মাঙ্গার পাতায় আঁকা কল্পনার ধ্বংসযজ্ঞে বাস্তবিক আতংক !!

in Incredible India2 months ago (edited)

IMG_0735.jpeg

সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেয়া ছবি

মাস খানেক আগে ইউটিউব সার্চ করার সময় একটা ক্যাপশনের দিকে আমার নজর পরে। শিরোনামটা আমার হুবুহু মনে নেই তবে সেখানে অনেকটা এমন লেখা ছিল যে ,মাঙ্গা শিল্পীর ভবিষ্যৎ বাণীর কারণে পর্যটকদের জাপান ছাড়ার ধুম লেগেছে। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা হয় নাই সেদিন কারণ এটাকে আমি কোনো একটা ফেইক নিউজ বলেই ভেবেছিলাম।

এর কয়েকদিন পরে আরো একটা নিউজ চোখে পড়লো আর সেখানেও একই ধরণের ক্যাপশন দেয়া রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে ,মাঙ্গা শিল্পী 'রিও তাতসুকির ' ভবিষ্যৎ বাণীর কারণে আতংক বাড়ছে আর এর প্রভাব পড়েছে জাপানের অর্থনীতির উপর।

সত্যি বলতে ,মাঙ্গা কিংবা মাঙ্গা শিল্পী কি কিনিস এ সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র ধারণাও ছিল না। আমি ভেবেছিলাম মাঙ্গা হয়তো কোনো জাপানি ফোক আর্ট কিংবা কোনো ফোক নাচ কিংবা গান।

earthquake-3167693_1280.jpg
pixabay

পরে কথায় কথায় আমার ছোট ছেলের সামনে এই প্রসঙ্গে কথা বলার পরে ওর কাছ থেকে জানতে পারলাম যে জাপানে মাঙ্গা সিরিজ খুবই জনপ্রিয়। । এরপরই আমি আরো ভালো ভাবে জানতে চেষ্টা করলাম যে আসলে কি হচ্ছে।

বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালগুলি থেকে জানতে পারলাম যে ,মাঙ্গা শিল্পী তার “দ্য ফিউচার আই স” বইয়ে লিখেছেন যে তার জীবন খুব সাধারণ ভাবেই চলতে ছিলো। হঠাৎ করেই তিনি রাতে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। আর তখন থেকেই তার জীবন পাল্টে যেতে শুরু করে।

কারণ তার দেখা সপ্নগুলো বাস্তবে পরিণত হতে থাকে। তখন তিনি তার স্বপ্নগুলোকে একটা ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করতে শুরু করেন। আর সেই ডায়েরিই 'দ্য ফিউচার আই স।

তার লেখা এই সিরিজের অনেক ভবিষ্যৎবাণীই যেমন ,ফ্রেডি মারকিউরির মৃত্যু, ১৯৯৫ সালের কোবে ভূমিকম্পএর মতো অনেককিছুই যেগুলো তিনি আগেই লিখেছিলেন সেগুলো ঠিক হয়েছে। যার কারণে অনেকেই ' রিও তাতসুকিকে 'জাপানের 'বাবা ভাঙা' বলে থাকেন।

তার অনেকগুলো ভবিষ্যত বাণীর মাঝে সবচাইতে আলোচিত হলো ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত মাঙ্গাটির প্রচ্ছদে ২০১১ সালের মার্চে একটি ভয়াবহ দুর্যোগ সংঘটনের ইঙ্গিত ছিল । কাকতালীয়ভাবে, এই সময়েই জাপানে স্মরণকালের বিধ্বংসী ভূমিকম্প ও সুনামি আঘাত হানে ২০২১ সালে মাঙ্গাটির নতুন সংস্করণে নির্মাতা তাতসুকি আরও পূর্বাভাস দেন যে,পরবর্তী ভয়াবহ দুর্যোগটি ২০২৫ সালের ৫ জুলাই ঘটবে।

