The entire historical story!(ঐতিহাসিক কাহিনী সমগ্র)!
![]() |
---|
এই নিয়ে তৃতীয় বার বইটি পড়ছি! শার্লক হোমসের পরে যদি কোনো লেখক আমার পছন্দের তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে থাকেন তাহলে এই বরেণ্য লেখক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়! আর তৃতীয় স্থানে অবশ্যই সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টি ফেলুদা চরিত্র।
এরপর আরো তালিকা রয়েছে, কারণ গোয়েন্দা কাহিনী কোনো কিছুই ছাড়িনি, বিশেষ করে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, আগাথা ক্রিস্টি, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, সমরেশ মজুমদার সহ আরো অনেক অনেক লেখকের সৃষ্টি গোয়েন্দা কাহিনী পড়েছি।
তবে, আজকে কেবলমাত্র শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় যিনি ব্যোমকেশ বক্সী গোয়েন্দা চরিত্রের অমর স্রষ্টা তার একনিষ্ঠ গুণগ্রাহী পাঠিকা হিসেবে নিজের কিছু কথা লেখার মাধ্যমে তুলে ধরতে এসেছি।
বর্তমান আমার বেশ খানিক সময় অতিবাহিত হচ্ছে এই বইটি পুনরায় পড়ার মধ্যে দিয়ে।
আজ থেকে অন্ততঃপক্ষে দশ বছর আগে প্রথম বইটি পড়েছিলাম।
শুরুটা করেছিলাম একটু অনীহা নিয়ে! দেখবেন একজন অভিনেতাকে সবসময় একই রূপে অভিনয় করছেন দেখতে দেখতে ওটাতেই আমরা অভ্যস্থ হয়ে পড়ি!
ঠিক তেমনি একজন গোয়েন্দা কাহিনীর রচয়িতা একেবারে বিপরীত ধর্মী বিষয় ইতিহাস নিয়ে কিছু লিখেছেন, এটা প্রথমে মানতেই একটু অসুবিধা হচ্ছিল।
আমার দিদির ততক্ষনে বইটা পড়া শেষ! আমায় বললো একবার পড়েই দেখ, তারপর বলবি কেমন লেগেছে।
আমার তখনই একটু খটকা লেগেছিলো, আমার চাইতে দ্বিগুণ নাক উঁচু পছন্দের বিষয়ে আমার দিদি।
যাইহোক, এরপর পড়া শুরু করে আর থামতে পারিনি, রাতের পর রাত জেগে বইটা পড়ে শেষ করে ফেলেছি।
থামার প্রয়াস করেও বিফল হয়েছি। আমার এখনও মনে আছে, দিদি ড্রয়িং রুমের সোফায় আধা শোয়া অবস্থায়, বইটি পড়া শেষ শুনে খানিক হাসলো, কারণ অতি অল্প সময়ে পড়া শেষ মানে ভালো লেগেছে সেটা বুঝে গিয়েছিলো।
কি অসাধারণ ঐতিহাসিক জ্ঞান তথা ভাষায় দক্ষতা। আমার জানা নেই কতজন এই বইটি পড়েছেন, সত্যি বলতে এখানে যে কয়টি উপন্যাস আছে, একবার পড়া শুরু করলে থামা মুশকিল!
নাহ্! শুধু ইতিহাস কারণ নয়, সঙ্গে আছে সেই ঐতিহাসিক সময়কালের ভালোবাসার ধরন এর ব্যাখ্যা!
উফ্! প্রেমে না পড়ে থাকা দায়!
এরপর, ২০১৮ সালে দিদি দিল্লি চলে যাবার পরে, সমস্ত বই রয়ে গেলো ওর ফ্ল্যাট বন্দী হয়ে!
