Another day inside the hospital- হাসপাতালে অতিবাহিত আরেকটি দিন!

in Incredible Indiayesterday (edited)

1000067320.jpg

আজকের লেখার শুরুতে, যোগীন্দ্রনাথ সরকারের কবিতার কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত্ত করে নিজের লেখা শুরু করছি, যেটি তার রচিত ' কাকাতুয়া ' কবিতা থেকে নেওয়া!

‘বলিছে সোনার ঘড়ি, “টিক্ টিক্ টিক্”,
যা কিছু করিতে আছে, করে ফেল ঠিক।
সময় চলিয়া যায়-
নদীর স্রোতের প্রায়,
যে জন না বুঝে, তারে ধিক্ শত ধিক।
বলিছে সোনার ঘড়ি, “টিক্ টিক্ টিক্”।

উপরিউক্ত উদ্ধৃত শব্দ সমষ্টির ভিন্নার্থ আছে, তবে আজকে আমি সময়ের মূল্য বোঝাতে কবিতার লাইনগুলো তুলে ধরিনি, বরঞ্চ আমার উদ্দেশ্য খানিক ভিন্ন।

সময় যে একটি অমূল্য সম্পদ, সেটা সম্পর্কে কম বেশি আমরা সকলেই অবগত! তবে বিপদ উদ্ধার হয়ে গেলে, নিজেদের অবস্থান অনুকূল হয়ে গেলে, পিছনের মানুষ তথা পরিস্থিতি কোনোটাই অধিক সংখ্যক মানুষ মনে রাখেন না!

অথচ, সময় কিন্তু মনে রাখে! তাই অনেক সময় একই মুহূর্তের সাক্ষী করতে অবস্থানের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে মনে করাবার প্রয়াস করে, কোথায় আমাদের নিজস্ব অবস্থানের পরিবর্তন প্রয়োজন!

আজকে এই উপরিউক্ত কথাগুলো এই কারণে উল্লেখ করছি, যেকোনো কঠিন মুহূর্তে কে, বা কারা পাশে ছিল সেটি মনে রাখা অত্যাবশ্যক! কারণ, তারা নিজেদের জীবনের সবচাইতে মূল্যবান জিনিষ সময় অতিবাহিত করেছে, তাও বিনাস্বার্থে!

দ্বিতীয়, যে বিষয়টি মনে রাখা উচিত, সেটি হলো স্থান, কাল এবং পাত্র!
দুর্ঘটনাগ্রস্থ, কিংবা প্রতিকূল পরিস্থিতি আমাদের জীবনের সবচাইতে বড় শিক্ষক!

কাজেই, স্বাস্থ্যকেন্দ্রতে বসে নিজের যন্ত্রণা যখন নিজেকেই বইতে হয়, সেটা শারীরিক, মানসিক যেকোনো ক্ষেত্রেই;
সেই মুহূর্তে কোনটা করণীয় আর কোনটা বর্জনীয়, এটি বোধকরি নিজেকেই উপলব্ধি করতে হয়।

আমি পূর্বের একটি লেখায় উল্লেখ করেছিলাম এক্ টানা দশদিন আমি ঠিক করে খাবার খেতে পারিনি, পান খেতাম সেই সময়। এরপর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমি আর কোনো রকম নেশা করবো না!

আর, সেই দিনের পর থেকে আমি পান বর্জন করেছি, কারণ সময়ের হাত ধরে পাওয়া যন্ত্রণা এবং অভিজ্ঞতা থেকে যে শিক্ষা আমি পেয়েছি, তার উপরেই নির্ভর করে আমার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া!

এতগুলো কথা লিখছি, দয়া করে এগুলোকে জ্ঞান হিসেবে নেবেন না, কারণ, আমার সকলেই ব্যাক্তি হিসেবে পৃথক;
তথা আমাদের অর্জিত অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষা। কাজেই, উপরিউক্ত অভিমত একান্তই নিজস্ব অভিজ্ঞতার নিরিখে তুলে ধরছি।

1000067319.jpg

দিনটি ছিল ৮ই অক্টোবর, যেদিন আমার ভাইপোকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেবার কথা!
সেইদিন বৃষ্টি মাথায় করে হাসপাতালের পথে যাত্রা করেছিলাম।

যদিও বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিলাম সকাল এগারোটা পাঁচের একটি ট্রেন ধরবো সেই সময় মাথায় নিয়ে।

যখন বাড়ি থেকে স্টেশনের দিকে যাত্রা শুরু করেছিলাম, আকাশ ছিল পরিষ্কার, আর রৌদ্রোজ্জ্বল দিন।

বাজারের ভিতর দিয়ে স্টেশনে যাবার উদ্দেশ্য যানজট এড়ানো, পাশাপশি টিকিট কাউন্টার কাছে পড়ে।

যে মুহূর্তে বাজারে পা রেখেছি দেখলাম, রাধা কৃষ্ণের যে অনুষ্ঠান বাজার কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর করে থাকে, সেটি সম্পাদিত হয়ে গেছে, আর সমস্ত জিনিষ সকলে গুটিয়ে নিতে ব্যস্ত!

