রেখা! (Line!)

in Incredible Indialast month
1000057491.jpg

কথা, সম্পর্ক, পরিবার, সমাজ তথা দেশ সর্বত্রই সবচাইতে বেশি যেটি মনে রাখা উচিত সেটা হলো রেখা গুরুত্ব কতখানি।

এখন এই রেখাকে বিভিন্ন ভাবে ব্যক্ত করা যায়, আজকে আমি নিজস্ব অভিমত প্রকাশ করতে এসেছি।

শুরুতেই জানিয়ে রাখা ভালো, সহমতের প্রত্যাশা নিয়ে এখানে নিজের অভিমত পোষণ করতে আসিনি;
কারণ অনেকের সাথেই আমার অভিমতের বিস্তর পার্থক্য।

প্রথম রেখা যেটি আমাদের সর্বাগ্রে জানা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি সেটি হলো, ভালোবাসা আর মোহের মধ্যে পার্থক্যের রেখা, যেখানে কথার গুরুত্ব সর্বোপরি।

ভালবাসা
এই অনুভূতি, যেখানে আন্তরিকতা ব্যক্ত না থাকলেও কর্মের দ্বারা পাশে থেকে প্রতিদিন বুঝিয়ে দেওয়া নিজের উপস্থিতি।
যেখানে থাকবে অভিযোগ, অভিমান, মতানৈক্যতা, শাসন কিন্তু অপমান কিংবা অসম্মান নয়!

আর

মোহ
হলো অন্ধ ভালোবাসার অন্য রূপ! যেখানে পছন্দের মানুষের ভুল চোখ এড়িয়ে যায়, বেঠিক কিছুকে ধামা চাপা দেবার প্রয়াস কাজ করে, সত্যকে দেখতে না পাওয়া, এমনকি অন্যায়ের সঙ্গ দেওয়াও চোখে পড়ে!

1000057489.jpg

1000057490.jpg

(মোহ যখন চরমে তখন ভালোবাসা সন্ত্রাসকে বেঁধে রাখতে পারে না তার উদাহরণ)

দুটি বিষয়ের বৈষম্যের কারণ রেখা!
কোথায় কোনটা শোভনীয়, সত্য, ন্যায় তথা সততাকে অগ্রাহ্য করে পছন্দের বিষয় হোক অথবা ব্যাক্তি;
তাদের ভুলকে দেখেও না দেখতে পাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি,
রেখার পরিভাষাকে প্রায় বিলীন করতে বসেছে তাদের ক্ষেত্রে যারা মোহতে আবিষ্ট, কিন্তু নিজেরাই টের পান না!

  • আমার আজও মনে আছে বড়দের কথার মাঝে ছোটদের থাকতে নেই, এই রেখা শৈশব থেকেই আমার মা এঁকে রেখে গেছেন।

  • বড়দের মুখে মুখে তর্ক করতে নেই, এটাও সেই রেখার নিদর্শন!

  • এরপর, সমাজ সেখানে বড়দের সাথে দেখা হলে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম, গুরুজনদের পরামর্শ অক্ষরে অক্ষরে পালন ইত্যাদি আমাদের সঠিক শিক্ষার রেখায় আবদ্ধ করতে সহায়ক।

আগে স্কুলে শিক্ষক শিক্ষিকাদের শাসন করা, মা বাবার শাসন ছিল সাধারণ বিষয়, আর এখন এই শাসনে সীমারেখা টানা হয়েছে।

শিক্ষক শিক্ষিকাদের এখন রেখা টেনে দেওয়া হয়েছে শাসনের ক্ষেত্রে, আর এক রত্তি বয়স থেকে প্রাইভেসি শব্দ এতটাই জেঁকে বসেছে আধুনিক যুগে যে,
মা বাবার সন্তানকে কিছু বলার উপায় নেই!

