বেঁচে থাক ভালোবাসা তার পায়ের নরম থাবায়।
যখনই বাইরে থেকে বাসায় ফিরি তখনই আমার দিকে ওর কিছুটা নীলচে সবুজ রঙের চোখ বড়ো বড়ো করে আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ,যেন বলতে চায় এতক্ষন কোথায় ছিলে আমাকে একা ফেলে। আজকে ১৯ দিন হলো সে আমার কাছে এসেছে। এখনো ঐভাবে ওর কোন নামও রাখা হয় নাই। অবশ্য আমি ওকে এঞ্জেল বলে ডাকি। ওর ওই নিষ্পাপ চেহারা ও দুটো চোখ দেখলে ওকে আমার কাছে দেবদূতের মতোই লাগে।
আমার বাসার বাকি সদস্যরা মনে হয় কেউ তেমন এই নাম পছন্দ করে নাই। কিন্তু ওরা কোনো নামও রাখতেছে না । আগের দুটো বিড়ালছানা পরপর কয়েকদিনের ব্যাবধানে মারা যাওয়ার কারণে ওদের মাঝে একটা ভয় কাজ করতেছে সেটাও বুঝি। তবে শুধু ওদের বললে ভুল হবে আমার মাঝেও একটা ভয় কাজ করতেছে।
ও যখন আমার কাছে এসেছিলো তখন ও ছিল দুর্ভিক্ষপীড়িত এলাকার শিশুদের মতো দেখতে। তেমনি সরু সরু পা ও বড়ো একটা পেট বিশিষ্ট এবং সেই সাথে পেটের সমস্যায়ও ভুগতেছিলো। বাসায় আনার পরে ভেট দেখানোর পরে সে জানিয়েছিল না খেয়ে থাকার কারণে ওর পেটে গ্যাস জমে যার কারণে ওর এই ফোলা পেট। ওকে হয়তো কেউ ফেলে দিয়েছিলো তার প্রমান ওর শরীরের এক জায়গাতে সামান্য মেহেদী লাগানো ছিল। অনেক সময়ই আমরা মানুষেরা খুবই নিষ্ঠুর প্রকৃতির হয়ে থাকি ।
ওর যা বয়স ছিলো তাতে ওর তখনও ওর মায়ের দুধ খাওয়া প্রয়োজন ছিলো কিন্তু মানুষ ওকে ওর মায়ের দুধ থেকে ওকে বঞ্চিত করেছে।আমার কাছে আসার পরে আমিও ওকে ক্যাট রিপ্লেসার দিতে পারতাম কিন্তু ওর পেটের সমস্যার কারণে সেটা আমি দিতে পারি নাই। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চিকেন সেদ্ধ দিচ্ছি সামান্য নরম ভাত দিয়ে। প্রথম দিকে সেটাও খেতে পারতো না তাই ব্লেন্ড করে দিতাম। দুদিন ধরে পেট অনেকটাই ভালো।
ওদের চাহিদা খুবই সীমিত। সামান্য খাবার এবং মাথার উপরে একটা ছাদ হলেই ওরা খুশি। আসলে আমাদের সামান্য চেষ্টাই ওদের জীবনকে একদমই পাল্টে ফেলে ওদের জীবনে রাজকীয়তা নিয়ে আসতে পারে। আর এর বিনিময়ে আপনি পাবেন মনের শান্তি ও ভালোবাসা।
সবাই যখন নিজের জগতে ব্যাস্ত থাকে ও তখন বড়ো বড়ো চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাক। সেই চোখে কোনো দাবিও যেমন নেই ,আবার কোনো অভিযোগও নেই। শুধু ওর দুই চোখ যেন বলে তুমি তো আছো ,তোমাকে ভরসা করি আমি।
এমনকি প্রচন্ড রকমের ব্যাথা পেলেও তার তেমন কোন প্রকাশভঙ্গি নেই। যখন ব্যাথা পায় ঐমুহুর্তে চিৎকার করে কান্না করে। তারপর সেই ব্যাথা নিয়েই আস্তে করে ও যে সোফাতে বেশিরভাগ সময় থাকে সেখানে গিয়ে ওর ছোট্ট শরীরটাকে গোল করে ঘুমিয়ে পরে। আসলে সৃষ্টিকর্তা হয়তো ওদেরকে এভাবেই সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করেন।
ও আমার কাছে শুধু একটা প্রাণীই না ,ও আমার নিঃসঙ্গ সময়ের সঙ্গী। ওর নরম পায়ের ছোঁয়া আমার মনে প্রশান্তি এনে দেয়। এটা যে শুধু আমারই কথা এমন না , চিকিৎসকেরাও একই কথা বলে থাকেন।
মায়ের পাশে বসলে কিংবা ছুঁলে যেমন শরীর থেকে অক্সিটোন নিস্সরণ হয় তেমনি পোষ্যের গায়ে বা মাথায় হাত বুলালে কিংবা ছোঁয়াতে মানুষের শরীর থেকে অক্সিটোন নিস্সরণ হয়ে থাকে। এতে করে মানুষের ডিপ্রেশন কমে ,স্ট্রেস কমে ,কোলেস্টোরল এর মাত্রা কমে ইত্যাদি এমন আরো অনেক কিছুই পরিববর্তন ঘটে মানুষকে শারীরিক ভাবে সুস্থ রাখে। তাই হাজার হাজার টাকার ওষুধ না কিনে বাসায় একটা পোষ্য রাখা অনেক লাভজনক।
আমি যেমন ওকে ভালোবাসি তেমনি ও আমাকে ভালোবাসে। ওর ভালোবাসা হয়তো ও শব্দ দিয়ে প্রকাশ করতে পারে না কিন্তু ওর আস্তে করে কোলে এসে বসা কিংবা ঘুমের মাঝে চোখ খুলেই মুখের উপর ওর বড়ো বড়ো চোখে তাকিয়ে থাকা দেখে বুঝতে পারি ও আমাকে ওর মতো করেই নিঃশব্দে ভালোবাসে।
◦•●◉✿ Thanks Everyone ✿◉●•◦
◦•●◉✿ Thanks Everyone ✿◉●•◦