বিদায় আমার ছোট্ট পরি।

in Incredible India27 days ago (edited)

IMG_0053.jpeg

IMG_0359.jpeg

IMG_0640.jpeg

আজকে বেশ কয়েকদিন পরে লিখতে বসলাম। এরমাঝে লেখার কথা বেশ কয়েকবার মনে পড়েছে কিন্তু লেখার মতো মনের অবস্থা ছিল না। কিভাবে শুরু করবো সেটাও বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। গত রবিবার সকাল থেকে দিনটা শুরু হয়েছিল বেশ ভালোভাবেই। মনটাও ভালো ছিল কারণ প্রায় দেড়মাস পরে সেদিন ভাই- ভাবি সৌদি আরব থেকে হজ্জ্ব পালন করে দেশে আসবে ঐদিন।

আমার ঘুম ভাঙার সাথে সাথে ক্যারামেলও উঠে পড়েছিল আমার সাথে সাথেই। এটা প্রতিদিনের রুটিন ওর। ও যেহেতু আমার সাথেই ঘুমায় তাই ওর ঘুমের রুটিন আমার মতোই। ওর ঘুম খুব পাতলা যার কারণে আমি যতই চেষ্টা করিনা কেন যে ওর ঘুম ভাঙ্গবো না কিন্তু ও ঠিকই উঠে পরে।

IMG_0335.jpeg

IMG_9989.jpeg

বেশ কয়েকদিন সামান্য অসুস্থ ছিল কিন্তু দুদিন ধরে একদম সুস্থ ছিল,খাওয়া দেওয়ার কোনো সমস্যাও ছিল না। রান্না করার সময় বিরক্ত বলে ওকে ওর খাবার দিয়ে ছেলেদের রিউমে দিয়ে এসেছিলাম। প্রায় সারাদিনই ঘুমিয়েছে ও সেদিন। মাঝে কয়েকবার উঠেছিল কিন্তু উঠে ওর খাবার যেয়ে আবারো ঘুমিয়েছে। এটা অবশ্য ওর জন্য খুব সাধারণ একটা ঘটনা। কারণ শুধু ও-ই না প্রতিটা বিড়ালই দিনের মধ্যে প্রায় ১৩-১৪ ঘণ্টাই ঘুমিয়ে কাটায।

বিকেলে ঘন্টা খানেকের জন্য আমার ছেলে ওকে ঘুম থেকে টেনে তুলে ওদের রাম থেকে বের করে দিয়েছিলো কিন্তু সেটাও খুব বেশি সময়ের জন্য না। ও আবার ওদের রুমে ঢুকে ঘুমিয়ে পরে।

অবশ্য সন্ধ্যার পরে আমার পেছনে পেছনে ওদের রুম থেকে বের হয়ে আসে। এসে জানালার বাইরে গিয়ে বসে। ছেলেকে দিয়ে ওকে রুমে নিয়ে আসি। আমরা ওর ভয়ে ও যতক্ষণ রুমের বাইরে থাকে ততক্ষন বারান্দার দরজা ও রুমের জানালা বন্ধ রাখি।

সবসময়ই ভয় কাজ করে ও নিচে পরে না যায়। যেহেতু আমি ৯ তলায় থাকি তাই এখন থেকে পরে গেলে বাঁচার সম্ভবনা খুব কম। বাইরে নেট লাগিয়ে বাসা ক্যাটপ্রুফ করবো সে উপায় নেই ,বাড়িওলা এটা মানবে না। এই পরে যাওয়ার ভয়ে আমি এতো বছর বিড়াল পুষি নাই।

IMG_0472.jpeg

IMG_0498.jpeg

IMG_0354.jpeg

সত্যি বলতে ওকে কিংবা সিম্বাকে আমি নিজে থেকে বাসায় আনি নাই। বলা যায় অনেকটা নিজে থেকেই এসেছিলো ওরা আমার কাছে। সিঁড়ির ওপর সিম্বার কান্নার শব্দ পেয়ে ওকে বাসায় এনেছিলাম। ওর মা কিংবা মালিকের খোঁজ না পেয়ে নিজের কাছে রেখেছিলাম। আবার কারামেলকেও আহত অবস্থায় আমাদের বাড়ির কেয়ারটেকার রাস্তা থেকে ওকে উদ্ধার করে এনে আমার কাছে দিয়েছিলো।

কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য ওদের একজনকেও আমার কাছে ধরে রাখতে পারলাম না আমার নিজের ও আমার পরিপারের সবটুকু ভালোবাসা দিয়েও। ওদেরকে আমরা একদম নিউবর্ন বেবির মতো করে যত্ন নিয়েছি।

আমার ছেলে ওকে রুমে আনার পরে আবার ঘুমিয়ে পরে ,এরমাঝে ভাইয়ের বাসায় যাবো বলে আমি রেডি হচ্ছিলাম। ও রুম থেকে বের হয়েছিল খুব বেশি হলে দশ মিনিট। এরমাঝে সামান্য খাবারও খেয়েছে। এরমাঝে কখন যে রান্নাঘরে ঢুকেছে আমরা কেউ দেখি নাই।

IMG_0279.jpeg

IMG_0508.jpeg

রান্নাঘরের জানালার গ্লাস সামান্য খোলা ছিল ,যেখান দিয়ে ওর পক্ষে ঢোকা সম্ভব না। কিন্তু গ্লাসটা খোলার সময় কিভাবে যেন সামান্য বাঁকা হয়ে খুলেছিলো । উপরের দিকটা একটু বেশি খোলা। সেখান দিয়েও ওর পক্ষে বের হওয়া বেশ কঠিন। কিন্তু ও গ্রিল বেয়ে উপরে উঠে সেই কঠিন কাজটাই করেছে আর সেখান দিয়ে বের হয়ে বারান্দায় বেরিয়ে গেছে ,
ওরা খাচ্ছিলো ,এর মাঝে নিচ থেকে হন্তদন্ত হয়ে বাসার কেয়ারটেকার এসে খবর দেয় যে ও নিচে পরে গেছে।

আমরা নিচে গিয়ে দেখি ওকে দারোয়ান গ্যারেজে এনে রেখেছে। আমি ওকে কোলে নেই শেষবারের মতো। ও আমাকে চিনতে যে পেরেছিলো সে ওর চাহনি দেখেই টের পাই আমি। আমার দিক থেকে ও ওর দৃষ্টি আমার ছোট ছেলের দিয়ে দেয়।

d62c5105-0488-4130-a71d-224e1eac4449.jpeg

মারা যাওয়ার দিন সন্ধ্যায় তোলা ওর শেষ ছবি (হোয়াটসঅ্যাপ থেকে নেয়া ছবি )

এরপর আবারো আমার দিকে তাকায়। আমার কোলে এসে শান্ত হয়ে যায়।বড়ো ছেলে দৌড়ে উপরে চলে যায় গাড়ির চাবি আনার জন্য। কিন্তু ও আমার দিয়ে সামান্য সময় তাকিয়ে থাকার পরে আমার দিকে তাকিয়েই আমার কোলে শেষ নিঃশ্বাস ছাড়ে।
আমার পক্ষে আসলে আর কিছু লেখা সম্ভব হচ্ছে না।



Thank You So Much For Reading My Blog

Sort:  
Loading...