এদিকে আমার প্রাণ ওষ্ঠাগত, তাই এই বইটি ৬০০ টাকা দিয়ে কলকাতা বইমেলা থেকে সেই বছর কিনে নিয়েছিলাম, সঙ্গে আরো কিছু বই কিনেছিলাম।
এরপর ঔপন্যাসিক নীহাররঞ্জন গুপ্তের কিরীটি সমগ্র পেয়েছিলাম উপহার হিসেবে, সঙ্গে Jim Corbett ইত্যাদি এখনও আমার সঙ্গী হয়ে রয়েছে।
কেনার পড়ে যথারীতি পুনরায় আরেকবার পড়েছিলাম, আর এখন পুনরায় পড়া শুরু করেছি।
কিছু লেখক এর লেখনী যতবার পড়া হোক না কেনো একঘেয়েমি বোধ হয় না, এই বইটি আমার সেই তালিকাভুক্ত।
এই বইটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে যেমন কাহিনী অন্তর্ভুক্ত, ঠিক তেমনি এই বইটি থেকে যদি কিছু শব্দের অর্থ কোনো বাঙালিকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আমি হলফ করে বলতে পারি অনেকেই বলতে পারবেন না, গুগল ঘেঁটে যদি শব্দার্থ উদ্ধার করতে পারেন।
![]() |
---|
গোটা বইটির মধ্যে কালের মন্দিরা আর তুঙ্গ ভদ্রার তীরে উপন্যাস দুটি এক্ কথায় অসাধারণ!
লেখকের বক্তব্য অনুযায়ী গোয়েন্দা কাহিনী লেখার চাইতে এই ঐতিহাসিক কাহিনী সমগ্র লিখে তিনি বেশি তৃপ্তি পেয়েছেন।
কারণ হিসেবে তিনি লিখেছেন, ইতিহাস থেকে চরিত্র গুলো তিনি নিলেও গল্প গুলো তারই সৃষ্টি এবং এই সৃষ্টির পিছনে ছিল তার ইতিহাসের প্রতি নিগূঢ় ভালবাসা এবং আগ্রহ।
বইটিতে তিনি বৌদ্ধযুগ, গৌড়বঙ্গ, চৈতন্যযুগ, প্রাক-মুঘল তথা মুঘল যুগ, পর্তুগিজ-ইংরেজ অধিকৃত বাংলা হোক না কেনো!
তিনি সমসাময়িক সময় মানুষের জীবনশৈলী অর্থাৎ তখনকার আচার ব্যবহার, রীতি নীতি,বাড়িঘর, অস্ত্র থেকে আহার সমস্ত বিষয়ে লেখক অধ্যায়ন করেই সেই সময়ের মানুষের জীবনযাত্রা লেখায় তুলে ধরেছেন।
কতখানি ইতিহাসের ভিতরে পৌঁছতে পারলে এই ধরনের বিষয় গুলো সম্পর্কে তথ্য উদঘাটন সম্ভব, সেটা আন্দাজ করলেই বোঝা যায়, ইতিহাসের প্রতি তাঁর নিগূঢ় ভালবাসা কতখানি ছিল।
আপনাদের মধ্যে কতজন বইটি পড়েছেন? এই লেখক সম্পর্কে কতজন ওয়াকিবহল?
মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন যারা লেখাটি পড়বেন।
ভবিষ্যতে হয়তো এখানে কিছু গল্প পড়ে সেই গল্পের সারমর্ম লেখার মাধ্যমে তুলে ধরবো, যদি সত্যি ভালো কোনো বাঙালি পাঠক কিংবা পাঠিকা থাকেন তাদের জন্য।
বই হলো এমন একটি বন্ধু যে শুধু দেয়, বিনিময়ে কিছু প্রত্যাশা করে না, আর না বেঈমানি করে!
তাই বই এর সাথে বরাবর আমার আত্মিক সম্পর্ক।


শার্লক হোমস ,সত্যজিত রায় ,শীর্ষেন্দু ,সুচিত্রা ভট্টাচার্য, নীহাররঞ্জন গুপ্তের কিরীটি সহ আপনি যেসব লেখকের নাম উল্লেখ করেছেন তাদের সবার বই -ই কমবেশি পড়া হয়েছে। তবে দুঃখজনকভাবে এবং শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় কোন লেখাই আমার এখনো পড়া হয় নাই।
প্রাক-মুঘল তথা মুঘল যুগ, পর্তুগিজ-ইংরেজ অধিকৃত বাংলা বিশেষ করে বৌদ্ধযুগ, গৌড়বঙ্গ, চৈতন্যযুগ,এই সময়কাল সম্পর্কে আমার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। তাই এই বই যদি কখনো সামনে পরে তাহলে কিনতে সময় নিবো না। ধন্যবাদ আপনাকে এতো চমৎকার একটি বই সম্পর্কে তুলে ধরার জন্য।
ভালো থাকবেন সবসময়।