চা শ্রমিকদের দূর্বিষহ জীবন ।

in Incredible Indialast month (edited)

IMG_1182.jpeg

বেশ কয়েকবছর আগে একটা নিউজ চোখে পরেছিলো ,সেখানে লেখা ছিল যে বাংলাদেশের সবচাইতে দামি চায়ের নাম গোল্ডেন বেঙ্গল টি বা সোনার বাংলা চা এবং এর পাতায় ২৪ ক্যারেট সোনার প্রলেপ দেওয়া থাকে।

তখন এই চা সম্পর্কে আরো পড়েছিলাম যে , প্রতি কেজি সোনার বাংলা চায়ের দাম প্রায় ১৬ কোটি টাকা, যা বিশ্বের সবচেয়ে দামি চা হিসেবে বিবেচিত হয় ।

IMG_1183.jpeg

এই লেখা পড়ে সবচাইতে খারাপ লেগেছিলো এটা ভেবে যে ,এই চায়ের পাতার সাথে যাদের জীবন জড়িত সেই চা শ্রমিকরা কি দুর্বিষহ জীবন কাটায়। আমার আগে প্রায় প্রতিবছরই শ্রীমঙ্গল যাওয়া হতো যার কারণে বলা চলে চা শ্রমিকদের জীবন সম্পর্কে কিছুটা হলেও দেখেছি।

শ্রীমঙ্গলের মাধবপুর লেকে বেড়াতে যাওয়ার পরে একজন চা শ্রমিক আমাকে বলেছিলো যে ,তারা চা পাতার সাথে চানাচুর দিয়ে ভাত খায় এবং এটা তাদের নিয়মিত খাবারের মাঝেই পরে । এটা শুনে আমি চা পাতা মুখে দিয়ে এর স্বাদ বুঝার জন্য চিবিয়ে দেখেছিলাম প্রচন্ড রকমের তেতো হয়ে থাকে এর পাতা।

IMG_1181.jpeg

চা বাগানে যখন বেড়াতে যাই তখন প্রকৃতির মনোরম পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই কিন্তু যখন চা শ্রমিকদের দিকে চোখ পরে তখন মনের মাঝে এক ধরণের অপরাধবোধ কাজ করে সবসময়ই।
চা বাগানের ইতিহাস নিয়ে ঘাটাঘাটি করলে জানা যায় যে ,ভারতের উত্তর প্রদেশ, মাদ্রাজ, ওড়িশা, বিহার প্রভৃতি অঞ্চল থেকে প্রায় ১১৬টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে চা বাগানের শ্রমিক হিসেবে এই অঞ্চলে নিয়ে এসেছিল ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা।

সময়ের সাথে সাথে তারা তারা এ দেশের নাগরিক হিসেবে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। তাদের মাঝ থেকে কিছু মানুষ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের হয়ে মুক্তিযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু দেশ স্বাধীন হলেও তাদের জীবনযাত্রা রয়ে গেছে সেই একই রকম। তারা দেশের নাগরিক হয়েও তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা তারা ভোগ করতে পারে না।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায় যে , দৈনিক ২০ কেজি চা পাতা সংগ্রহ করলে একজন চা-শ্রমিক ১৭০ টাকা মজুরি পায় আর এর চেয়ে বেশি চা পাতা সংগ্রহ করলে বাড়তি প্রতি কেজির জন্য দেওয়া হয় দুই টাকা। আবার ২০ কেজির কম চা পাতা সংগ্রহ করলে, কম হওয়া প্রতি কেজি চা পাতার জন্য ছয় টাকা কেটে রাখা হয়।

777fd676-abfe-46d8-b2f6-90431803e2ed.jpeg

আমি যতবার শ্রীমঙ্গল বেড়াতে গিয়েছি ততবারই এসব এলাকাতে মন্দিরের আধিক্য চোখে পড়েছে আমার। সামান্য দূরত্ব পর পরই মন্দির অথচ কোন স্কুল চোখে পরে নাই তাদের সন্তানদের জন্য। আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় একজন আফ্রিয়ান মানুষের উদ্ধৃতি প্রায়ই চোখে পড়তো যেখানে লেখা থাকতো' তারা আমাদের হাতে ধরিয়ে দিলো বাইবেল আর তার বিনিময়ে তারা নিলো আমাদের জমি'।

শ্রীমঙ্গলের এতো মন্দির দেখলে আমার এই লেখাটির কথাই মনে পরে । তাদেরকে ধর্মে ব্যাস্ত রাখা হয়েছে যাতে অন্য কোনো দিকে মনোযোগ দেবার সময় তারা কম পায়।

চা শ্রমিকদের জন্য টয়লেটের তেমন কোনো ব্যবস্থা রাখা হয় নাই। অনেক সময় চা বাগানের পাশ দিয়ে গেলে দুর্গণ্ধ নাকে আসে। চা বাগান ছাড়াও তারা পাহাড়ি ছড়ায় প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদন করে থাকে।তাদের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যাবস্থাও অপ্রতুল।

6299b1c9-4d5d-4e5d-8150-ee6e4a6056de.jpeg

তবে বছরদুয়েক আগে আমাদের দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে এবং চা-শ্রমিকদের ৩০০ টাকা মজুরির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাগান মালিকরা দাবি করেন, দৈনিক মজুরির পাশাপাশি এসব শ্রমিকের রেশন, বোনাসসহ নানা সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে।

তাদের ভাষ্যমতে , ভাতা ও সুযোগ-সুবিধাসহ একজন শ্রমিক দৈনিক ৪৫০-৫০০ টাকা উপার্জন করেন।অবশ্য বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন। তারা সবদিক থেকেই বঞ্চিত , তাদের ভূমির কোন অধিকার নাই। তাদের বেতন বর্তমান সময়ের সাথে একদমই বেমানান। আশা করি বাগান মালিকরা এবং সরকার তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সচেষ্ট হবেন।

e0d79a6e-eb2d-48f4-8996-e21c9a7a786c.jpeg

কয়েকটা ছবি হুয়াটসআ্যাপ থেকে নেয়া ।

Post Details

CameraiPhone 14
Photographer@sayeedasultana
LocationDhaka,Bangladesh


Thank You So Much For Reading My Blog

HfhigaP72YBd6w1Kgyw9eMoDygDx869D1PKa6jG8D9C9MQ5rA8UuUvaGRermEeDs8YYv1jb4TX4QUAAbRoaAJFmmUaGZUojU1gWvH66zbc...wdYfZe5zwHZgv7fSFyfX5YWvwFGCJXq8EuycKeaUaXARJjpb61mUGxLAjp1XsJ6PQbzF28Bu6LQTgryC3MSekzsBvnPpE3TAcMAMTMQbf9uvFuTHezySGMDKr6.png

Sort:  
Loading...