"ঘুম স্টেশন ও মিউজিয়ামে কাটানো কিছু সুন্দর মুহুর্তের স্মৃতি চারণ"

in Incredible India2 days ago (edited)
IMG_20250806_205239.jpg
"ঘুম স্টেশন"

Hello,

Everyone,

দার্জিলিঙে ঘুরতে যাওয়ার পর পাহাড়ের প্রথম বৃষ্টির সৌন্দর্য্য যেখানে উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছিলাম, দার্জিলিং এর নাম শুনলেই যে জায়গাটির কথা আমাদের প্রত্যেকের মনে আসে, আজ সেখানে ঘোরার মুহূর্তগুলো আপনাদের সাথে এই পোস্টের মাধ্যমে শেয়ার করার জন্য উপস্থিত হলাম।

আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো আমার পোস্টের জন্য নির্ধারিত টাইটেল এবং শুরুতে ব্যবহৃত ছবিটা দেখে আন্দাজ করেছেন, আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো পৃথিবীর সর্বোচ্চ রেলওয়ে স্টেশন অর্থাৎ দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়েতে অবস্থিত ঘুম স্টেশনে কাটানো কিছু মুহূর্তের অভিজ্ঞতা।

লামাহাটায় সেদিন খুব ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করার পর সেখান থেকে লাঞ্চ সেরে আমরা রওনা করেছিলাম ঘুম স্টেশনের উদ্দেশ্যে। ঘুম স্টেশনের কথা এর আগে বহু জায়গায় পড়েছি এবং ছবি, ভিডিও দেখেছি অনেকবার।

IMG_20250806_205403.jpg
"তখন টিপটিপ করে বৃষ্টি শুরু হয়েছিলো"

এছাড়াও হয়তো অনেকেই জেনে থাকবেন আমাদের কলকাতায় ইকো পার্কে ঘুম স্টেশনের আদলে একটা স্টেশন তৈরি করা আছে। সেখানে ঘুরতে গিয়েও একবার মনে মনে ভেবেছিলাম সত্যিকারের ঘুম স্টেশনে কখনো না কখনো নিশ্চয় যাবো। কিন্তু সেই ভাবনাটা বাস্তবে এত তাড়াতাড়ি রূপান্তরিত হবে এবং চোখের সামনে থেকে তার সৌন্দর্য্য উপভোগ করার সুযোগ পাবো, এটা সত্যিই সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে খানিক অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিলো।

যাইহোক লামাহাটা থেকে ঘুম স্টেশনে যাওয়ার পথে রাস্তায় আমরা প্রচুর গাড়ির জ্যামে আটকে গিয়েছিলাম এবং সেই মুহূর্তে হঠাৎ করে বৃষ্টি পড়তেও শুরু করেছিলো। এর আগে পর্যন্ত পাহাড়ে তেমন ঠান্ডা অনুভূত হয়নি, কিছুটা ঠান্ডা পেয়েছিলাম যখন আমরা তিনচুলে হোমস্টেতে ছিলাম।

IMG_20250806_205456.jpg
"ওভারব্রীজ থেকে ঘুম স্টেশন ও ট্রেন লাইনের তোলা ছবি"

যাইহোক বৃষ্টি কিছুক্ষণ বাদে থেমে যাবে বা খুব একটা ঠান্ডা লাগবে না এমনটা ভেবেই ব্যাগ থেকে আর আলাদা করে আমরা কেউই সোয়েটার বা চাদর কিছু বের করিনি। শুধু ছাতা নিয়েই নেমে গিয়েছিলাম ঘুম স্টেশনে। সেখানে আসলে গাড়ি রাখার কোনো জায়গা নেই, তাই আমাদের ড্রাইভার দাদা বেশ কিছুটা এগিয়ে একটা পার্কিংয়ে দাঁড়াবেন জানিয়েছিলেন।

ঘুম স্টেশনে নামতেই বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। তাই কিছুক্ষণ আমরা প্ল্যাটফর্মের ভিতরেই দাঁড়িয়ে রইলাম। আমাদের ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল বহু পুরনো একটি রেল ইঞ্জিন, যেটা বর্তমানে আর টয় ট্রেন চালানোর জন্য ব্যবহৃত হয় না। বৃষ্টি এবং কুয়াশার চারিপাশটা এমন আচ্ছন্ন হয়েছিল যে, প্লাটফর্ম থেকে সামনের ওভার ব্রিজটাও খুব একটা ভালোভাবে বোঝা যাচ্ছিল না।

IMG_20250806_205329.jpg
"আমরা চারজন"