earthquake-1665878_1280.jpg
pixabay

তিনি তাঁর বইয়ের ২০২১ সালের ‘কমপ্লিট এডিশন’-এ লিখেছিলেন। তাতে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের ৫ জুলাই জাপানের ঠিক নিচে, ফিলিপাইন ও জাপানের মাঝে সমুদ্রতলে একটি ফাটল ধরবে, এবং সেখান থেকেই সৃষ্টি হবে এক ভয়ংকর ধ্বংসযজ্ঞ! তাঁর দাবি অনুযায়ী, এই ফাটল থেকে ছুটে আসবে এমন এক সুনামি, যার ঢেউ হবে টোহোকু বিপর্যয়ের থেকেও তিনগুণ বড়। শুধু তাই নয়, তিনি লিখেছেন “সমুদ্রের জল ফুটে উঠবে...”—যা অনেকের মতে, জলের তলার এক বিশালকার আগ্নেয়গিরির ভয়ঙ্কর অগ্ন্যুৎপাতের ইঙ্গিত। এই বিপর্যয়ের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে তিনি এঁকেছেন এক হীরের মতো আকৃতির অঞ্চল—যেটি জাপান, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান ও নর্দান মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জকে জুড়ে রেখেছে। অর্থাৎ প্রায় গোটা পূর্ব এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলই পড়ছে সেই ধ্বংসের আওতায়!

tsunami-8737604_1280.jpg
pixabay

২০১১ সালের পূর্বাভাস মিলে গিয়েছিল বলে তার সাম্প্রতিক পূর্বাভাস সামাজিক মাধ্যমে নতুন করে আলোচনায় এসেছে এবং অনেকেই গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছেন। সাধারণ মানুষ ও পর্যটকদের মধ্যে সবচাইতে বেশি উদ্বেগ বাড়ছে ,বিশেষ করে পূর্ব এশিয়ার পর্যটকদের মধ্যে ভীতি এতোই প্রবল হয়েছে যে অনেকেই ইতোমধ্যে তাদের জাপান সফরও বাতিল করেছেন আবার কেউ স্থগিত রেখেছেন

হংকং ভিত্তিক এক পর্যটন সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সি এন ইউয়েন জানাচ্ছেন, ইস্টার ছুটিতেই জাপানগামী ট্যুর বুকিং প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহগুলোতে সেই সংখ্যা আরও কমবে।

শুধু তাই না ,চীনের দূতাবাস সতর্কবার্তা জারি করেছে এবং যেখানে বলা হয়েছে যে ,জাপানে অবস্থানরত বা ভ্রমণে ইচ্ছুক চীনা নাগরিকদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, কারণ সেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে এসব দাবির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বরং এসব ভবিষ্যদ্বাণী নিছক কাকতালীয় , এমনকি ' রিও তাতসুকি ' নিজেও এসব বিশ্বাস না করতে বলেছেন। কিন্তু এই কাকতালীয় ব্যাপারগুলোই মাঝে মাঝে হাড় হিম করা সত্যি হয়ে উঠে। আর তাই এবার জুলাই ৫-কে ঘিরে ঘনিয়ে উঠেছে আতঙ্ক। এখন দেখার বিষয় আগামী জুলাইয়ে সত্যিই কোনো মহাদুর্যোগ সংগঠিত হয় নাকি মাঙ্গার এই 'স্বপ্ন' শুধুই আরেকটি কাকতালীয় গল্প হয়েই থেকে যায়।



Thank You So Much For Reading My Blog

HfhigaP72YBd6w1Kgyw9eMoDygDx869D1PKa6jG8D9C9MQ5rA8UuUvaGRermEeDs8YYv1jb4TX4QUAAbRoaAJFmmUaGZUojU1gWvH66zbc...wdYfZe5zwHZgv7fSFyfX5YWvwFGCJXq8EuycKeaUaXARJjpb61mUGxLAjp1XsJ6PQbzF28Bu6LQTgryC3MSekzsBvnPpE3TAcMAMTMQbf9uvFuTHezySGMDKr6.png

Sort:  
Loading...