1000057488.jpg

এটার কারণ ভালোবাসা নয়, এটার মুল শত্রু মোহ!
যেকোনো বিষয়ে যদি একটা সময়ের পর রেখা টানা না যায়,
তাহলে তার পরিণতি কখনোই সুখকর হয়না।

শালীনতার রেখা, বৈষম্যের রেখা, সন্ত্রাসের রেখা এগুলো বোধহয় শৈশব থেকে শেখানোর প্রয়োজন।

নইলে, সভ্য সমাজ তথা দেশে বাস করছি কথাটি সীমিত ক্ষেত্রে আবদ্ধ হয়ে থাকবে।
চক চকে মিথ্যের চাইতে সাদা কালো সত্যি শেখা তথা শেখানোর নাম ভালোবাসা, যেখানে সঠিক রেখা টানা থাকে।

আর যারা সেটার ঊর্ধ্বে উঠে যান, তারা চোখ থাকতে অন্ধের দলে সামিল।
কারণ, তারা মোহ তে আবিষ্ট নিজের যুক্তির, নিজের নীতির, নিজের স্বল্প বুদ্ধিমত্তা তথা, নিজের সুবিধা অসুবিধা ছাড়া এদের মধ্যে বিশেষ কিছুই নজরে পড়ে না।

সত্যি এমন একটি বিষয় যেটিকে মিথ্যে দিয়ে বেশিদিন চেপে রাখা যায় না, আর তাই যারা রেখা উলঙ্ঘন করে নিজেদের নিজেদের রঙিন অভিমত পোষণ করেন, পরে তাদের এসেই নিজেদের ভুল সংশোধন করে দিয়ে যেতে হয়, সেটা সাধারণ মানুষ হোক অথবা বিশ্বের নামচিন ব্যাক্তিত্ব যেই হোন না কেন।

তাই, কথা থেকে শুরু করে জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে রেখার গুরুত্ব বুঝতে হবে।
কোথায় কতখানি বলা যায়, কিভাবে বলা উচিত, কথার মধ্যে সত্যতা কতখানি, শিক্ষা কতখানি রয়েছে, যেটা দিচ্ছি অথবা পেয়েছি সেটার মূল্যায়ন ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত।

1000010907.gif

1000010906.gif

Sort:  
 last month 

শুরুতেই বলবো চমৎকার একটা বিষয় নিয়ে লিখেছেন আপনি ভালোবাসা ,মোহ ও রেখা। সত্যি বলতে ভালোবাসা ও মোহের পার্থক্য বেশিরভাগ মানুষই বুঝতে পারে না কিংবা বুঝতে পারলেও খেয়াল করে না অথবা প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। এটা সন্তানের প্রতি ভালোবাসা থেকে শুরু করে নিজেদের কাছের মানুষ এমনকি নিজেদের ধর্মের মানুষের প্রতিও হতে পারে।

ইদানিং শেষেরটার প্রতি মানুষের মোহের পরিমান মারাত্মক আকারে বৃদ্ধি পেতে দেখতেছি। মানুষের ভালো -মন্দের বোধ দিন দিন লোপ পাচ্ছে এই মোহের কারণে।
আর সীমারেখা এটা ছোট থেকেই শিখানো প্রয়োজন। এই জিনিসটার অভাব একটা জাতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে পারে। ছোট থেকে আমরাও শিখেছি শিক্ষকদের মর্যাদা দিতে। তাদের বেত্রাঘাতও সহ্য করেছি কিন্তু এটাই স্বাভাবিক বলে জানতাম আমরা।

কিন্তু আধুনিকতা আমাদেরকে এখন থেকে অনেকটাই দূরে সরিয়ে এনেছে। আর তার ফলাফলও দেখতেছি চারপাশে।

 last month 

অসাধারণ একটি বিষয় অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন দিদি। রেখার মতো একটি সূক্ষ্ম অথচ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে এত সুন্দর ভাবে উপস্থাপনা সত্যিই প্রশংসনীয়। ভালোবাসা আর মনের পার্থক্য সম্পর্কে সীমারেখা সামাজিক শিক্ষার গণ্ডি সবকিছুই যেন ভাবনার নতুন দ্বার খুলে দিল। আপনার লেখায় স্পষ্টতা সত্য এবং জীবন বোথ অনন্যভাবে প্রকাশ পেয়েছে। এ ধরনের মূল্যবান লেখার সমাজে অনেক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আমি বিশ্বাস করি। হৃদয় থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই এমন একটি চিন্তাশীল পোস্টের জন্য দিদি।

Loading...