রাধা কৃষ্ণের ছবি যেটি লেখার শুরুতে তুলে ধরেছি, সেটি ওইদিন তুলেছিলাম।
এরপর, টিকিট কেটে মহিলা কামরার সামনে এগিয়ে গিয়ে, সেখানে থাকা বসবার জায়গায় বসে ট্রেনের প্রতীক্ষা করছিলাম।

1000067321.jpg

সেই মুহূর্তে ফাঁকাই ছিল বসবার জায়গা, নিজের ভাবনায় বিলীন হয়ে ছিলাম, হঠাৎ দেখছি কে এসে প্রায় আমার কোলের উপরে বসবার প্রয়াস করছে!

ফিরে তাকিয়ে দেখলাম, ফ্ল্যাটের পরিচিত এক মহিলা! খানিক কথাবার্তার পর ট্রেন এসে পড়লো আর ইচ্ছে করেই অন্য কম্পার্টমেন্টে উঠেছিলাম!

এখন সত্যি বলতে পরিচিত মুখের আড়ালের কাদর্য্য রুপগুলো দেখার পর চুপ থাকতেই ভালো লাগে, বেশি কথা আর কারোর সাথেই বলতে ইচ্ছে করে না!

শিয়ালদহ পৌঁছে, টিকিট কেটে মেট্রোতে উঠে পড়লাম, আর বাইরে বেরিয়ে দেখছি বৃষ্টির পড়ছে মুষলধারায়!

1000067322.jpg

এখানেই সমস্যায় পড়ে গেলাম! এরপর, খানিক অপেক্ষার পর, যখন একটু বৃষ্টির ধারা কমে এসেছিল, দিলাম ছুট!

কারণ, মেট্রো থেকে হাসপাতাল এর দূরত্ব বেশি নয়, কিন্তু তবুও ভিজতে হলো গাড়ির ভিড়ের কারনে, মানুষ যাবার অবকাশ নেই, সর্বত্র গাড়িতে গাড়িতে ছয়লাপ!

হাসপাতালের গেট থেকে শুরু করে রিসিপশনের গেটের মুখ পর্যন্ত একই অবস্থা।
অগত্যা ভিজলাম, ভিতরে সেন্ট্রাল এসি, দেখলাম রিসিপশনের চেয়ারে কাজিন ব্রাদার বসে!

1000067324.jpg

1000067325.jpg

1000067323.jpg

আমায় জিজ্ঞাসা করলো, বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে কিনা!
এই ধরনের প্রশ্নে হাসি পায়, তবুও মাথা নেড়ে উত্তর দিলাম।

এরপর, কিছু কথবার্তা বলার পরে দেখতে গেলাম, ভাইপোকে, সেখানে সে বিরক্ত কেনো এতো সময় লাগবে ডিসচার্জ প্রসিডিওর এর ক্ষেত্রে!

আমার মাথা গেলো গরম হয়ে, সন্তানকে ভালোবাসা আর আস্কারা দেবার মধ্যে কতখানি পার্থক্য সেদিন আচ্ছা করে বলেছিলাম কাজিন ব্রাদার কে!

যদিও পরে অনধিকার চর্চা মনে হয়েছে, এরপর দেখলাম আমার বড় মামা বৃষ্টি মাথায় করে এসে পৌঁছেছে।

আমি জানিয়ে দিলাম আমাকে সন্ধ্যে ছয়টার মধ্যে বাড়ি পৌঁছতে হবে।
আমাকে কাজিন ব্রাদার জানালো দুপুর আড়াইটায় একটা ট্রেন আছে, আমিও দেরি না করে বেরিয়ে পড়েছিলাম।

মামা অবশ্য শেষ পর্যন্ত ছিল, এখানে আমার একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়, আর সেটা হলো, একবার কেউ যদি স্বীকার করে সে একলাই সবটা পারবে সেখানে আমি ভিড় বৃদ্ধি পছন্দ করি না, আর নিজের উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি না!

1000067327.jpg

1000067328.jpg

1000067329.jpg

কাজেই, আমি বৃষ্টি কমে আসলে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলাম।
শৈশবে মা বাবা সেই বিষয়েই বাড়িতে মাস্টার রাখতেন, যে বিষয়ে তারা বুঝতে পারতেন তাদের সন্তান কাঁচা!

যদি সন্তান সব বিষয়ে পারদর্শী হয়, তাহলে মাস্টার দেওয়া অর্থহীন।
রাত আটটা নাগাদ ফোন করেছিল, হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেছে।
বড় মামা সঙ্গে ছিল, মাঝপথে নেমে গিয়েছিল নিজের গন্তব্যের কাছাকাছি।

আজকের এই লেখাটি সেই সকল মানুষের উদ্দেশ্যে যারা মনে করেন বিপদ উদ্ধার হয়ে গেলে, আর সেই মানুষগুলোকে প্রয়োজন পরে না ভবিষ্যতে!

অনেকেই আবার মনে করেন অর্থ দিয়ে সময়ের মূল্য চুকিয়ে ফেলেছেন, উভয়ক্ষেত্রেই সৃষ্টিকর্তা তাদের এই মানসিকতায় হাসেন! কেনো?
কারণ, জীবন চক্র গোল, তাই!

1000010907.gif

1000010906.gif

Sort:  
Loading...


curated by: @fantvwiki

 17 hours ago 

Thank you for this encouraging support @fantvwiki