Metro in Dino-A film about life and love! (দৈনন্দিন জীবনের প্রতিচ্ছবি!)

যদিও ওটিটি তে ছায়াছবিটি আগেই দেখেছিলাম। আজকে টেলিভিশনের পর্দায় পুনরায় দেখার আগ্রহ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে পারলাম না!
সাধারণ দৃষ্টিতে যদি ছায়াছবিটি দেখেন, হয়তো একঘেয়ে লাগলেও লাগতে পারে, তবে একটু মনোযোগ সহকারে দেখলে বুঝবেন, প্রতিটি বয়েসে, প্রতিটি জীবনের একটি আলাদা কাহিনীর পাশাপশি আলাদা চাইদা এবং নিজস্ব সংঘর্ষ আছে।
এখন এদের মধ্যে বেশিরভাগ সেই সংঘর্ষের মধ্যে নিজেদের আত্ম বলিদান দিয়ে বাকি জীবনটা এগিয়ে নিয়ে যায়, আবার কেউ অনেক সাহস যুগিয়ে স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটার মনোবল দেখাতে সক্ষম হয়!
একটা বাস্তব বিষয় আমি লক্ষ্য করে দেখেছি, একটা সময়ের পরে বিবাহিত জীবনে সকলেই দমবন্ধ করা অনুভূতি বোধ চেপে বসে।

এটার কারণ ব্যাক্তি বিশেষ ভিন্ন, আর এই ছায়াছবিতে ১৫ বছর বয়স থেকে ৬০ ঊর্ধ বয়স পর্যন্ত দৈনন্দিন জীবনের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছেন ছায়াছবির নির্দেশক অনুরাগ বসু।
একটা বয়স যখন কৌতূহলের সঙ্গে লড়াইতে ব্যস্ত, তখন আরেকটি জেনারেশন ব্যস্ত নিজের ক্যারিয়ার তথা সম্পর্ক বাঁচাবার লড়াইতে!
অভিনয়ের দিক থেকে আমার সবচাইতে পছন্দের অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠী কে আমি সর্বাগ্রে রাখবো, কমেডির পাশপাশি ইমোশন, এত বাস্তবিক ভাবে ফুটিয়ে তোলার দক্ষতা মুষ্টিমেয় অভিনেতারা পারেন!
আসলে এই ছায়াছবির প্রথম ভাগটি ও বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল, সেই আগ্রহ নিয়েই দ্বিতীয় ভাগ অর্থাৎ ছায়াছবির সিক্যুয়েল দেখতে বসেছিলাম।
সকলের অভিনয় ভালো লেগেছে এটা বললে সঠিক মূল্যায়ন করা হবে না, তবে নিনা গুপ্তা, অনুপম খের, কঙ্কনা সেন শর্মা, এবং শ্বাশত চট্টোপাধ্যায় এদের অভিনয় প্রথম সারিতে, এবং এরপর রাখবো বাকি অভিনেতাদের!
মা নিনা গুপ্তার দুই কন্যা সন্তানের ভূমিকায় অভিনয় করেছে, কঙ্কনা সেন শর্মা এবং সারা আলী খান!

সিদ্ধার্থ রয় কাপুর নিজের মতো করে চরিত্র ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস করেছে।
স্বামী এবং স্ত্রীর সম্পর্কের টানা পড়েন, সিদ্ধান্ত নেবার সাহস, অপছন্দের বিষয়কে না বলার সাহস, সর্বোপরি জীবনের অন্তিম লগ্নে এসে পিছন ফিরে চেয়ে নিজের জন্য, নিজের মতো করে না বাঁচতে পারার আফসোস! সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে গিয়ে, সম্পর্কের দায়িত্বের ভারে নিজের পছন্দ নিজের অজান্তেই ভুলে যাওয়া, নিজের ভিতরের মানুষটাকে জবাব না দিতে পারার আফসোস!
একদিকে সম্পর্কে বেইমানি, আরেকদিকে একজন পিতার মেয়ের মঙ্গলার্থে ভিন্ন প্রয়াস তাকে নিজের জীবনের সঠিক সিদ্ধান্তে তথা লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য!
প্রতিটি পিতা মাতা হয়তো এটাই চান, তাদের জীবিত অবস্থায় নিজেদের সন্তানদের সুখী দেখে যাওয়া!
ভালবাসার মানুষের যেকোনো সিদ্ধান্তের উত্থান পতনের সময় শক্ত হাতে তার পাশে থাকা, এবং লুকিয়ে কিছু একাকী সিদ্ধান্ত ইত্যাদি একাধিক দিক এই ছায়াছবিতে দেখানো হয়েছে।
যদি মনোযোগ দিয়ে ছায়াছবিটি দেখেন একদিকে যেমন হাসির খোরাক যোগাবে, অন্যদিকে অনেক বিষয়ের সাথে নিজেদের দৈনন্দিন জীবনকে মেলাতে পারবেন হয়তো!
খুব সুন্দর একটি কথা ছায়াছবিতে বলেছেন নিনা গুপ্তা, আমারা সারা জীবন কি চাই সেটাই বুঝে উঠতে পারি না, আর এই চক্করে মনের ইশারা বুঝতে অক্ষম হই!
ব্যাক্তিগত ভাবে আমি বেশ উপভোগ করেছি ছায়াছবিটি, খানিক অন্য স্বাদের হয়েও খুব সাধারণ জীবনের গল্প!
সাধারণকে আমরা প্রায়শঃই এড়িয়ে যাই, কিন্তু সেই সাধারণের মাঝেই অসাধারণ অনেক শিক্ষা লুকিয়ে থাকে যেটা দায়িত্বের আড়ালে বেশিরভাগ সময় চাপা পড়ে যায়!
অন্যের জন্য বাঁচতে গিয়ে নিজের জীবনের গুরুত্ব অজান্তে হারিয়ে যায়, যখন সম্বিৎ ফেরে তখন সময় অনেকখানি অতিবাহিত হয়ে যায় জীবন থেকে।
তবে, একটি বার্তা পরিশেষে না দিলেই নয়, সেটি হলো, আমরা যখন জেগে উঠি, তখন থেকেই ভোর শুরু! কাজেই, অন্যের পাশাপশি, নিজের ইচ্ছেকে সম্মান করাটা অন্যান্য অনেক দায়িত্বের মতই গুরুত্বপূর্ণ!
যত তাড়াতাড়ি দুটি মানুষ এটি বুঝতে পারেন, এবং একে অপরকে সম্মান করেন সমান যোগ্যতা দিয়ে, সম্পর্কের বাঁধন তত তাড়াতাড়ি অভিমানের বেড়াজাল মুক্ত হতে সক্ষম হয়।