যাইহোক সেখান থেকে আমরা ঘুম মিউজিয়ামে যাওয়ার জন্য টিকিট কেটে নিলাম। এরপর সকলে মিলেই প্রবেশ করলাম মিউজিয়ামে যাওয়ার রাস্তায়। সেখানে একটা জায়গা তৈরি করা আছে, চাইলে সেখানে দাঁড়িয়ে সকলে ছবি তুলতে পারে এবং আমরাও সেই সুযোগ হাতছাড়া করলাম না। সেখানে দাঁড়িয়েই বেশ অনেকগুলো ছবি ও ভিডিও তুলে নিলাম। বৃষ্টি তখনও টুপটাপ করে পড়ছিলো, তবে মুষলধারায় তখনো বৃষ্টি পড়তে শুরু করেনি।

IMG_20250806_205217.jpg
"মিউজিয়ামে প্রবেশের আগে তোলা ছবি"

যখন আমরা ছবি তুলছিলাম তখন আরো দুজন আমাদের পাশেই ছবি তুলছিলেন। তাদের মধ্যে থেকেই হঠাৎ একজন এসে আমাদেরকে অনুরোধ করলো তাদের কয়েকটি ছবি তুলে দেওয়ার জন্য। আমরাও তাদের ছবি তুলে দিলাম এবং শেষে আমরাও তাদেরকে অনুরোধ করলাম আমাদের সাথে একটা ছবি তোলার জন্য।

IMG_20250806_205442.jpg
"কিছু স্মৃতি আজীবন থাকবে মনের কোণে"

যেহেতু তারা সেখানকার স্থানীয় পোশাক পড়েছিলেন আর স্মৃতি হিসেবে এই একটা মুহূর্ত আমরাও নিজেদের সাথে রাখতে চেয়েছিলাম। যদিও তারা নিজেদের মধ্যে স্থানীয় ভাষায় কথা বলছিলেন, কিন্তু আমাদের সাথে তারা হিন্দিতে কথা বলছিলেন। আমরা তাদেরকে রিকোয়েস্ট করাতে তারা দুজনেই আমাদের সাথে ছবি তুলতে রাজি হয়ে যায়। সত্যি বলতে এই জীবনে তাদের সাথে আর দেখা হবে কিনা জানিনা, তবে এই স্মৃতিটুকু ওই ঘুম স্টেশনে কাটানো দুইজন অপরিচিত মানুষের সাথে এক সুন্দর মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে রইবে আজীবন।

IMG_20250806_205535.jpg
"কিছু তথ্য সেখানে লেখা ছিলো"
IMG_20250806_205521.jpg
"ঘুম স্টেশনের ওভারব্রীজে দাড়িয়ে তোলা ছবি"

যাইহোক এরপর ঘুম মিউজিয়াম দেখার উদ্দেশ্যে আমরা ওভারব্রিজ দিয়ে মিউজিয়ামের উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। সেই মুহূর্তেই একেবারে মুষলধারায় বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। মিউজিয়ামের মধ্যে কোনো ফোন, ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ করার অনুমতি ছিলনা বলে, সেখানকার কোনো ছবি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারলাম না। তবে সেখানে দেখার মতন অনেক কিছুই রয়েছে যখন এই ঘুম স্টেশনে প্রথম টয় ট্রেন চালু হয় তখনকার ব্যবহৃত অনেক জিনিস সেখানে খুব সুন্দর ভাবে যত্ন সহকারে রাখা আছে। যেন একেবারে সামনে থেকে ইতিহাস দর্শন করার সুযোগ পেলাম।

IMG_20250806_205552.jpg
"ট্রয় ট্রেনের কামরা"

আমরা মিউজিয়ামেই ঘুরছিলাম ঠিক সেই সময় আওয়াজ পেলাম টয় ট্রেনের এবং এক দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখতে পেলাম একটা ট্রেন এসে তখন স্টেশনে দাঁড়ালো। সত্যি কথা বলতে আমরা যে ধরনের স্টেশন দেখতে অভ্যস্ত এই স্টেশনগুলো একেবারেই তেমন নয়। আপনারা হয়তো খানিকটা রেল লাইনের গঠন দেখেও আন্দাজ করতে পারবেন।

যাইহোক এখানকার টয় ট্রেনগুলি দুটি কামরার হয় এবং এই টয়ট্রেন গুলিতে ওঠার জন্য আপনাদেরকে আগে থেকেই টিকিট বুক করতে হবে। আপনারা চাইলে এখানে আসার আগে অনলাইনেও বুক করে আসতে পারেন, কিংবা এসে টিকিট কাটতে পারেন। যদিও সেক্ষেত্রে আপনাদেরকে এক দুদিন ওয়েট করতে হতে পারে।

IMG_20250806_205346.jpg
"পুরোনো একটি ইঞ্জিনের সামনে দাঁড়িয়ে তোলা ছবি"

এই টয় ট্রেনে করে আপনি দার্জিলিং ঘুম স্টেশন হয়ে বাতাসিয়া লুপ ঘুরে আসতে পারবেন। এখানে আপনি দুই রকম ট্রেনের অভিজ্ঞতা নিতে পারেন, প্রথমটি বাষ্পীয় ইঞ্জিন চালিত ট্রেন এবং দ্বিতীয়টি ডিজেল চালিত ট্রেন। তবে প্রথমটির ক্ষেত্রে ভাড়া বেশি পরে, কারণ সেখানে আপনি একেবারে ঐতিহাসিক যুগের অভিজ্ঞতা পাবেন এবং সেই ক্ষেত্রে ইঞ্জিনের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ অনেক বেশি ডিজেল চালিত ট্রেনের তুলনায়।

