম তখন মন্দির তৈরীর কাজ চলছিলো। দিদির কাছে শুনলাম বিশাল এলাকা জুড়েই তৈরি হয়েছে এই জগন্নাথ মন্দির, যেখানে সময় কাটালে মন এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।

IMG_20250627_002334.jpg
IMG_20250627_002300.jpg

বহু মানুষের ভিড়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। youtube এর কয়েকটি ভিডিওতেও দেখেছি সেখানে মানুষের ঢল নামে। এমন কি মন্দিরের সামনে থেকে সমুদ্র পর্যন্ত যে রাস্তা গেছে সেটা যেমন সুন্দর, তেমনি সুন্দর‌করে ঘাটও তৈরি করা আছে, যেটা জগন্নাথ ঘাট নামেই পরিচিতি পেয়েছে।

IMG_20250627_103431.jpg
IMG_20250627_103403.jpg
IMG_20250627_103350.jpg
IMG_20250627_002319.jpg

যাইহোক মন্দিরে ঢুকে ওরা বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়েছে, তিলক পড়েছে, মন্দিরে পূজো দিয়েছে এবং নিজেদের মতন করে সেখানে বসে সুন্দর সময় কাটিয়েছে। যার মধ্যে কিছু মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করেছে। তিতলি ও তাতানো মন্দিরে ঘুরে ঘুরে সমস্ত জায়গায় খেলা করেছে, দৌড়াদৌড়ি করেছে, মনের আনন্দে সুন্দর মুহূর্ত উপভোগ করেছে দুজন মিলে।

IMG_20250627_103417.jpg

মন্দিরের ভিতরেই একটি জায়গাতে ছোট্ট জলাশয়ের মধ্যে পদ্ম ফুলের গাছ লাগিয়েছে, যেটা পদ্মপুকুর নামে অভিহিত হয়েছে। সে জায়গাটা নাকি আরো সুন্দর লাগে, বিশেষ করে সন্ধ্যার পর যখন আলো গুলো জ্বলে তখন দৃশ্যগুলো আরো বেশি উপভোগ্য হয়। সেখানে দিদিরাও বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়েছে।

খুব সত্যি কথা বলতে ছবিগুলো দেখার সময় আমার মনে শুধু একটাই কথা চলছিলো, আজ থেকে দু বছর আগে দাদার শারীরিক পরিস্থিতি যা ছিলো, তাতে এই রকম মুহূর্ত যে আমরা কখনো সামনে থেকে দেখতে পারবো, এটাই ভাবতে পারতাম না। ঈশ্বরের অসীম কৃপা তিনি দাদাকে সুস্থ করেছেন, তার পরিবারের সাথে এতো সুন্দর মুহূর্ত উপভোগ করার সুযোগ দিয়েছেন আবারও।

কথায় আছে আয়ু থাকলে সে বেঁচে থাকে। ঠিকই আমার তো মনে হয় ঈশ্বরের কৃপা থাকলে তবেই এই পৃথিবীতে আমরা সুস্থ ভাবে বাঁচতে পারি।‌ অন্যথায় কোনোভাবেই তা সম্ভব নয়। কারণ দিদির মুখে যখন দাদার শারীরিক পরিস্থিতির কথাগুলো আজ শুনি, তখন বুঝতে পারি কি কঠিন পরিস্থিতিতে প্রতিদিন ও দাদাকে দেখেছে এবং নিজের সেবা যত্নে একটু একটু করে দাদাকে সুস্থ করেছে।

IMG_20250627_103528.jpg

যাইহোক ছবিগুলো দেখে সেই কঠিন সময়ের কথায় বারবার মনে হচ্ছিলো। আমরা প্রত্যেকেই প্রার্থনা করেছিলাম তখন। অন্তত তিতলি তাতানের মুখের দিকে তাকিয়ে ঈশ্বর যেন দাদাকে সুস্থ করেন। কারণ এই ছোট্ট দুটো বাচ্চাকে বাবাকে ছাড়া বড় করে তোলার মতো শক্তি আমার দিদি কখনোই পেতো না। আর সত্যি কথা বলতে যেহেতু দিদি চাকরি করে তাই বাচ্চাগুলোর বন্ডিং বাবার সাথে অনেক বেশি ছিলো। সেই সময় শুধু আমরা না, তিতলি, তাতান ও অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছে বাবার জন্য।

সেইসব দিনের কথা এখন মনে করতে ভয় হয়। বিশ্বাস করতে অবাক লাগে কি করে আমরা এই কঠিন সময় পার করেছি। তবে সেই কঠিন সময়ের গল্প যেমন আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি, তেমনি আজ এই আনন্দের মুহূর্ত গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।‌

আশা করছি আপনাদের সেগুলো‌ পড়তে ভালো লাগবে এবং আপনারাও ওদেরকে আশীর্বাদ করবেন যেন এইভাবেই বাবা-মায়ের ছত্রছায়ায় মানুষের মত মানুষ হতে পারে। অন্তত আজকের যুগে দাঁড়িয়ে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হোক এই প্রার্থনা আমি করি না, শুধু এটুকুই ঈশ্বরের কাছে চাই ওদেরকে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার আশীর্বাদ যেন তিনি দেন।

যাইহোক দিদির সাথে কথা প্রসঙ্গে আর ওর পাঠানো ছবির মাধ্যমে আপনাদের সাথে ওদের ঘোরার আনন্দটুকু তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। আজকের পোস্ট এখানেই শেষ করছি।‌ আপনারা সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আজকের দিনটি সকলের খুব ভালো কাটুক এই প্রার্থনা রইলো।