IMG_20250806_205614.jpg
"আমি ও রাখি"

এই কারণে ডিজেল চালিত ট্রেনের টিকিট আপনি প্রায় এক হাজার টাকার মধ্যে পেয়ে গেলেও বাষ্পচালিত ট্রেনের ক্ষেত্রে দেড় হাজার টাকার মত ভাড়া লাগবে। তবে এই ট্রেনের ভাড়া পরিবর্তিত হতে পারে। তাই টিকিট কাটার পূর্বে অবশ্যই একবার আপনারা অনলাইনে চেক করে নিতে পারেন। এবং আপনাদের যে সময় দেওয়া হবে সেই সময়েই আপনাদেরকে স্টেশনে উপস্থিত হতে হবে।

এই ট্রেনটি ঘুম স্টেশনে প্রায় ২০ থেকে ২৫ মিনিট দাঁড়ায়। যার মধ্যে আপনারা ঘুম মিউজিয়াম ঘুরে আসতে পারবেন। এরপর বাতাসিয়া লুপে গিয়েও প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় দেয়, যাতে করে সেই জায়গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আপনারা উপভোগ করতে পারেন এবং নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী সুন্দর কিছু ছবিও তুলতে পারেন। এরপর ট্রেনের হর্ন শুনে আবার সকলে ট্রেনে উঠে পড়েন এবং সেখান থেকে ট্রেন আবার রওনা করে দার্জিলিং স্টেশন এর উদ্দেশ্যে।

IMG_20250806_205425.jpg
"আরও একটি স্মৃতি"

পোস্টটা লেখার সময় যেন সেই ট্রেনের হর্নের আওয়াজ এখনো কানে অনুভূত হচ্ছে। সে এক অনন্য অভিজ্ঞতা যেটা ভিডিও বা ছবিতে দেখার থেকেও বাস্তবে সামনাসামনি দেখার বা শোনার আনন্দই আলাদা। যদিও ট্রেনটিকে সামনে থেকে দেখে এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে, তবে পরবর্তীতে গেলে অবশ্যই একবার ট্রেনে চড়ার ইচ্ছা রইলো। আশা করছি সেই অভিজ্ঞতা আরও বেশি সুন্দর হবে ।

যাইহোক টয়ট্রেনে উঠে কিছু ছবি যদি আপনারা তুলতে চান, তাহলে যখন স্টেশনে ট্রেনটা দাঁড়াবে তখন আপনারা চাইলে গিয়ে কিছু ছবি বা ভিডিও তুলতে পারেন। তার জন্য বেশ কিছুটা সময় আপনারা পাবেন। আসলে এই সময় ইঞ্জিন পরিবর্তন হয়, যে কারণে কিছুটা সময় টয় ট্রেনের কামড়াতে উঠে আপনারা ছবি তোলার সুযোগ পাবেন। আমরা যখন সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তখন মানুষের ভিড় বেশ ভালোই ছিলো। কারণ পরবর্তী ট্রেন ছাড়ার সময়ও প্রায় হয়ে এসেছিলো, তাই যাদের টিকিট কাটা ছিল তারা সকলেই সেখানে উপস্থিত ছিলো।

IMG_20250806_205305.jpg
"কল্পনা যখন সত্যি হয় তা অবিশ্বাস্য লাগে দাড়িয়ে সেটাই ভাবছিলাম"

যাইহোক ঘুম স্টেশন নিয়ে সত্যিই অনেক কিছু কল্পনা ছিল এবং সেখানে গিয়ে সেই কল্পনাই যে এত সুন্দর ভাবে বাস্তব রূপ নেবে তা কখনো ভাবি নি। সে এক অকল্পনীয় অভিজ্ঞতা। ভবিষ্যতে যদি আবারও যাই তবুও প্রথমবারের মতন এমন ভালো লাগা কাজ করবে কিনা সত্যিই জানিনা।

IMG_20250806_205641.jpg
"এটা দার্জিলিং স্টেশন"

যাইহোক ঘুম স্টেশনের ঘোরার অভিজ্ঞতা আমাদের সত্যিই খুব ভালো ছিলো। আর বৃষ্টি ছিলো আমাদের উপরি পাওনা।যদি আপনারা কখনো দার্জিলিংয়ের যান তাহলে অবশ্যই এই ঘুম মিউজিয়াম দর্শন করতে ভুল করবেন না। আমার অভিজ্ঞতা আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আপনাদের কেমন লাগলো তা অবশ্যই মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। সকলে ভালো থাকবেন। শুভরাত্রি।

Sort:  
Loading...